বঙ্গোপসাগরে ঘনীভূত গভীর নিম্নচাপ সাইক্লোনের আকার নিয়ে আছড়ে পড়তে চলেছে বাংলার বুকে। এমন সতর্কবার্তাই দিচ্ছে দিল্লির মৌসম বিভাগ। পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগরে থাকা নিম্নচাপ মঙ্গলবার পরিণত হবে গভীর নিম্নচাপে। আরও শক্তি বাড়িয়ে ২৩ তারিখ অর্থাৎ বুধবারের মধ্যে রূপ নেবে ঘূর্ণিঝড়ের। এর ফলে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হবে কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের প্রায় সব জেলায়।
মৌসম ভবনের সতর্কবার্তা
ওড়িশা পুরী এবং পশ্চিমবঙ্গের সাগরদ্বীপের মধ্যে প্রবল ঘূর্ণিঝড় হিসেবে ল্যান্ডফল করতে চলেছে 'দানা'। সোমবার ভারতীয় মৌসম ভবনের তরফে জানানো হয়েছে, আগামী বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) রাত এবং শুক্রবার (২৫ অক্টোবর) ভোররাতের মধ্যে উত্তর ওড়িশা এবং পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে দিয়ে ‘দানা’ উপকূল পার করবে। আর ল্যান্ডফলের সময় ঘণ্টায় ১০০-১১০ কিলোমিটার বেগে তাণ্ডব চলবে। দমকা হাওয়ার বেগ সর্বোচ্চ ১২০ কিমিতে পৌঁছাতে পারে।
ভারতীয় মৌসম ভবনের সাম্প্রতিক বুলেটিন
পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও সংলগ্ন উত্তর আন্দামান সাগরের উপরে যে নিম্নচাপ অবস্থান করছিল, তা পশ্চিম ও উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হবে। তারপর আরও পশ্চিম ও উত্তর-পশ্চিম দিকে এগিয়ে যাবে। মঙ্গলবার সকালের মধ্যে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হবে। তারপর বুধবারের মধ্যে পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগরের উপরে ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’ তৈরি হবে। মৌসম ভবনের তরফে জানানো হয়েছে, উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে বৃহস্পতিবার সকালের মধ্যে ওড়িশা এবং পশ্চিমবঙ্গ উপকূল বরাবর উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে পৌঁছাবে ‘দানা’। তারপর উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে বৃহস্পতিবার রাত এবং শুক্রবার ভোররাতের মধ্যে প্রবল ঘূর্ণিঝড় হয়ে পুরী এবং সাগরদ্বীপের মধ্যে দিয়ে উত্তর ওড়িশা এবং পশ্চিমবঙ্গ উপকূল পার করবে।
বুধবার থেকে ভারী বৃষ্টি
এর প্রভাবে বুধবার থেকে শুরু করে কয়েকটা দিন দক্ষিণবঙ্গের গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে বলে পূর্বাভাস আবহাওয়া দফতরের। ওই আশঙ্কায় দিঘা-সহ সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকাগুলিতে বিশেষ সতর্কতার নির্দেশ দিল পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন। ইতিমধ্যে সমস্ত ব্লক আধিকারিককে জেলাশাসকের দফতর থেকে র্নির্দেশিকা পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। একই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার নামখানা, সাগর, পাথরপ্রতিমা, বকখালির মতো এলাকাগুলির জন্য। পাশাপাশি কৃষকদেরও সতর্কতামূলক বার্তা দিয়েছে রাজ্য সরকার। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভবে বুধবার ও বৃহস্পতিবার ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির সতর্কতা। এর মধ্যে বুধবার ভারী বৃষ্টি হবে উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায়। বৃহস্পতিবার ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির সতর্কতা দক্ষিণ ২৪ পরগনা পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায়। ভারী বৃষ্টি হবে কলকাতা হাওড়া হুগলী উত্তর ২৪ পরগনা এবং ঝাড়গ্রামে।
মৎসজীবীদের সতর্ক করা হয়েছে
মৎসজীবীদের সতর্ক করার পাশাপাশি কৃষকদেরও সতর্ক করা হয়েছে। ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি ও ঝোড়ো হাওয়ার ফলে ক্ষতি হতে পারে ফসলে। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাসের পরই ঘূর্ণিঝড় নিয়ে সতর্কবার্তা দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কৃষি বিভাগ। কৃষকদের উদ্দেশে জানানো হয়েছে, ধানে ক্ষতি হতে পারে। ধান ৮০ শতাংশ পেকে গেলে দ্রুত তুলে নিতে বলা হয়েছে। প্রয়োজনে কম্বাইন হারভেস্ট মেশিনের সাহায্য নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। শুধু ধান নয়, অন্যান্য পাকা সবজি, পেঁপে-কলার মতো ফল তুলে নিতে বলেছে কৃষি বিভাগ। পানের বরজ, ডাল শস্যের জমিতে নিকাশির ব্য়বস্থা করতে বলা হয়েছে। এছাড়াও ঝোড়ো হাওয়ার ফলে যাতে পান বা সবজির মাচা নষ্ট না হয়, তার জন্য মাচাগুলোকে ভাল করে বেঁধে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে সরকার। আপাতত শুক্রবার পর্যন্ত ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। তাই এই সময়ে সার বা কীটনাশক প্রয়োগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। প্রয়োজনে নিকটবর্তী কৃষি অফিসে যোগোযাগ করতে বলেছে সংশ্লিষ্ট বিভাগ।