ইনফোসিসের ক্যাম্পাসের উদ্বোধনের অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে ক্যানিং পূর্বের বিধায়ক শওকত মোল্লার নাম করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ইনফোসিসকে সহযোগিতা করতে শওকতকে নির্দেশ দেন তিনি। ইনফোসিসের মঞ্চে শওকতের প্রসঙ্গ তোলায় রাজনৈতিক মহলে নানা প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে। কী কারণে হঠাৎ শওকততে একথা বললেন? তা নিয়ে নানা জল্পনা চলছে। মুখ্য়মন্ত্রীর এই মন্তব্য নিয়ে শওকতকে কটাক্ষ করেছেন ভাঙড়ের তৃণমূল নেতা ও প্রাক্তন বিধায়ক আরাবুল ইসলাম। তাঁর দাবি, ইনফোসিসের ক্যাম্পাস তো হয়ে গিয়েছে, তাহলে আবার কীসের সহযোগিতা করার প্রশ্ন আসছে?
বুধবার ভাঙড় সংলগ্ন হাতিশালায় তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা ইনফোসিসের নতুন ক্যাম্পাসের উদ্বোধনে করেন মমতা। মঞ্চে ভাষণ দিতে গিয়ে তিনি বলেন,'শওকতকে বলব, ইনফোসিসকে সব ধরনের সহযোগিতা করতে।' পাশাপাশি পুলিশকেও সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি, যাতে ইনফোসিসের কাজকর্মে কোনও প্রভাব না পড়ে। ইনফোসিসের মঞ্চে শওকতের প্রসঙ্গ তোলায় রাজনৈতিক মহলে নানা প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে। কী কারণে হঠাৎ শওকততে একথা বললেন? তা নিয়ে নানা জল্পনা চলছে। অনেকেই মনে করছেন, অতীতের কথা ভেবেই মুখ্যমন্ত্রী আদতে শওকতকে একপ্রকার সতর্ক করেছেন।
যদিও শওকত নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যকে নির্দেশ বলেই মনে করছেন। ক্যানিং পূর্বের বিধায়ক শওকত মোল্লা বেশ ডাকাবুকো। নিজের এলাকা তো বটেই, ভাঙড়েও তিনি দলের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে। ভাঙড় বিধানসভা কেন্দ্রে দলের পর্যবেক্ষক তিনি। ভাঙড় বিধানসভা আসন যদিও গত বিধানসভা ভোটে জিতে নিয়েছেন আইএসএফের নওশাদ সিদ্দিকি। কিন্তু ভাঙড়ে শওকতের দাপট যে রয়েছে সেটা একেবারে দিনের আলোর মতো পরিষ্কার। কারণ আইএসএফ বনাম তৃণমূল লড়াইয়ে বোমাবাজি বা গুলিচালনার ঘটনা সেখানে মাঝে মাঝে ঘটে। সঙ্গে রয়েছে শাসকদলের গোষ্ঠীলড়াই। এছাড়াও ওখানে এখন কোণঠাসা প্রাক্তন বিধায়ক আরাবুল ইসলামও। মাঝে মাঝেই এই দুই নেতার বাকবিতণ্ডা-কোন্দল প্রকাশ্যে চলে আসে। সম্প্রতি, একটি মন্তব্যের জন্য আরাবুলকে আইনি নোটিশও পাঠিয়েছেন শওকত। ভাঙড়ে কোনও সমস্যা হলে তার আঁচ যে লাগোয়া ইনফোসিস ক্যাম্পাসে চলে আসতে পারে তার সম্ভাবনা রয়েছে। রাজনৈতিক মহলের একাংশ মনে করছে, সেটা আন্দাজ করতেই হয়তো শওকতকে সতর্ক করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। যাতে তৃণমূলের অন্দরের ঝামেলা ইনফোসিস ক্যাম্পাসে না চলে আসে, যাতে তাদের কাজকর্মে কোনও রাজনৈতিক ঝামেলার আঁচ না পৌঁছয়।
যদিও মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যকে নির্দেশ হিসেবেই দেখছেন শওকত। আনন্দবাজার অনলাইনকে তিনি বলেন, ' মুখ্যমন্ত্রী যে দায়িত্ব আমাকে দেবেন, সেই দায়িত্ব পালন করার চেষ্টা করব। ভাঙড়ে তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা বিনিয়োগে করতে আসছে। তাই এলাকা শান্ত রাখতে হবে। শান্তি ফিরলেই সুষ্ঠু ভাবে বিনিয়োগ আসবে, রাজ্যও এগোবে।' নাম করে আরাবুল ইসলামকেও নিশানা করেছেন শওকত। তিনি বলেন,'এখন আরাবুল ইসলামের মতো নেতারা ভাঙড়ের রাজনীতিতে নেই বললেই চলে। তাই ভাঙড়ে তোলাবাজি, জুলুমবাজি, সিন্ডিকেটের মতো সমস্যা আর হয় না। আইনশৃঙ্খলার উন্নতি হয়েছে। এলাকায় শান্তি বিরাজ করছে।'
এই বিষয়ে আরাবুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল bangla.aajtak.in। তিনি বলেন,'মুখ্যমন্ত্রী কেন এই কথা বলেছেন সেটা তিনিই বলতে পারবেন। আর যাঁকে বলেছেন, তিনিও বলতে পারবেন। আমি এসব কথার কোনও জবাব দেব না। তা সে যে লাটের বাট হোক বা হরিদাস পাল হোক না কেন। আমি এসব নিয়ে কিছু বলব না।'