গত কয়েক দিনের মতো মঙ্গলবারেও আবহাওয়ার কোনও বদল নেই। জেলায় দফায় দফায় ঝিরঝিরে বৃষ্টি হচ্ছে। আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, বঙ্গোপসাগরে ঘনীভূত নিম্নচাপ এখন ঝাড়খণ্ডে রয়েছে। তার প্রভাবে আরও ক’দিন দুর্যোগ চলবে বাংলায়। কোথাও কোথাও ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনাও রয়েছে। বুধ এবং বৃহস্পতিবারেও বর্ষণ চলবে।
দুপুরের বিশেষ বুলেটিনে আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, গতকালের নিম্নচাপ অঞ্চলটি দক্ষিণ-পশ্চিম ঝাড়খণ্ড এবং উত্তর ছত্তিসগড়নৌর দক্ষিণ ঝাড়খণ্ড ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের উপর অবস্থিত। এবং এর সঙ্গে সম্পর্কিত ঘূর্ণাবর্ত ৭.৬ কিমি পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। অর্থাৎ, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা-সহ দক্ষিণ দিকে যাচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গের জেলাগুলিতে ৩ অক্টোবর থেকে ৫ অক্টোবর বৃষ্টির পরিস্থিতি বজায় থাকবে। ৬ অক্টোবর থেকে বৃষ্টি কমবে।
এদিকে রাজ্যে লাগাতার বৃষ্টিতে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার আশঙ্কা একাধিক জেলায়। তার উপর দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন (ডিভিসি) পর পর দু’দিন এক লক্ষ কিউসেক করে জল ছেড়েছে। বীরভূম, পশ্চিম বর্ধমান, ঝাড়গ্রামের গ্রামগুলি এই জলে প্লাবিত হতে পারে। ইতিমধ্যে বাড়তে শুরু করেছে বিভিন্ন নদীর জলস্তর।
মঙ্গলবার ডিভিসি নতুন করে আরও ১ লক্ষ ১০ হাজার কিউসেক জল ছেড়েছে। মাইথন জলাধার থেকে ছাড়া হয়েছে ৩৫ হাজার কিউসেক জল। পাঞ্চেত জলাধার থেকে ছাড়া হয়েছে ৭৫ হাজার কিউসেক জল। বরাকর এবং দামোদর উপত্যকায় ভারী বৃষ্টি হয়েছে। ঝাড়খণ্ডেও গত কয়েক দিন ধরে অতি ভারী বৃষ্টি চলছে। তাই বাঁধগুলি থেকে জল ছাড়তে হয়েছে বলে ডিভিসির তরফে জানানো হয়েছে।
এর আগে সোমবারেও এক লক্ষ কিউসেক জল ছেড়েছিল ডিভিসি। মাইথন জলাধার থেকে সোমবার ৪৫ হাজার কিউসেক এবং পাঞ্চেত জলাধার থেকে ৫৫ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হয়েছিল। বৃষ্টি আরও বৃদ্ধি পেলে আরও জল ছাড়তে হবে বলে জানিয়ে দিয়েছেন ডিভিসি-র আধিকারিকেরা।
গত দু’দিনে ঝাড়খণ্ড থেকে (পাঞ্চেত এবং মাইথন) দু’লক্ষ কিউসেকের বেশি জল ছাড়া হয়েছে। মঙ্গলবার দামোদরের সেই জল দুর্গাপুর পৌঁছলে দুর্গাপুর ব্যারেজ থেকে ডিভিসি ১লক্ষ ৩৫ হাজার কিউসেক জল ছাড়ে। এতেই পূর্ব বর্ধমান, হুগলি, হাওড়াতে বন্যা পরিস্থিতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।
গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে ইতিমধ্যে একাধিক জেলা প্লাবিত। মালদহের গাজল এবং বামনগোলা ব্লকের বেশ কিছু জায়গায় পুনর্ভবা নদীর জল ঢুকেছে। প্লাবনের আশঙ্কায় রাত জেগে কাটাতে হচ্ছে বামনগোলার কুপাদহ গ্রামের মানুষদের। বৃষ্টিতে পুরুলিয়ার বেশ কয়েকটি জায়গাতেও জনজীবন বিপর্যস্ত হয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুরের কংসাবতী নদীতে জলস্তর বৃদ্ধির ফলে ডুবেছে সাঁকো। হাওড়ার উদয়নারায়ণপুর এবং আমতায় বন্যা পরিস্থিতির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
মুণ্ডেশ্বরীতেও জলের তোড়ে বাঁশের সাঁকো ভেঙে জনজীবন বিপর্যস্ত। বীরভূমে লাভপুর ব্লকের কাঁদরকুলা, জয়চন্দ্রপুর-সহ ১৫টি গ্রামে বন্যার আশঙ্কা করা হচ্ছে। নদীর জল বাড়তে শুরু করেছে। এর পরে জলস্তর বৃদ্ধি পেলে বাইরের জগতের সঙ্গে সংযোগ প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন গ্রামবাসীরা। কষ্ট করে ঘুরপথে যাতায়াত করতে হবে।