পৌষ পার্বন দোরগাড়ায়। আর পৌষ সংক্রান্তি মানেই বাংলার ঘরে ঘরে পিঠে পুলি পায়েস। সেই পিঠে তৈরির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান চালে গুঁড়ো। বর্তমান সময়ে মেশিনের মাধ্যমে খুব সহজেই তৈরি হয়ে যায় চালের গুঁড়ো। কিন্তু একটা সময় এই চালের গুঁড়ো তৈরির একমাত্রা ভরসা ছিল ঢেঁকি (Dhenki)। আর শুধু চালের গুঁড়োই নয়, যেকোনও খাদ্যশষ্য ভাঙতে বা তার খোসা ছাড়াতে ঢেঁকির ওপরেই নির্ভর করতেন বাড়ির মহিলারা। আজও গ্রাম বাংলার হাতে গোনা কিছু কিছু বাড়িতে দেখা যায় ঢেঁকির ব্যবহার।
কীভাবে তৈরি হয় ঢেঁকি?
প্রায় ৬ ফুট গাছের গুড়ি দিয়ে তৈরি হয় ঢেঁকি, যার অগ্রভাগে দেড় ফুট লম্বা মনাইয়ের মাথায় পরানো থাকে লোহার রিং। ওই রিংকে আঞ্চলিক ভাষায় বলা হয় 'চূরণ' অর্থাৎ আঘাত করার অংশ। উল্টোদিকে চূরণ যেখানে বারবার ঢাক্কা দেয় সেই অংশের নাম 'গর'। সেটিও কাঠের তৈরি, পোঁতা থাকে মাটিতে।
কীভাবে কাজ করে ঢেঁকি?
ঢেঁকির পিছনের দিকে লেজের মত অংশে প্রয়োজন অনুযায়ী চাপ দেন এক বা দুজন মহিলা। তার ফলে নির্দিষ্ট ছন্দে ওঠানামা করে মনাই। আর ওই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই গরের মধ্যে থাকা খাদ্যবস্তু নেড়ে দেওয়া হয়। এরফলে বিভিন্ন খাদ্য শষ্য ভাঙা যায় বা তার খোসা ছাড়ানো যায়। গ্রাম বাংলায় ঢেঁকির ছন্দের সঙ্গে মিলিয়ে কিছু গানও প্রচলিত রয়েছ। এমনকি বিয়ের সময় বা নবান্নের সময় ঢেঁকির পুজোও হয় কোনও কোনও বাড়িতে। আধুনিক মিক্সার গ্রাইন্ডারের যুগে এখনও যে সমস্ত বাড়িতে ঢেঁকি রয়েছে, পৌষ পার্বেনর আগে সেই সব বাড়ি থেকে ইতিমধ্যে আসতে শুরু করেছে ঢেঁকি চালানোর শব্দ।