রবিবার কিছুক্ষণের ঝড়ে লন্ডভন্ড হয়ে যায় উত্তরবঙ্গের জলপাইগুড়ি। এই ঘূর্ণিঝড়ে এখনও পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ৪ জনের। আহত বহু। এলাকা পরিদর্শন করতে রাতেই ঘটনাস্থলে পৌঁছন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন জলপাইগুড়ি যাচ্ছেন রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস, তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। এদিকে উত্তরবঙ্গ জুড়ে ঝড়বৃষ্টি আরও কিছুদিন চলার সম্ভাবনা রয়েছে। আলিপুর হাওয়া অফিসের পূর্বাভাস ঝড় এবং বৃষ্টি উংত্তরের পাঁচ জেলায় চলবে আরও অন্তত দু’দিন। সোমবারও জলপাইগুড়ি-সহ উত্তরের জেলাগুলিতে বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। সেই সঙ্গে বইতে পারে ঝোড়ো হাওয়াও।
সোমবার সকালেও আবহাওয়া প্রতিকূল জলপাইগুড়িতে। উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকায় ঝোড়ো হাওয়া বইছে। আকাশের মুখও ভার। মাঝেমাঝে মেঘ ডাকছে। হাওয়া অফিস বলছে, সোমবার উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিতে বৃষ্টিপাত সামান্য কমলেও মঙ্গলবার তা বাড়তে পারে। উত্তরবঙ্গের পার্বত্য এলাকায় শিলাবৃষ্টি ও হালকা তুষারপাত হতে পারে। উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিতে মূলত বজ্রবিদ্যুৎ সহ হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। সঙ্গে বইতে পারে ঝোড়ো হাওয়া। সোমবার আবহাওয়ার কিছুটা পরিবর্তন হবে। তবে, মঙ্গলবার ফের একবার দুর্যোগের সম্ভাবনা রয়েছে। হতে পারে ঝড় এবং বৃষ্টি। আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, সোমবার দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, কালিম্পং, আলিপুরদুয়ার এবং কোচবিহারে বজ্রবিদ্যুৎ-সহ হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে কোথাও কোথাও ঘণ্টায় ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হাওয়াও বইতে পারে।
জলপাইগুড়ি জেলার ঝড় বিধ্বস্ত এলাকা পরিদর্শনে সোমবার রাতেই সেখানে পৌঁছন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাত জেগে জলপাইগুড়ির পরিস্থিতি ঘুরে দেখলেন তিনি। জলপাইগুড়ি, ময়নাগুড়ি গিয়ে মৃতদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন তিনি। হাসপাতালে গিয়ে আহতদের সঙ্গেও কথা বলেন। জলপাইগুড়ি, ময়নাগুড়ির যে যে এলাকা রবিবারের ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সে সব জায়গায় রাতেই গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিজে খতিয়ে দেখেছেন। পরিস্থিতির তদারকি করেছেন। পরিদর্শন শেষে তিনি রাত আড়াইটে নাগাদ হোটেলে ফেরেন। আপাতত মালবাজারের চালসার একটি হোটেলে আছেন মমতা। সোমবারই তাঁর কলকাতা ফেরার কথা।
ঝড়ে দুর্গত এলাকা পরিদর্শনে সোমবার জলপাইগুড়ি আসছেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসও। এদিন সকালেই রওনা হন রাজ্যপাল বোস। ভোর ৬টা নাগাদ তিনি কলকাতা বিমানবন্দরে পৌঁছান। সকাল সাড়ে ৮টার আগেই বাগডোগরায় পৌঁছে যান। বিমানবন্দর থেকে জলপাইগুড়ির ঘটনায় শোকপ্রকাশ করেছেন রাজ্যপাল। যাঁরা এই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে প্রাণ হারিয়েছেন, তাঁদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন তিনি। রাজ্যপাল বলেন, ‘‘জলপাইগুড়িতে ঝড়ে প্রাণহানি ঘটেছে। অনেকে আহত। আমি উদ্বিগ্ন। সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। সকলে একসঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলার কাজ করছেন। আমি ওখানে গিয়ে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখব, মানুষের সঙ্গে কথা বলব। যা যা করা সম্ভব, করব।’’
এদিন, রাজ্যপাল ছাড়াও জলপাইগুড়ির পরিস্থিতি দেখতে যাচ্ছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ও সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও। শুভেন্দু অধিকরী ২ যাবেন জলপাইগুড়ি মেডিকেল কলেজে। সেখান থেকে বার্নিশ যাওয়ার কথা রয়েছে তাঁর। সোমবার বিকেলে সেখানে পৌঁছে যাবেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিকে রবিবারের ঘূর্ণিঝড়ের পর সোমবার সকাল থেকে থমথমে এলাকা। গতকাল পশ্চিমি ঝঞ্জার প্রভাবে জলপাইগুড়ি , কোচবিহার, আলিপুরদুয়ারে ব্য়াপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। অনেকেরই চোখে মুখে এখনও আতঙ্ক।
এদিকে, বাংলার দুর্যোগ পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও। রাতেই তিনি এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করে উদ্বেগ ও দুঃখ প্রকাশ করেন। ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে থাকা ও সাহায্য করার নির্দেশ দেন বিজেপির কার্যকর্তাদের। প্রধানমন্ত্রীর পরে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডাও দলীয় কর্মীদের জলপাইগুড়ি এবং ময়নাগুড়ির প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্ত অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর নির্দেশ দেন। গেরুয়া শিবিরের আলিপুরদুয়ারের বিধায়ক মনোজ টিগ্গা ও জলপাইগুড়ির সাংসদ ডঃ জয়ন্ত রায়ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়াতে ময়দানে নেমেছেন।