বিধানসভা নির্বাচন মিটে গিয়েছে বেশকিছু দিন হল। সামনে এবার উপনির্বাচন ও পুরনির্বাচন। তার জন্য ইতিমধ্যেই প্রস্তুতিও শুরু করে দিয়েছে শাসক বিরোধী সবপক্ষ। একদিকে তৃণমূল যেমন জোর দিচ্ছে দ্রুত উপনির্বাচন সেরে ফেলার ওপরে। অন্যদিকে অবিলম্বে পুরনির্বাচন করার দাবি জানাচ্ছে রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপি। এই নিয়ে তরজাও শুরু হয়েছে দু'পক্ষের মধ্যে। বিভিন্ন ইস্যুতে একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনছে তৃণমূল-বিজেপি। রাজনৈতিকমহল মনে করছে রাজ্যের বর্তমান পরিস্থিতিতে শাসক-বিরোধী উভয় পক্ষের হাতেই উঠে এসেছে বেশকিছু জ্বলন্ত ইস্যু, যা অনায়াসেই হয়ে উঠতে পারে নির্বাচনী প্রচারের অন্যতম হাতিয়ার।
বাংলা ভাগ বিতর্ক
কিছুদিন আগেই উত্তরবঙ্গকে পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসেবে হড়ে তোলার দাবি জানিয়েছিলেন বিজেপি সাংসদ জন বার্লা। আর জন বার্লার সেই দাবির পরেই ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়ায় রাজ্য রাজনীতিতে। বিজেপি বাংলাকে ভাগের চক্রান্ত করছে বলে অভিযোগ তোলে তৃণমূল। অন্যদিকে আবার জনের দাবিকে কেন্দ্র করেও কার্যত দুধরনের মতামত ঘুরপাক খেতে থাকে বিজেপির অন্দরে। গেরুয়া শিবিরের একাধিক নেতানেত্রী প্রকাশ্যেই জন বার্লার দাবিকে সমর্থন দেন। অন্যদিকে আবার দলের রাজ্য নেতৃত্ব সরাসরি জানিয়ে দেন, এই ধরনের কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। যদিও এই গোটা বিষয়টির মধ্যে বিজেপির চক্রান্তই দেখছে তৃণমূল।
পেট্রোল-ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি
দেশজুড়ে বেড়েই চলেছে পেট্রোল ডিজেলের দাম। রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় ১০০ টাকা ছুঁয়েছে লিটার প্রতি পেট্রোলের মূল্য। পেট্রোল-ডিজেলের লাগাতর মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে চলছে বিক্ষোভ-প্রতিবাদও। এই ইস্যুতে ইতিমধ্যেই কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে তৃণমূল। এমনকী পেট্রোল-ডিজেল থেকে কম রাজস্ব আদায়ের দাবি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠিও দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
নয়া কৃষক বন্ধু ও স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড
শুধু বিজেপির সমালোচনাই নয়, রাজ্যে তৃতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর তৃণমূল পরিচালিত সরকার এখনও পর্যন্ত যে সমস্ত কাজগুলি করেছে সেগুলিও আসন্ন নির্বাচনের প্রচার পর্বে শাসকদল তুলে ধরবে বলে মনে করা হচ্ছে। বিধানসভা নির্বাচনের সময় তৃণমূলের তরফে যে সমস্ত প্রতিশ্রুতিগুলি দেওয়া হয়েছিল, তারমধ্যে কৃষকবন্ধু প্রকল্পের ভাতার অঙ্ক বাড়ান এবং স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড ইতিমধ্যেই চালু হয়েছে। যা আসন্ন নির্বাচনগুলিতে তৃণমূলকে বাড়তি মাইলেজ দেবে বলেই মত রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের।
নির্বাচন পরবর্তী হিংসা
এদিকে তৃণমূলের মতো পালটা প্রচারের ইস্যু নিয়ে তৈরি বিজেপিও। বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকেই রাজ্যে বিজেপি কর্মীদের ওপর হামলা ও তাঁদের পরিবারের মহিলাদের ওপরে অত্যাচারের অভিযোগ তুলে আসছে গেরুয়া ব্রিগেড। যার প্রতিবাদে ইতিমধ্যেই আন্দোলন শুরু করেছে বিজেপি। রাজ্যপালের দ্বারস্থও হয়েছে তারা। সেক্ষেত্রে আসন্ন নির্বাচনে বিজেপি এই ইস্যুকে প্রচারের অন্যতম অস্ত্র করতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
ভুয়ো ভ্যাকসিন
নির্বাচন পরবর্তী হিংসার পাশাপাশি ইতিমধ্যেই ভুয়ো ভ্যাকসিনকাণ্ডেও রাজ্য সরকার, কলকাতা পুরসভা তথা তৃণমূলের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে গেরুয়া শিবির। সোমবার কলকাতা পুরসভা অভিযানেরও ডাক দেয় রাজ্য বিজেপি। এমনকী সরকারের আচরণে পরিবর্তন না এলে আগামিদেন এই আন্দোলকে আরও নিচুস্তর পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। সেক্ষেত্রে এখন দেখার, এহেন ইস্যুগুলিতে ভর করে আসন্ন নির্বাচনে কীভাবে প্রচারে ঝড় তোলে শাসক ও বিরোধী পক্ষ।