"একপায়ে বাংলা আর দু'পায়ে দিল্লি জয় করব", বিধানসভা নির্বাচনের প্রচার পর্বে হামেশাই এই কথা শোনা যেত তৃণমূল (TMC) নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখে। আর বিধানসভা নির্বাচনে জয়ের পর হয়ত দিল্লি দখলকেই নিজের আগামিদিনের টার্গেট হিসেবে নিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী। অন্তত এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশ। এই অনুমানের পক্ষে বেশকিছু যুক্তিও সাজিয়েছেন তাঁরা।
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, কিছুদিন আগেই তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন প্রাক্তন বিজেপি (BJP) নেতা তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী যশোবন্ত সিনহা। আর এই যশোবন্ত সিনহাকে দলে নেওয়ার মধ্যে দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জাতীয় রাজনীতিতে আরও বেশি করে তৃণমূলের পায়ের তলার মাটি শক্ত করতে চেয়েছেন বলেই মত রাজনৈতিকমহলের। এদিকে আবার চলে এসেছে ২১শে জুলাই। শোনা যাচ্ছে সেইদিন মমতার সঙ্গে হাত মেলাতে পারেন শত্রুঘ্ন সিনহা এবং তামিলনাড়ুর ভাইকোর মতো নেতারাও। আর বাস্তবে তেমনটা হলে মমতার পরবর্তী লক্ষ্য যে দিল্লি তা আরও খানিকটা স্পষ্ট হয়ে যাবে বলেই মনে করছে ওয়াকিবহালমহল।
এদিকে দেশের পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে ইতিমধ্যেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) পক্ষে সওয়াল করতে শুরু করেছেন তৃণমূল নেতা কর্মী সমর্থকেরা। সোশ্যাল সাইটে হ্যাশট্যাগ 'বাঙালি প্রধানমন্ত্রী' প্রচারও শুরু হয়েছে। তৃণমূল নেতা কর্মীদের দাবি, বিজেপি তথা মোদী বিরোধী হিসেবে এই মুহূর্তে দেশের মধ্যে সবচেয়ে প্রধান মুখ হলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই প্রসঙ্গে একটা কথা উল্লেখ্য, ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনের আগে সারা ভারতের প্রায় সমস্ত বিজেপি বিরোধী দলের নেতৃত্বকে ব্রিগেডের মঞ্চে নিয়ে এসেছিলেন মমতা। উদ্দেশ্য ছিল বিজেপি বিরোধী সমস্ত শক্তি মিলে একসঙ্গে লড়াই করা। কিন্তু তাতে বিশেষ কাজ হয়নি। নির্বাচনের ফলাফলে দেখা যায় ফের ক্ষমতায় এসেছে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ। এবারে বিধানসভা নির্বাচনের আগেও মমতাকে সমর্থন দেন অখিলেশ যাদব, তেজস্বী যাদবের মতো ভিনরাজ্যের নেতারা। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের ধারনা, হয়ত সেখান থেকেই মমতাকে দেশের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এখন থেকেই তুলে ধরতে চাইছেন তৃণমূল কর্মী সমর্থকেরা।
এদিকে আর কদিন পরেই ২১ জুলাই (21 July)। তৃণমূলের শহীদ স্মরণ। অতীতেও দেখা গিয়েছে এই মঞ্চ থেকেই দলের আগামদিনের পথ চলার রূপরেখা ঠিক করেন তৃণমূলনেত্রী। সেক্ষেত্রে আসল লক্ষ্য যদি ২০২৪ হয়, তাহলে এবারে দলকে ঠিক কী বার্তা দেবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়? রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন আসন্ন উপনির্বাচন, পুর নির্বাচন ও সর্বোপরি লোকসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে হয়ত এখন থেকেই দলকে ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে নামার নির্দেশ দিতে পারেন নেত্রী। দিতে পারেন নতুন পুরনো সবাইকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করার বার্তা। পাশাপাশি আরও বেশি করে জনসংযোগ গড়ে তোলা এবং সরকারি পরিষেবার সুবিধা যাতে প্রতিটি মানুষ পান, সেই দিকে নজর দেওয়ার নির্দেশ। এখন দেখার করোনা পরিস্থিতিতে ২১-এর ভার্চুয়াল সভায় বাস্তবেই দলকে ঠিক কী নির্দেশ দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।