বঙ্গ রাজনীতিতে বহু উত্থান পতনের স্বাক্ষী ২০২১। এই বছরই তৃতীয়বারের জন্য বাংলা দখল করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। আর শুধু তাই নয়, এই বছর বহু হেভিওয়েট রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের দলবদল এবং 'ঘর ওয়াপসি'ও ঘটেছে। আর সবচেয়ে বড় কথা এই দলবদল এবং 'ঘর ওয়াপসি'র ক্ষেত্রে বিধানসভা ভোটের আগের ও পরের চিত্রটা ছিল একবারে অন্যরকম। বিধানসভা ভোটের আগে যেমন তৃণমূল (TMC) থেকে বিজেপিতে (BJP) যাওয়ার বিড়িক পড়ে গিয়েছিল, ভোটের পরে ঠিক দেখা যায় উল্টোটা। দেখে নেওয়া যাক বঙ্গ রাজনীতির প্রথম সারির সেইসব ব্যক্তিত্বকে যাঁরা এই বছর দল বদলালেন বা পুনরায় আগের শিবিরে ফিরে এলেন।
মুকুল রায় - রাজনীতির অন্দরে কানাঘুসো ছিলোই। শেষ পর্যন্ত হলও তাই। প্রায় ৪ বছর পর বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে ফিরলেন মুকুল রায় (Mukul Roy)। ২০১৭ সালে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে গিয়েছিলেন মুকুল। তাঁকে দলের সর্বভারতীয় সহসভাপতিও করে বিজেপি। যদিও এবছর রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের সময় থেকেই বিজেপির সঙ্গে মুকুলের দূরত্ব বাড়তে থাকে বলে শোনা যাচ্ছিল। এমনকী তিনি তৃণমূলে ফিরতে পারেন, এমনটাও শোনা যাচ্ছিল বিভিন্নমহল থেকে। অবশেষে হলও তাই। বিধানসভা নির্বাচনের পরেই পদ্ম ছেড়ে ঘাসফুলে প্রত্যাবর্তন হল মুকুলের।
শুভ্রাংশু রায় - মুকুল রায়ের পথে হেঁটে একসময় তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন তাঁর পুত্র শুভ্রাংশু রায়ও। তবে ২০২১-এর বিধানসভা ভোটে বীজপুর আসনে পরাজিত হন শুভ্রাংশু। যার জেরে শুভ্রাংশুর রাজনৈতিক কেরিয়ার প্রশ্নের মুখে পড়ে যায় বলে মনে করেন কেউ কেউ। এরপরেই দেখা গেল বাবার সঙ্গে তৃণমূলে ফিরলেন শুভ্রাংশু রায়ও।
রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় - এই বছর বঙ্গ রাজনীতিতে অন্যতম আলেচিত ব্যক্তি রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় (Rajib Banerjee)। গতবছরের শেষ থেকেই তৃণমূলের সঙ্গে তাঁর দূরত্বের খবর শোনা যাচ্ছিল। আর সেই জল্পনাকে বাস্তবায়িত করে এবছরের শুরুতে একেবারে অমিত শাহর বাড়িতে গিয়ে বিজেপিতে যোগ দেন তিনি। যদিও ভোটে অবশ্য জিততে পারেননি রাজীব। তারপর থেকেই আবার উল্টো সুর শোনা যাচ্ছিল তাঁর গলায়। অবশেষে আবারও গত অক্টোবরে ঘাসফুল শিবিরেই ফিরলেন তিনি।
সব্যসাচী দত্ত - এবছর যাঁরা তৃণমূলে ফিরলেন তাঁদের মধ্যে আরও এক প্রথম সারির নেতা সব্যসাচী দত্ত। গত ২০১৯ সালে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। যদিও বিধানসভা নির্বাচনে তাঁর পরাজয়ের পর থেকেই হাওয়া ঘুরতে থাকে। অবশেষে দুর্গাপুজোর আগে তৃণমূলে প্রত্যাবর্তন করলেন তিনি।
রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য - টিকিট না পেয়ে ভোটের আগে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন সিঙ্গুর আন্দোলনের অন্যতম নেতা তথা 'মাস্টারমশাই' রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য। যদিও দলবদলেও ভোটে জেতা হয়নি তাঁর। সিঙ্গুর কেন্দ্রে বেচারাম মান্নার কাছে পরাজিত হন রবীন্দ্রনাথবাবু।
গঙ্গাপ্রসাদ শর্মা - ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে আলিপুরদুয়ার জেলাতেই সবচেয়ে ভাল ফল করেন বিজেপি। জেলার ৫টি আসনেই জয় পায় পদ্ম শিবির। কিন্তু তারপরেই ঘটে যায় অঘটন। বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেন গঙ্গাপ্রসাদ শর্মা। যে সময় গঙ্গাপ্রসাদ তৃণমূলে যোগ দেন সেই সময় জেলা সভাপতি ছিলেন তিনি।
বাবুল সুপ্রিয় - এই বছর বাংলার রাজনীতিতে অন্যতম চমক বাবুল সুপ্রিয়র তৃণমূলের যোগদান। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীত্ব থেকে সরানোর পরেই বিজেপির সঙ্গে দূরত্ব বাড়তে শুরু করে বাবুলের। একসময় দল ছাড়েন বাবুল। তবে সেই সময় অন্যকোনও দলে যোগদানের জল্পনাও উড়িয়ে দিয়েছিলেন তিনি। যদিও তার কিছুদিন পরেই ঘাসফুলের পতাকা হাতে নিতে দেখা যায় বাবুলকে।
এছাড়াও রথীন চক্রবর্তী, বৈশালী ডালমিয়া, প্রবীর ঘোষালের মতো অনেক নেতানেত্রীই এবছর তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগদান করেন। যদিও প্রবীর ঘোষালকে অবশ্য পরে জাগো বাংলার হয়ে কলম ধরতে দেখা যায়। অন্যদিকে আবার বিজেপির টিকিটে ভোটে জিতেও একাধিক বিধায়ক পরে ফিরে আসেন তৃণমূলে।