জামাই ষষ্ঠীর উৎসবে সিউড়ি বাসষ্ট্যান্ডে নেই পরিচিত পুরোন ভিড়। স্নেহের জামাইকে খাবারের সঙ্গে মোরব্বা (Morobba) দিতে ভয় পাচ্ছেন শাশুড়িরা। প্রতীকী হিসেবে যেটুকু মিষ্টি দেওয়া হচ্ছে তাও সিল প্যাক। যার জেরে মোরব্বার শহর সিউড়িতে (Suri Birbhum) চরম মন্দা ব্যবসায়ীদের। আগামিদিনে আর মোরব্বা পাওয়া যাবে কি না তা নিয়েও তৈরি হয়েছে সংশয়।
বীরভূমের মোরব্বা জেলার ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা একটি খাবার। রাজনগর যখন বীরভূম সহ অবিভক্ত বাংলার রাজধানী ছিল সেই সময় খাদ্যরসিক রাজার সামনে বহু চেষ্টার পর রাঁধুনী হাজির করেছিলেন মোরব্বা। তারপর থেকে যা যুগ যুগ ধরে খাদ্যরকিসদের মন জয় করে এসেছে। শোনা যায় রাজা মোরব্বার স্বাদে অভিভূত হয়ে রাঁধুনীকে প্রচুর উপহারও দিয়েছিলেন। সেসময় নাকি রাজনগরের বনাঞ্চল পাহাড়ি এলাকায় বেল আমলকি এবং শতমূল নামক আয়ুর্বেদিক ওষুধ তৈরির শিকড় সঙ্গে চালকুমড়ো দিয়ে এই মিষ্টি বানানো হত। এরপর সময় বদলেছে, মোরব্বা তৈরি হয়েছে করলা, পটল, আম, আপেল সহ হরেক সামগ্রি দিয়ে। বহু মানুষের হাত ধরে ভিন জেলা এমনকী ভিনরাজ্যেও পৌঁছে গিয়েছে এই খাবার।
রাজ্য রাজনীতির এমন অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তি ছিলেন যাঁদের রাতের মেনুতে মোরব্বা ছিল মাস্ট। তবে সেই মোরব্বা স্থানীয়ভাবে বিশেষ ছড়িয়ে পড়তে পারেনি। সিউড়ির বুকে মাত্র হাতে গোনা কয়েকটি দোকান মোরব্বা তৈরি ও বিক্রির সঙ্গে যুক্ত। চাহিদা অনুযায়ী সেখান থেকে বক্রেশ্বর বা তারাপীঠেও যার মোরব্বা। কিন্তু ঐতিহ্যবাহী এই খাবারটিকে ক্রেতাদের সামনে আরও বেশি করে তুলে ধরতে তেমন কোনও উদ্যোগ নেওয়া হয়নি বলেই জানাচ্ছেন মোরব্বা বিক্রেতারা। কয়েকবছর আগে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষনা করেছিলেন সিউড়িতে মোরব্বা হাব হবে, কিন্তু তারপর আর কাজ কিছু এগোয়নি।
এই প্রসঙ্গে সিউড়ি বাসষ্ট্যান্ড এলাকার এক মোরব্বা বিক্রেতা বলেন, "সব ধরনের মোরব্বাই করি, তবে আগের মতো টিন ভর্তি নয়। গত ২ বছরে খোলা খাবার খেতে ভয় পাচ্ছেন মানুষ। এরপর লকডাউন। এই খাবার তো মজুত করে রাখা যায় না, ফলে নষ্ট হচ্ছে। আর এসব খাওয়ারে চাহিদাটাও কমেছে। জানি না মোরব্বার ভবিষ্যত কী!"