পশ্চিমবঙ্গে (West Bengal) বামফ্রন্ট ক্ষমতাচ্যূত হয়েছে সেই ২০১১ সালে। আর ২০১৮-তে বামেরা ক্ষমতা হারিয়েছে ত্রিপুরায় (Tripura)। তবে বামেরা ক্ষমতা থকে চলে গেলেও সমালোচনা বন্ধ হয়নি। পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় আসার পরে বিভিন্ন সময় বামেদের সমালোচনা করেছে তৃণমূল। এমনকী সিপিআইএম, কংগ্রেস ও বিজেপিকে একই বন্ধনীতে রেখেও আক্রমণ শানাতে শোনা গিয়েছে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে (Mamata Banerjee)। অপরদিকে আবার ত্রিপুরায় পূর্বতন বাম সরকারের সমালোচনা সরব হয়েছেন বিজেপির রাজ্য থেকে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। কিন্তু উলট পূরাণ শুরু হয় পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনের আগে থেকে।
বামেদের প্রশংসায় শুভেন্দু
বিজেপিতে (BJP) যোগ দেওয়ার পর বিভিন্ন সময় তৃণমূলের সমালোচনা করতে গিয়ে বাংলার পূর্বতন বাম সরকারের নানান কাজের প্রশংসা করতে শোনা যায় শুভেন্দু অধিকারীকে। বিশেষত এসএসসি-তে নিয়োগের প্রসঙ্গে খোলাখুলিই বাম সরকারের প্রশংসা শোনা যায় শুভেন্দুর মুখে। এমনকী প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে সৎ মানুষ বলেও আখ্যা দেন শুভেন্দু। সেই সময় অবশ্য শুভেন্দু অধিকারীর (Suvendu Adhikari) এহেন বক্তব্যের প্রেক্ষিতে বাম-বিজেপিকে একসঙ্গে তোপ দাগে তৃণমূল। কিন্তু তারপর মাত্র কয়েক মাসের ব্যবধানেই এবার বামেদের প্রশংসায় ঘাসফুল শিবির। ঘটনাস্থল পশ্চিমবঙ্গের প্রতিবেশী রাজ্য ত্রিপুরা।
অভিষেকের মুখে বামেদের প্রশংসা
আগামী ২০২৩ সালে ত্রিপুরায় হতে চলেছে বিধানসভা নির্বাচন। পশ্চিমবঙ্গে তৃতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর এবার তৃণমূলের লক্ষ্য ত্রিপুরা। সেই মতো গুটি সাজানও শুরু করে দিয়েছে ঘাসফুল শিবির। আর সেই রণকৌশলেরই অংশ হিসেবে দিন কয়েক আগে ত্রিপুরায় যান তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee)। সেখানে বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয় অভিষেককে। এমনকী তাঁর কনভয়ে হামলা চালান হয় বলেও অভিযোগ। তৃণমূলের দাবি গোটা ঘটনার নেপথ্যেই রয়েছে বিজেপি।
এরপরেই ত্রিপুরার বর্তমান সরকারের সমালোচনা করতে গিয়ে পূর্বতন বাম সরকারের প্রশংসা করেন অভিষেক। বামেদের আমলে ত্রিপুরার পরিস্থিতি এতটা খারাপ ছিল না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
মাত্র কয়েকমাসের ব্যবধানে শুভেন্দু ও অভিষেকের মুখে প্রায় একই ধরনের কথা শুনে রাজনৈতিকমহলের একাংশে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, তবে কি এবার পরিস্থিতি বিচার করে দুই রাজ্যে বামেদের (Left Front) পাশে চাইছে দুই দল? এই প্রসঙ্গে ত্রিপুরার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারকে (Manik Sarkar) প্রশ্ন করা হলে তাঁর সাফ জবাব, তৃণমূলের সঙ্গে জোটের কোনও প্রশ্নই নেই। সেসব নিয়ে তাঁরা ভাবছেন না বলেও জানিয়ে দেন মানিক। অন্যদিকে বাংলার সিপিআইএম নেতা অশোক ভট্টাচার্যকে (Ashok Bhattacharya) এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, বামেদের পাশে পাওয়ার চেষ্টা করলেও তাঁদের লড়াই এই দুই দলের বিরুদ্ধেই। এক্ষেত্রে অশোকবাবুর অভিযোগ, পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের নাম করে ওদের সংখ্যাটা ৩ থেকে ৭৭ করে দিয়েছে তৃণমূল। একইসঙ্গে ত্রিপুরায় বিজেপি বিরোধী ভোটটাকে ভাগ করে দিয়ে পরোক্ষে গেরুয়া শিবিরকে সুবিধা করে দিতেই তৃণমূল সেখানে গিয়েছে বলেও দাবি করেন অশোকবাবু।
এদিকে অশোক ভট্টাচার্য এই কথা বললেও দিন কয়েক আগে বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসুর (Biman Bose) মুখে অবশ্য অন্য কথা শোনা গিয়েছে। বিমানবাবু বলেন, ২০২৪-এ বিজেপিতে ঠেকাতে যে কোনও দলের সঙ্গে হাত মেলাতেই তাঁরা প্রস্তুত। অর্থাৎ এই কথার মধ্যে দিয়ে, তৃণমূলের সঙ্গে হাত মেলাতেও যে তাঁদের অসুবিধা নেই, আদতে সেই কথাই বিমানবাবু বোঝাতে চেয়েছেন বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। তাহলে কি তৃণমূলের সঙ্গে হাত মেলানো নিয়ে বামেদের মধ্যেই মতপার্থক্য রয়েছে? এই প্রসঙ্গে অশোক ভট্টাচার্যের সাফাই, বিমানবাবু বলেছেন জাতীয় ক্ষেত্রে বিজেপিকে আটকাতে যে বিরোধী ঐক্য গড়ে উঠবে সেখানে তৃণমূল থাকলে কোনও আপত্তি নেই। কিন্তু রাজ্যের ক্ষেত্রে বামেদের লড়াই বিজেপি-তৃণমূল উভয়ের বিরুদ্ধেই। এবার দেখার বিজেপি-তৃণমূলের তরফে প্রশংসা পেয়ে আগামিদিনে কোন পথে যায় বামফ্রন্ট।
আরও পড়ুন - মোদীর ফোন পেয়েই মমতার অভিযোগ, 'ম্যান মেড ফ্লাড'