ভোটের ফলাফল থেকে পরিষ্কার বাংলার মানুষ এখনও 'মমতাময়'। 'পরিবর্তনের পরিবর্তন'-এর যে ডাক বিজেপি দিয়েছিল তা কার্যত ছুড়ে ফেলে দিয়েছেন রাজ্যের ভোটাররা। তাই তো ২০০-টিরও বেশি আসন পেয়েছে ঘাসফুল শিবির। সেখানে বিজেপি দখল করতে পেরেছে মাত্র ৭৭টি আসন।
অথচ পশ্চিমবঙ্গকে এবার পাখির চোখ করেছিলেন মোদী-শাহরা। ভোট ঘোষণা হওয়ার পর থেকে রেকর্ড সংখ্যকবার রাজ্যে এসেছেন তাঁরা। প্রচার করেছেন। তাই ভোটগ্রহণ পর্ব শেষ হওয়ার পর বুথ ফেরত সমীক্ষাতেও ইঙ্গিত ছিল, মমতার এবার ক্ষমতায় ফেরা মসৃণপথে হবে না। তবে ফলাফল সামনে আসার পর তা মিথ্যে প্রমাণিত হয়েছে। কীভাবে এত বড় জয় পেলেন তৃণমূল নেত্রী?
বাঙালি সত্ত্বা
এবারের নির্বাচনে বাঙালি সত্ত্বাকে প্রচারের হাতিয়ার করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বিভিন্ন সভা-সমাবেশ থেকে বিজেপিকে বহিরাগত বলে আক্রমণ করেছেন। বিজেপি রাজ্যে ক্ষমতায় এলে গুজরাতিদের হাতে বাংলা চলে যাবে, এই কথা শোনা গিয়েছে মমতার গলায়। যা ভোটারদের মনে দাগ কাটতে সক্ষম হয়েছে। আবার 'বাংলা নিজের মেয়েকে চায়', এই প্রচারও তৃণমূলকে অ্যাডভ্যান্টেজ দিয়েছে। মমতা বা তৃণমূল নেতৃত্ব বারবার একথা বলার চেষ্টা করেছেন, বিজেপি নবান্ন দখল করলে বাংলার সংস্কৃতিতে আঘাত আসবে। যারা বাংলা বোঝে না, কথা বলতে পারে না, তাদের হাতে রাজ্যের দায়িত্ব তুলে দেওয়া হবে। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, মমতার এই কৌশল ভালোরকম কাজে দিয়েছে।
দিদি ও দিদি
ভোট শুরুর আগে নন্দীগ্রামে গিয়ে আহত হন মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায়। সেকারণে গোটা নির্বাচন প্রচার পর্ব তাঁকে সারতে হয় হুইল চেয়ারে বসে। এই ছবি ভোটারদের মনে দাগ কাটতে সক্ষম হয়েছিল বলে মত রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের। আবার প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন সভা থেকে 'দিদি ও দিদি' বলে মমতাকে সম্বোধন করেছিলেন। মোদীর এই ডাককে বাংলার মেয়ের অপমান হিসেবে প্রচার করতে সক্ষম হয়েছে ঘাসফুল শিবির। অনেক ভোটারই মোদীর এই ডাককে ভালোভাবে নেননি।
সংখ্যালঘু ভোট
এবার তৃণমূলের বিপুল সংখ্যক আসন পাওয়ার অন্যতম কারণ সংখ্যালঘু ভোট। বলা যেতে পারে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল একচেটিয়াভাবে সংখ্যালঘু ভোট পেয়েছে। তার প্রমাণ মালদা ও মুর্শিদাবাদ। এই ২ জেলায় অভাবনীয় ফল করেছে তৃণমূল। আবার হিন্দু ভোটেও ভাগ বসিয়েছেন মমতা। বিজেপি এককভাবে হিন্দুভোট পায়নি। বিশেষজ্ঞদের মতে, মমতার বারবার মন্দীরে যাওয়া, মঞ্চে উঠে চণ্ডীপাঠ এগুলো তৃণমূলের ভোটব্যাঙ্ককে শক্তিশালী করেছে।
মাইক্রো-ম্যানেজমেন্ট
এবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্ষমতায় ফেরার অন্যতম কারণ হল তাঁর সাংগঠনিক দক্ষতা। গোর্খা নেতা বিমল গুরুং, রাজবংশীদের তিনি এক ছাতার তলায় আনতে পেরেছেন। আবার জাতীয় ক্ষেত্রের বিজেপি বিরোধী নেতারাও মমতাকে প্রকাশ্যে সমর্থন জানিয়েছেন। যা মমতার হাতকে শক্ত করেছে।