আফগানিস্তানে তালিবানদের আধিপত্য ক্রমশ শক্তিশালী হচ্ছে। আফগান সেনা-তালিবানদের যুদ্ধ অব্যাহত। কিন্তু গত দু'দিনে তালিবানদের আক্রমণ আরও তীব্র হয়েছে। পরিস্থিতির অবনতি হতে দেখে, ভারত সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আফগানিস্তানের মাজার-ই-শরীফে কনস্যুলেটে কর্মরত ভারতীয় কর্মচারীদের ফিরিয়ে আনা হবে।
তালিবানদের সঙ্গে লড়াইয়ে প্রতিনিয়ত বিপদের সম্মুখীন হতে হচ্ছে আফগান সরকারকে। তাদের ভয়ে চাকরি ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছেন আফগান সেনারা। তালিবানরা এক সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যে আফগানিস্তানের ষষ্ঠ শহরটিও দখল করে নিয়েছে। আফগানিস্তানকে ইসলামি চরমপন্থীদের হাত থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করলেও সরকারি নিরাপত্তা বাহিনীর জন্য এটি আরেকটি বড়সড় আঘাত বলে মনে করা হচ্ছে। ডেইলি মেইলের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সামানগান প্রদেশের রাজধানী আইবাক সোমবার সকালে একটি জিহাদি গোষ্ঠীর কব্জায় চলে যায়। তালিবানরা টুইট করে, আইবাকের সমস্ত সরকারি এবং পুলিশ পোস্ট দখল করা হয়েছে।
সামানগান প্রদেশের ডেপুটি গভর্নর সেফাতুল্লাহ সামঙ্গানিকে উদ্ধৃত করে জানায় যে শহরটি এখন তালিবানদের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। কুন্দুজ, সার-ই-পুল এবং তালোকান দখলের মাত্র একদিন পর, আইবাক তালিবানদের হাতে ধরা পড়ে। জালানজ এবং শেবারগান শহর তালিবানরা গত সপ্তাহে দখল করে নেয়। লস্করগাহ, কান্দাহার এবং হেরাতে ভয়াবহ লড়াই অব্যাহত রয়েছে। অন্যদিকে তালিবানরা দাবি করেছে আফগানিস্তানের উত্তরের সবচেয়ে বড় শহর মাজার-ই-শরীফ আক্রমণ করা হয়েছে।
এদিকে জানা গেছে, তালিবানদের জন্য পাইলটরা আফগান সেনাবাহিনী ছেড়ে চলে যাচ্ছে। যার ফলে আফগান সেনার বিমান সহায়তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আফগান সেনার বিমান বাহিনী তালিবানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জেতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সাম্প্রতিক কয়েক সপ্তাহে আটজন পাইলট নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছেন ব্ল্যাক হক পাইলট হামিদুল্লাহ আজেমি, যিনি শনিবার আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের কাছে নিহত হন। আজিমির গাড়িতে একটি বোমা লাগানো হয়েছিল, যার বিস্ফোরণ ঘটে তাঁর মৃত্যু হয়। এতে পাঁচজন সাধারণ নাগরিকও আহত হয়েছেন।
'দ্য টাইমস' -কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে একজন পাইলট বলেছেন, তাদের ১৯ সহকর্মী বিমান বাহিনী ছেড়ে চলে গেছেন কারণ সরকার তাদের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিতে পারছে না। তিনি আরও বলেন, "আমি দশ বছর ধরে বিমান চালাচ্ছি। যেদিন থেকে আমি আমার ইউনিফর্ম পরলাম, আমি রক্তের শেষ বিন্দু পর্যন্ত আমার দেশকে রক্ষা করার অঙ্গীকার করেছি"
আরও জানান, "আমার নিরাপত্তার জন্য আমাকে প্রতিদিন আমার গাড়ি বদলাতে হবে। কাজে যাওয়ার জন্য আমাকে আমার বন্ধুদের গাড়ি ধার করতে হবে। আমি আমার বাড়ির বাইরে থাকতে পারি না। এমনকি শপিং করতে, চুল কাটতে পর্যন্ত যেতে পারি না। এখন আমি চাকরি ছাড়ার কথা ভাবছি। যদি সরকার আমার পরিবারের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিতে পারে, তাহলে আমি চিরকাল যুদ্ধ করতে রাজি।
তালিবান গণমাধ্যমের ব্যক্তিত্বদেরও নিশানা বানিয়েছে। সোমবার রেডিও স্টেশনের উপস্থাপক তুফান উমরকে কাবুলে গুলি করে হত্যা করা হয়। এদিকে, হেলমান্দ প্রদেশে কর্মরত সাংবাদিক নেমাতুল্লাহ হেমাতকে সোমবার তালিবানরা অপহরণ করেছে বলে স্থানীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
মাজার-ই-শরীফে হামলা: তবে সরকারি কর্মকর্তারা মাজার-ই-শরীফে তালিবানের হামলাকে মিথ্যা প্রচার বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। এর আগে, তালিবানরা হজরত সুলতানের প্রধান আফগান সেনা ঘাঁটি দখল করেছিল, যা কুন্দুজ এবং মাজার-ই-শরীফের মধ্যে অবস্থিত।
সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা ভিডিওতে সামরিক ঘাঁটিতে তালিবান যোদ্ধাদের দেখা যায়।তালিবানের কোন প্রতিরোধ ছাড়াই হজরত সুলতানের আফগান সেনা ঘাঁটি দখল করতে সক্ষম হয়। সাঁজোয়া ট্রাকসহ প্রায় ৫০ টি গাড়ি তালিবানদের হাতে ধরা পড়ে।
মাজারের প্রবীণ নেতা আতা মোহাম্মদ নূর সোমবার শহরের জন্য লড়াই করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেছিলেন,"আমার রক্তের শেষ ফোঁটা প্রতিরোধ করা হবে"। তিনি টুইট করেন, "আমি হতাশায় মরার চেয়ে মর্যাদার সঙ্গে মরতে পছন্দ করি।"
প্রকৃতপক্ষে, আমেরিকান এবং ন্যাটো সৈন্য প্রত্যাহার আফগান বিমান বাহিনীর জন্য একটি ধাক্কা দিয়ে গেছে। কারণ আমেরিকান সৈন্যরা এতদিন যুদ্ধবিমান এবং হেলিকপ্টার পরিচালনা করছিলেন।
আফগান সামরিক বিমানের প্রায় এক তৃতীয়াংশ ক্ষতিগ্রস্ত অবস্থায় পড়ে আছে। খুচরা যন্ত্রাংশের অভাবে অনেক বিমান চালানো সম্ভব হচ্ছে না। পাইলটরা এতে হতাশ হয়ে পড়েন। এর পর, পর পর হত্যাকাণ্ডের কারণে তাদের মনোবল আরও দুর্বল হয়ে যায়। কারণ পাইলটরা এমনকি কাবুলেও নিরাপদ বোধ করছে না।