'আমি শ্বাস নিতে পারছি না...', সেই পরিচিত গোঙানি। ধীরে ধীরে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন ব্যক্তি। পুলিশ তখনও হাঁটু দিয়ে চেপে রেখেছে ঘাড়। ২০২০ সালের সেই নৃশংস ঘটনারই পুনরাবৃত্তি হল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইওতে। এবারও শিকার এক কৃষ্ণাঙ্গ। পুলিশ তাঁকে মাটিতে ফেলে হাঁটু দিয়ে চেপে রেখেছিল ঘাড়। দম বন্ধ হয়ে মৃত্যু হল শেষমেশ। ২০২০ সালে জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর স্মৃতি ফিরল জো বাইডেনের আমেরিকায়। এবার মৃত্যু হল ফ্র্যাঙ্ক টাইসনের। ফ্যাঙ্ক টাইসনও কৃষ্ণাঙ্গ। ওহাইও-তে পুলিশ বিভাগ ফুটেজ প্রকাশ করেছে, যাতে দেখা যাচ্ছে, পুলিশ ফ্র্যাঙ্ক টাইসন (৫৩) নামে একজনকে আটক করছে। গত ১৮ এপ্রিল টাইসনকে একটি গাড়ি দুর্ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয়েছিল। দুর্ঘটনার পর তিনি ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান।
'ওরা আমাকে মেরে ফেলতে চাইছে, শেরিফকে ডাকো'
ওহাইও পুলিশ বিভাগ কর্তৃক প্রকাশিত ৩৬ মিনিটের বডি-ক্যাম ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, একজন অফিসারকে একটি গাড়ির কাছে গেল, গাড়িটি একটি বিদ্যুতের খুঁটিতে ধাক্কা মেরেছে। একজন প্রত্যক্ষদর্শী পুলিশকে বলছেন, গাড়ির চালক কাছাকাছি একটি সরাইখানায় লুকিয়ে আছেন। পুলিশ সদস্যরা তারপর সরাইখানায় প্রবেশ করে, যেখানে তারা ফ্র্যাঙ্ক টাইসনকে বারে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে। একজন পুলিশ টাইসনের হাত ধরার চেষ্টা করার সঙ্গে সঙ্গে তিনি চিৎকার করতে থাকে, 'ওরা আমাকে মেরে ফেলতে চাইছে, শেরিফকে ডাকো।'
NEW: 53-year-old man dies after getting taken to the ground by police and telling them that he couldn’t breathe.
— Collin Rugg (@CollinRugg) April 26, 2024
As Ohio man Frank Tyson was motionless on the ground, one officer could be heard bragging about the “bar fight.”
Tyson had just gotten out of prison according to… pic.twitter.com/vGUTHfLHI6
ফ্র্যাঙ্ক টাইসনের ঘাড়ে হাঁটু চেপে ধরল পুলিশ
এরপর পুলিশ ফ্রাঙ্ক টাইসনকে মাটিতে ফেলে হাতকড়া পরিয়ে দেয়। এই সময় একজন পুলিশকে দেখা যায়, টাইসনের পিঠে বসে ঘাড়ে হাঁটু চাপিয়ে ধরল। টাইসনকে বারবার বলতে শোনা যায়, 'আমি শ্বাস নিতে পারছি না।' আমি...ঘাড় ঘোরাতে পারছি না।' যখন একজন পুলিশ তাকে চিৎকার করে বলছে, 'শান্ত হও, তুমি ভাল আছো'। নিজেকে মুক্ত করার জন্য খানিক ক্ষণ ছটফট করতে করতেই, টাইসন নিস্তেজ হয়ে যান। আরেক জন পুলিশ জিগ্গেস করল, 'ও কি শ্বাস নিচ্ছে? নাড়ি আছে?'
ফ্র্যাঙ্ক ২৪ বছরের সাজা ভোগ করার পর কারাগার থেকে মুক্তি পান
ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, পুলিশ সদস্যরা তাঁর হাতকড়া খুলে তাঁকে সিপিআর দিচ্ছেন। টাইসনকে ক্লিভল্যান্ডের একটি স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফ্র্যাঙ্ক টাইসন মামলার সঙ্গে জড়িত ক্যান্টন পুলিশ বিভাগের কর্মকর্তাদের বিউ শোয়েনিজ এবং ক্যামডেন বার্চ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। অপহরণ এবং চুরির জন্য ২৪ বছরের সাজা ভোগ করার পর ফ্র্যাঙ্ক ৬ এপ্রিল কারাগার থেকে মুক্তি পান। এই ঘটনা জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর কথা মনে করিয়ে দেয়। চার বছর আগে, ফ্লয়েড মিনিয়াপলিসে মারা গিয়েছিল যখন পুলিশ তাকে একইভাবে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছিল।
জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর স্মৃতি ফিরল আমেরিকায়
জর্জ ফ্লয়েডের ক্ষেত্রে, একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল, যেখানে ডেরেক চউভিন নামে একজন শ্বেতাঙ্গ পুলিশ অফিসারকে নয় মিনিটেরও বেশি সময় ধরে তার ঘাড়ে হাঁটু গেড়ে থাকতে দেখা গেছে। এই সময় জর্জ ফ্লয়েড তার জীবনের জন্য ভিক্ষা করতে থাকেন, 'আমি শ্বাস নিতে পারছি না'। ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পর আমেরিকায় সাদা বনাম কালো নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। আমেরিকার কৃষ্ণাঙ্গ নাগরিকদের দ্বারা দেশের অনেক শহরে বড় আকারের সহিংস বিক্ষোভ হয়েছে। পুলিশ অফিসার ডেরেক চাউভিন এবং তার তিন সহকর্মী পুলিশ সদস্যদের পরে আদালত হত্যা এবং অন্যান্য অপরাধের জন্য দোষী সাব্যস্ত করে।