তালিবানদের ত্রাস ক্রমশ বাড়ছে আফগানিস্তানে। আফগান সেনা বাহিনীর প্রতিরোধ ব্যর্থ হওয়ায় তালিবান আফগানিস্তানের দ্বিতীয় এবং তৃতীয় বৃহত্তম শহর দখল করে নিয়েছে। রাজধানী কাবুলে হামলা হতে আর বেশি দিন বাকি নেই বলেই সম্ভাবনা। শীঘ্রই কাবুলেরও দখল নেবে তালিবানরা। কাবুলের থেকে বেশি দূরে নেই তালিবানরা। দিন যতই এগোচ্ছে আফগানিস্তানের গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলি তালিবানদের হাতে চলে যাচ্ছে। গতকালই কান্দাহার, গজনি ও হেরাটের দখল নিয়েছে তালিবানরা।
দেখে নিন পাঁচটি বৈশিষ্ট্য-
১) ৩৪ টি প্রদেশের মধ্যে ১৮ টি তালিবানদের নিয়ন্ত্রণে:
আফগানিস্তানে মোট ৩৪ টি প্রদেশ রয়েছে, যার মধ্যে ১৮ টিই তালিবানদের দখলে। যার মানে আনুমানিক ৬৫ শতাংশ অঞ্চলই দখল করেছে তালিবানরা।
যে প্রদেশগুলি তালিবানরা আগেই দখল করেছে সেগুলি হল- জারাঞ্জ (৬ অগাস্ট), শেবারঘান (৭ অগাস্ট), সার-ই-পুল (৮ অগাস্ট), কুন্দুজ (৮ অগাস্ট), তালুকান (৮ অগাস্ট), আইবাক (৯ অগাস্ট), ফারাহ (১০ অগাস্ট), পুল-ই-খুমরি (১০ অগাস্ট), ফৈজাবাদ (১১ অগাস্ট), গজনি (১২ অগাস্ট), হেরাট (১২ অগাস্ট), কান্দাহার (১২ অগাস্ট), লস্কর গহ (১৩ অগাস্ট), কালা-ই-নও (১৩ অগাস্ট), ফিরুজ কোহ (১৩ অগাস্ট), পুল-ই আলম (১৩ অগাস্ট), তেরাকোট (১৩ অগাস্ট), কালাত (১৩ অগাস্ট)।
২) জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিতে পারেন প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি:
আফগান সরকার ও বাহিনীর ওপর তালিবানরা ক্রমশ চাপ বাড়াচ্ছে। জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিতে পারেন আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি। এদিকে, তালিবান এবং পাকিস্তান ক্রমাগত তাঁর পদত্যাগ দাবি করছে।
সূত্রের খবর, সরকারের ভবিষ্যৎ কী? তা নিয়েই শনিবার ভাষণ দিতে পারেন আশরাফ গনি। শুক্রবার সরকার নিশ্চিত করেছে তার প্রতিরক্ষা বাহিনীর উপর পূর্ণ আস্থা রয়েছে।
৩) আফগান সরকারের বক্তব্য:
আফগান ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট আমরুল্লাহ সালেহ জানিয়েছেন, তিনি দেশের সশস্ত্র বাহিনীর জন্য গর্বিত। রাষ্ট্রপতি আশরাফ গনির নেতৃত্বে একটি জাতীয় নিরাপত্তা বৈঠকের পর তিনি টুইট করেন, "দৃঢ় প্রত্যয় ও দৃঢ়তার সঙ্গে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে, আমরা তালিবান সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অবস্থান করছি এবং লড়াই যাতে আরও জোরদার হয় তার ব্যবস্থা করছি। এই লড়াইয়ে ক্রমশ শরণার্থী সংকটের আশঙ্কা বাড়াচ্ছে।"
৪) আফগানিস্তানে তালিবান হামলার বিষয়ে ন্যাটোর দূতদের বৈঠক:
আফগানিস্তানের পরিস্থিতি নিয়ে ন্যাটোর দূতরা শুক্রবার ব্রাসেলসে বৈঠক করে। ন্যাটোর মহাসচিব জেনস স্টলটেনবার্গ এবং ৩০ জন জাতীয় রাষ্ট্রদূত ব্রাসেলসে বৈঠকে অংশ নিয়েছিলেন।
একজন কর্মকর্তার বক্তব্য অনুযায়ী,"মিত্ররা আফগানিস্তানের পরিস্থিতি নিয়ে ক্রমাগত পরামর্শ করছে।" স্টলটেনবার্গ জানান,"মিত্রদের সঙ্গে আফগান কর্তৃপক্ষ নিয়মিত যোগাযোগ রাখছিল।" ন্যাটো নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে সমন্বয় অব্যাহত বলে জানানো হয়।
৫) তৎপর মার্কিন বাহিনী:
আফগানিস্তানে তালিবানের পর পর প্রদেশ দখলের পর শুক্রবার বাইডেন প্রশাসন কাবুল বিমানবন্দরে তিন হাজার সেনা পাঠায়, যাতে রাজধানীতে মার্কিন দূতাবাস আংশিক সরিয়ে নেওয়া যায়। এছাড়াও, আরও কয়েক হাজার সেনা পাঠানো হয় যাতে তারা আফগান বাহিনীদের জন্য স্ট্যান্ডবাই এবং স্পিড এয়ারলিফ্টে থাকতে পারে।
মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের পর দেশটির প্রচুর সেনা নিরাপত্তার অভাবে যুদ্ধক্ষেত্র ছেড়ে চলে যাচ্ছে। সাময়িকভাবে সৈন্য সংগ্রহ করা দেশটির পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়ছে। যার জেরে তালিবানরা দেশ দখলে গতি পাচ্ছে। শুক্রবারই তালিবানরা আরও চারটি প্রদেশের দখল নেয়। আমেরিকার আনুষ্ঠানিকভাবে দু'দশকের যুদ্ধ শেষ করার মাত্র কয়েক সপ্তাহ পরই তালিবানদের আধিপত্যে চলে যাচ্ছে আফগানিস্তান।