'কোয়াড' দেশগুলির বিরুদ্ধে যেভাবে সুর ছড়িয়েছে চিন, সেই ভূমিকায় বেশ কিছুটা অসন্তুষ্ট হয়েছে বাংলাদেশ। চিনা অ্যাম্বাসেডর লি জিমিং বলেন যে ঢাকার উচিত নয় এই গ্রুপে যোগদান করা। যদি করে সেক্ষেত্রে চিন ও বাংলাদেশের সম্পর্ক গুরুতরভাবে ক্ষতির মুখে পড়তে পারে। কোয়াড গ্রুপকে 'বেজিং বিরোধী' দল বলেও উল্লেখ করেছেন চিনা দূত। প্রসঙ্গত, কোয়াড গ্রুপের সদস্যরা হল- ভারত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জাপান এবং অস্ট্রেলিয়া।
যদিও বাংলাদেশে অবস্থিত চিনা দূতের এই মন্তব্য নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে হাসিনা মন্ত্রক। বাংলাদেশের বিদেশ মন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমান মঙ্গলবার বলেন, "খুবই দুঃখজনক এবং খারাপ মন্তব্য। আমরা একটি স্বাধীন ও গণতান্ত্রিক দেশ। আমরা নিজেরাই আমাদের বিদেশ নীতি ঠিক করতে পারি।"
সোমবার বাংলাদেশে আয়োজিত কূটনীতিক প্রতিবেদক অ্যাসোসিয়েশনের ভার্চুয়াল বৈঠকে লি জিমিং বলেন, "চার দেশের যে ছোট কোয়াড গ্রুপ রয়েছে সেখানে বাংলাদেশের না যোগ দেওয়াই উচিত। সেটি হলে দুই দেশের সম্পর্ক খারাপ হবে, আমরা খুব আঘাত পাব।"
তবে বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রীর কথায় তিনি এখনও 'নিজের কানে' একথা শোনেননি৷ কিন্তু এমন মন্তব্যকে তিনি সমর্থনও করেন না। চিনের তরফে এমন ব্যবহার আশাতীত, সেটিও জানিয়ে দেন মন্ত্রী মোমান৷
বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রী বলেন চিনা দূতের এহেন মন্তব্য 'অপ্রাসঙ্গিক'। তিনি জানিয়ে দেন যে বাংলাদেশ সমঝোতা রেখেই সম্পর্ক রাখতে জানে। দেশের সেই নীতি মেনেই ভবিষ্যতের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়।
এদিকে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশ বিদেশ মন্ত্রকের এক আধিকারিক জানান যে এখনও কোয়াড গ্রুপে যোগ দেওয়ার বিষয়ে কোন কথা হয়নি। চার দেশের মধ্যে কেউ বাংলাদেশকে যোগদানের বিষয়ে আমন্ত্রণও জানায়নি।
বিদেশমন্ত্রীর কথায়, প্রত্যেকের মত প্রকাশের স্বাধীনতা রয়েছে। বেজিং এর তরফে প্রতিনিধির যা বলার দেশের হয়ে তা বলেছেন।
এর আগেও বাংলাদেশ সফরে এসে চিনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওয়াই ফেগে কোয়াড নিয়ে বেজিংএর অবস্থান প্রসঙ্গে বাংলাদেশকে জানিয়েছিল। মোমেন বলেন, 'আমরা ওঁর কথা শুনেছি৷ তবে এ বিষয়ে মন্তব্য করার সময় আসেনি'
সেই সময় চিনা প্রতিরক্ষামন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের সঙ্গেও কথা বলেন। দুই দেশের সামরিক শক্তিকে জোটে পরিণত করে বিদেশি শক্তিকে পরাস্ত করার কথাও হয় দুই দেশের মধ্যে।
উল্লেখ্য, ২০০৭ সালে এই কোয়াড গ্রুপ তৈরি হয়৷ চিনকে বাদ রেখে এই দল গঠনে অসন্তুষ্ট হয় বেজিং। বাংলাদেশকে পাশে নিয়ে তাই লড়াই জারির কথা ভাবে এই দেশ।
দক্ষিণ চিন সাগরে ও এশিয়া মহাদেশে আধিপত্য বিস্তারে এই কোয়াড গ্রুপ ভূমিকা নেবে বলেই দাবি করেছে চিন। বেজিংকে একঘরে করতেই এমন সিদ্ধান্ত এও উল্লেখ করা হয়েছে বারংবার।
এদিকে চিনা দূতের এই মন্তব্যে বিরূপ মত প্রকাশ করেছে আমেরিকা। স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র নেড প্রিন্স বলেন, "আমরা শুনেছি এই মন্তব্য।
তবে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের উপর আমাদের সম্পূর্ণ সম্মান ও আস্থা রয়েছে। বিদেশ নীতি কী হবে তা নিজেরাই ঠিক করতে পারবে।"