Advertisement

বাংলাদেশ

ইতিহাস আর ঐতিহ্যের যুগলবন্দী, ঢাকা শহরের এই প্রাচীন মন্দিরগুলি

শাহিদুল হাসান খোকন
  • ঢাকা,
  • 18 Jul 2021,
  • Updated 10:58 AM IST
  • 1/17

বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার ইতিহাস সম্পর্কে বলতে গেলে আগেই উঠে আসে প্রাচীন মন্দিরগুলোর কথা। যেগুলো সনাতন ধর্মাবলম্বী ও বাংলার অনেক ঐতিহ্যের সাক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়ে আছে এখানো। ঢাকা শহরে  ছড়িয়ে রয়েছে বেশ কিছু পুরনো মন্দির৷ 
 

  • 2/17

ইতিহাস বলে সেন শাসনকালে  রাজা বল্লাল সেনের হাতেই ঢাকায় প্রথম মন্দির নির্মিত হয়। মন্দিরটি ঢাকেশ্বরী মন্দির নামে পরিচিত। পরবর্তীকালে শঙ্করাচার্যের গিরিধারী অনুসারীরা রমনায় একটি মঠ নির্মাণ করেন।তা রমনা কালীমন্দির হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। ঢাকার আদি বাসিন্দা বলে খ্যাত বসাকরা ছিলেন বৈষ্ণব ধর্মের অনুসারী। তাঁরা মৈশুণ্ডীতে মন্দির নির্মাণ করে উপাসনা করতেন। মৈশুণ্ডীতে প্রাচীন মন্দিরের স্থলে বর্তমানে নির্মিত হয়েছে ইসকন মন্দির।

  • 3/17


এভাবেই বিচ্ছিন্নভাবে মন্দির নির্মাণ চলছিল। তবে সুলতানি আমলে এতে ভাটা পড়ে। মোগল আমলে আবার মন্দির নির্মাণ শুরু হয়। তখন ক্ষুদ্র ভূস্বামীরা নিজ এলাকায় স্বাধীনভাবেই বাস করতেন। বিক্রমপুরের অধিপতি চাঁদ রায় ষোল শতকের আশির দশকে ঢাকায় একটি মন্দির নির্মাণ করেন। সেটি আজ সিদ্ধেশ্বরী কালীমন্দির হিসেবে পরিচিত। ষোল শতকের শেষ দিকে সম্রাট আকবরের সেনাপতি মান সিংহ ঈশা খাঁকে পরাজিত করার উদ্দেশ্যে বাংলায় আসেন। তখন তিনি ঢাকায় একটি দিঘি খনন করেন এবং নামকরণ করেন গঙ্গাসাগর। এ দিঘির পাশেই একটি কালীমন্দির নির্মাণ করেন, নাম বরদেশ্বরী কালীমন্দির। সে মন্দির আজও আছে স্বনামে। ঢাকার যেসব সুবাদার পরধর্মসহিষ্ণু ছিলেন, তাঁদের সময়ও ঢাকায় মন্দির নির্মিত হয়। এর মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অন্তর্গত শ্রীশ্রী বুড়াশিব ধাম অন্যতম।

  • 4/17

ঢাকা  শহরে মন্দিরের বিকাশ ঘটে মূলত ইংরেজ আমলে। চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের কারণে জমিদারি লাভজনক ব্যবসায় পরিণত হয়। এ কারণে হিন্দুদের মধ্যে একটি ধনি শ্রেণির সৃষ্টি হয়। তারা ঢাকায় বাড়ি নির্মাণের পাশাপাশি  মন্দিরও নির্মাণ করে। তা ছাড়া নবাবি আমলে বেশ কিছু মেধাবী হিন্দু উচ্চ রাজকার্যে নিযুক্ত ছিলেন। তাঁদের কারণেও ঢাকায় বেশ কিছু মন্দির নির্মিত হয়। আবার কেউ কেউ সাধু-সন্ন্যাসী বা গুরুর স্মৃতি ধরে রাখার জন্য মঠ-মন্দির নির্মাণ করেন। এভাবেই ঢাকা মহানগরীতে তখন শতাধিক মন্দির নির্মিত হয়।

  • 5/17

এসব মন্দির নির্মিত হওয়ার পাশাপাশি মন্দির স্থাপত্যকলারও বিকাশ ঘটে। সৃষ্টি হয় এক শ্রেণীর মন্দির নির্মাতার। প্রথাগত বাংলা রীতির সঙ্গে সুউচ্চ শিখর মন্দির এবং রত্নমন্দিরও দেখা যায় ঢাকায়। এমনকি দালানবাতির মন্দিরও দেখা যায়। যেমন, শাঁখারী বাজার কালীমন্দির। ঢাকার মন্দির নির্মাতাদের দক্ষতা ছিল সুবিদিত। সেই নির্মাতাদের দক্ষতার প্রমাণ আজও বহন করছে বেশ কয়টি মন্দির। ঢাকেশ্বরী মন্দির, জয়কালী মন্দির, রাম সাহা মঠ মন্দির তার অনন্য উদাহরণ। বিশেষ করে এসব মন্দিরের অলংকরণ বিস্ময়কর। মন্দিরের নির্মাণশৈলী দেখেই বোঝা যেত কোন কোন দেব-দেবী সেখানে পূজিত হন। ঢাকার এরকম প্রাচীন দশটি মন্দিরের কথা তুলে ধরা হল আজতাকের পাঠকদের জন্য ৷
 

  • 6/17

ঢাকেশ্বরী মন্দির
ঢাকার সবচেয়ে প্রাচীন মন্দির হল ঢাকেশ্বরী মন্দির। বলা হয়ে থাকে এর নামকরণ হয়েছে "ঢাকার ঈশ্বরী" অর্থাৎ ঢাকা শহরের রক্ষাকর্ত্রী দেবী হতে। ঢাকার ঐতিহ্যবাহী শ্রী শ্রী ঢাকেশ্বরী মন্দিরটি রাজা বল্লাল সেন ১২০০ খ্রিষ্টাব্দের কোন এক সময় নির্মাণ করেছিলেন। এই মন্দিরটি কালক্রমে ঢাকার জাতীয় মন্দির হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম এতিমখানার পূর্ব পাশে ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের দক্ষিণ পশ্চিমে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরের অবস্থান। ঠিকানা - ১০ অরফানেজ রোড, লালবাগ, ঢাকা – ১২১১। বর্তমানে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়, ঢাকা সিটি কর্পোরেশন এবং স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটি ও বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটি ঢাকেশ্বরী মন্দিরটি তত্ত্ববধায়ন ও নিয়ন্ত্রণ করছে।

  • 7/17

রামকৃষ্ণ মিশন মঠ ও মন্দির
এটি রাজধানীর রামকৃষ্ণ মিশন সড়কে অবস্থিত৷ ১৯১৬ সালে জমিদার জোগেশ চন্দ্র দাসের দান করা সাত বিঘা জমির উপর রাম কৃষ্ণ মঠ ও রামকষ্ণ মিশন প্রতিষ্ঠিত হয়৷ এখানে মিশনের ভেতরে আছে সুরম্য একটি মন্দির৷ বেলুড় মঠেপ একটি শাখাকেন্দ্র বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাতে অবস্থিত রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশন। বাংলাদেশে রামকৃষ্ণ মিশনের প্রধাণ কেন্দ্রও ঢাকার এই মঠটি। এটি বাংলাদেশে রামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দ আন্দোলন পরিসঞ্চালনের একটি অন্যতম প্রধাণ পীঠস্থান।পুরনো ঢাকার বুড়িগঙ্গা নদীর নিকটে টিকাটুলির রামকৃষ্ণ মিশন রোডে এটি অবস্থিত।

  • 8/17


১৮৯৯ সালে স্বয়ং স্বামী বিবেকানন্দ তার দু`জন শিষ্য স্বামী বিরজানন্দ ও স্বামী প্রকাশনন্দকে ঢাকায় প্রেরণ করেন পূর্ববঙ্গে রামকৃষ্ণ ভাবধারা প্রচার করার উদ্দেশ্যে। ১৯০৪ সাল থেকে এখানে  নিয়মিত বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও প্রকাশনা কাজ হতে  শুরু করে। ১৯১৪ সালের অক্টোবর মাসে বেলুড় মঠ কর্তৃক এটি রামকৃষ্ণ মিশনের একটি শাখা হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। ১৯১৬ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি রামকৃষ্ণ মিশনের তৎকালীন সঙ্ঘাধ্যক্ষ স্বামী ব্রহ্মানন্দ ও স্বামী প্রেমানন্দ রামকৃষ্ণ মন্দিরের ভিত্তি স্থাপন করেন। ঢাকার জমিদার, ধর্ম ও সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষক যোগেশ চন্দ্র দাসের দান করা সাত বিঘা জমিতে এ মঠ ও মিশন প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে এই মঠটি বাংলাদেশে স্থিত রামকৃষ্ণ মিশনের প্রধান কার্যালয়।

  • 9/17

রমনা কালী মন্দির
রমনা রেসকোর্স বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দক্ষিণ প্রান্তে  রয়েছে রমনা কালী মন্দির৷ বেশ পুরনো এ মন্দিরটি ১৯৭১ সালে পাক হানাদার বাহিনী ধ্বংস করে ফেলে৷ এর পরে এখানে আর বড় কোনো স্থায়ী মন্দির নির্মাণ করা না হলেও দুর্গা পূজার সময় নির্মাণ করা হয় বড় আকারের অস্থায়ী মন্দির৷ বাঁশের তৈরি এ মন্দিরকে ঢেকে দেয়া হয় রঙিন কাপড়ে৷
 

  • 10/17

শ্যামবাজার শিব মন্দির
বুড়িগঙ্গা নদীর তীর ঘেঁষে প্রাচীন এ মন্দিরটি অবস্থিত৷ অতীতে এ মন্দিরে একটি উঁচু চূড়া ছিল৷ চার্লস ডয়েলির আঁকা ছবিতে ঢাকার নর্থব্রুক হলের সঙ্গে এ মন্দিরটিও দেখা যায়৷ মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সৈন্যরা এর চূড়াটি গুড়িয়ে দেয়৷
 

  • 11/17

শ্রী শ্রী বুড়া শিবধাম
ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের উত্তর দিকে প্রাচীন, সুন্দর এ মন্দিরটির অবস্থান৷ জনশ্রুতি আছে, সম্রাট জাহাঙ্গীরের শাসনাকালে তৈরি হয় মন্দিরটি৷ তবে বর্তমান কাঠামোটি নির্মাণ করেন বর্ধমানের রাজা স্যার বিজয় চাঁদ৷ ১৯৭১ সালে এ মন্দিরের সেবায়েতসহ বেশ কয়েকজন সাধুকে হত্যা করেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী৷

  • 12/17

সিদ্ধেশ্বরী কালী মন্দির
ঢাকার সিদ্ধেশ্বরীতে বিক্রমপুরের অধিপতি চাঁদ রায় আনুমানিক ১৫৮০ সালে নির্মাণ করেন এ মন্দির৷ এক সময় বিশাল পুকুর আর অরণ্যঘেরা এ মন্দিরটি এখন খুঁজে পেতেই কষ্ট হয়৷ কথিত আছে মা আনন্দময়ী, সেবাইত সৌম্যবরণ গোস্বামী প্রমুখ এ মন্দিরে সাধনা করে সিদ্ধি লাভ করেছিলেন৷ ধারণা করা হয় এ মন্দির থেকেই এলাকাটির নামকরণ৷

  • 13/17


বরদেশ্বরী কালীমাতা মন্দির
স্থানীয়ভাবে এটি ‘রাজারবাগ কালী মন্দির’ নামে পরিচিত৷ জনশ্রুতি আছে ষোড়শ শতাব্দীর শেষ দিকে সম্রাট আকবরের সেনাপতি বাংলা বিজয়ের উদ্দেশ্যে ঢাকার পূর্ব প্রান্তে এসে তাঁবু ফেলেন৷ তিনি সেখানে গঙ্গাসাগর নামে একটি দিঘি খনন করেন৷ ঈশা খাঁ-কে পরাজিত করার উদ্দেশ্যে বর চেয়ে দীঘির পূর্ব পাশে একটি কালী মন্দির নির্মাণ করেন৷ এরপর থেকে এর নাম হয় বরদেশ্বরী কালী মন্দির৷
 

  • 14/17

স্বামীবাগ লোকনাথ আশ্রম
ঢাকার স্বামীবাগে শ্রী শ্রী লোকনাথ ব্রহ্মচারী আশ্রম ও মন্দির৷ শক্তি ঔষধালয়ের প্রতিষ্ঠাতা মথুরামোহন মুখোপাধ্যায় ১৯০৫ সালে এটি নির্মাণ করেন৷
 

  • 15/17

স্বামীবাগ ইসকন মন্দির
ঢাকার স্বামীবাগে ১৯৬৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ইসকন মন্দির৷ এটি হিন্দু বৈষ্ণব সাধক সম্প্রদায়ের প্রার্থনালয়৷ এখানে ইসকনের প্রতিষ্ঠাতা আচার্য কৃষ্ণকৃপাশ্রীমূর্তি শ্রীল অভয়চরণারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ (১৮৯৬-১৯৭৭) সংক্ষেপে শ্রীল প্রভুপাদ’র মূর্তি আছে৷

  • 16/17

জয়কালী মন্দির
প্রায় তিনশত বছরের পুরনো ঢাকার বহুল পরিচিত মন্দির৷ প্রাচীন এ মন্দিরটিতে শুরুতে দুটি চূড়া ছিল৷ এখন শুধু শিব মন্দিরের উপর নির্মিত চূড়াটি আছে৷ মন্দিরের চূড়ার আকর্ষণীয় অলঙ্করণও বিভিন্ন সময়ে সংস্কারের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷

  • 17/17

গৌড়ীয় মাধব মঠ
পুরনো ঢাকার নারিন্দায় অবস্থিত শ্রী শ্রী গৌড়ীয় মাধব মঠ৷ শ্রী সিদ্ধান্ত স্বরস্বতী গোস্বামী প্রভুপাদ ১৯২১ সালে এ মঠের প্রতিষ্ঠা করেন৷ এখানে আছে একটি কৃষ্ণ মন্দির, নাটমণ্ডপ ও যাত্রীনিবাস৷

Advertisement
Advertisement