সেতারের তারে তাঁর আঙুল ছুঁয়ে যাওয়া মানেই তৈরি হত সুরের মায়াজাল, আর মন্ত্রমুগ্ধের মতো তা উপভোগ করতেন দেশে বিদেশের শ্রোতা দর্শকরা। দীর্ঘ সময় ধরে ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতকে তিনিই তুলে ধরেছেন পশ্চিমী দুনিয়ার সামনে। তাঁর সুরে ঝংকারে মজে বহু সাহেব-মেমরা আকৃষ্ট হয়েছেন ভারতীয় রাগ সঙ্গীতের প্রতি। তিনি পণ্ডিত রবিশঙ্কর (Ravi Shankar)।
১৯২০ সালের ৭ এপ্রিল উত্তরপ্রদেশের বারাণসীতে জন্ম রবিশঙ্করের। তাঁর পুরোনাম অবশ্য রবীন্দ্র শঙ্কর চৌধুরী (Rabindra Shankar Chowdhury)। সেতার হাতে তুলে নেন অনেক ছোট বয়সেই। মাত্র ১২ বছর বয়সেই প্যারিসে নিজের দাদা প্রখ্যাথ নৃত্যশিল্পী উদয় শঙ্করের নাচের দলে সেতার বাদক হিসেবে যোগ দেন। তখন থেকেই দেশে-বিদেশে অনুষ্ঠান করা শুরু হয়ে যায় তাঁর।
যদিও পরবর্তী সময় ১৯৩৮ সালে ১৮ বছর বয়সে দাদার নাচের দল ছেড়ে মাইহার ঘরানার বিখ্যাত শিল্পী উস্তাদ আলাউদ্দিন খানের কাছে তালিম নিতে শুরু করেন। একটানা বেশ কয়েকবছর তালিম নেন তিনি। সেই সময় আলাউদ্দিন খানের পুত্র তথা অপর এক প্রখ্যাত সরোদিয়া উস্তাদ আলি আকবর খানের সংস্পর্শেও আসেন রবিশঙ্কর। এমনকি বহু অনুষ্ঠানে সেতার-সরোদের যুগলবন্দীও বাজিয়েছেন রবিশঙ্কর ও আলি আকবর।
১৯৩৯ সালে আহমেদাবাদে প্রথম একক সেতারের অনুষ্ঠান করেন রবিশঙ্কর। ১৯৪৫ সালের মধ্যে একজন সেতারিয়া হিসেবে কার্যত প্রতিষ্ঠা পেয়ে যান তিনি। আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। দেশ বিদেশ থেকে একের পর এক ডাক আসতে থাকে তাঁর।
আরও পড়ুন - বাগনানে পথদুর্ঘটনায় মৃত দাদু-নাতি, আরামবাগে উল্টে গেল বাস
তবে নিজে ভারতী শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের শিল্পী হলেও গানবাজনার ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন খোলা মনের। আর সেই কারণেই পাশ্চাত্য সঙ্গীত নিয়েও দীর্ঘ কাজ করেছেন তিনি। বিটলসের জর্জ হ্যারিসনের (George Harrison) সঙ্গে তাঁর ছিল গভীর বন্ধুত্ব।
শুধু কী সেতার বাজানো, সঙ্গীত সৃষ্টিতেও নিজের অসাধারণত্বের ছাপ রেখেছেন পণ্ডিতজি। 'চাপাকোয়া', 'চার্লি', 'গান্ধী'র মতো ছবিতে সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন তিনি। এমনকি সত্যজিৎ রায়ের 'পথের পাঁচালি'তেও রয়েছে তাঁর সঙ্গীতের ছোঁয়া।
সর্বোপরি কবি ইকবালের লেখা ভারতের অন্যতম দেশাত্মবোধক গান 'সারে জাহাঁসে আচ্ছা'র (Sare Jahan Se Acha) সুরারোপও করেন তিনিই। এককথায় বলতে গেলে, এককবাদন থেকে সৃষ্টি, সঙ্গীতের সর্বক্ষেত্রেই নিজের পাণ্ডিত্যের প্রমাণ দিয়েছেন পণ্ডিত রবিশঙ্কর।