বুধবার সন্ধ্যায় এক দুঃসংবাদে মন ভারাক্রান্ত হয়ে যায় সকলের। কোমায় আচ্ছন্ন হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন টেলিভিশন অভিনেত্রী ঐন্দ্রিলা শর্মা।
এই খবর সামনে আসার পর থেকেই অনুরাগী থেকে শুরু করে, অন্যান্য তারকারা ঐন্দ্রিলার সুস্থতা কামনা করে সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে নানা পোস্ট করেছেন।
দু'বার ক্যান্সারকে হারিয়ে কাজে ফিরেছিলেন অভিনেত্রী। কিন্তু জীবনযুদ্ধে ফের লড়াই শুরু তাঁর। আচমকাই ব্রেন স্ট্রোক হয়ে অত্যন্ত আশঙ্কাজনক ঐন্দ্রিলা। বর্তমানে হাওড়ার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভেন্টিলেশনে রয়েছেন তিনি।
মঙ্গলবার হঠাৎ ব্রেন স্ট্রোক হয়ে মাথায় রক্ত জমাট বেঁধে যায় ঐন্দ্রিলার। তড়িঘড়ি তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কোমায় আচ্ছন্ন রয়েছেন অভিনেত্রী। যদিও তাঁর পরিবার বা প্রেমিক সব্যসাচী চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি এখনও পর্যন্ত।
হাসপাতাল সূত্রের খবর অনুযায়ী জানা যাচ্ছে বুধবার তাঁর শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে ৪৮ ঘণ্টা না কাটা অবধি, এখনই কিছু বলা যাবে না।
চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন এই আপাতত ঐন্দ্রিলার শরীরের একদিক সম্পূর্ণ অসাড়। তবে বাঁ হাত সামান্য নাড়াচাড়া করতে পারছেন এবং শুধু চোখ নড়ছে।
সব্যসাচী- ঐন্দ্রিলার কাছের বন্ধু অভিনেতা সৌরভ দাস। বৃহস্পতিবার তিনি ফেসবুকে একটি পোস্ট করে লেখেন, "সকলকে বলছি, দয়া করে ঐন্দ্রিলার সম্পর্কে জল্পনা বন্ধ করুন। আমি আর দিব্য আছি সব্যসাচীর সঙ্গে শুরু থেকেই। এই মুহূর্তে ফোন ধরার মতো পরিস্থিতিতে নেই। বিব্রত হবেন না । সঠিক সময় সব্য ঠিক জানিয়ে দেবে, যেমন ও জানায়। আপনাদের উদ্বেগের জন্য ধন্যবাদ। ওঁর জন্য প্রার্থনা করতে থাকুন।
বহরমপুরের মেয়ে ঐন্দ্রিলা ছোটবেলা থেকেই নাচে পারদর্শী। এর পাশাপাশি আবৃত্তির শখ ছিল তাঁর। ছোট থেকেই তাঁর ইচ্ছে ছিল অভিনেত্রী হওয়ার। কলকাতার একটি নামী ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভর্তিও হয়েও, শারীরিক কারণে পড়াশোনা শেষ করে উঠতে পারেননি। এরপর শুরু হয় তাঁর অভিনেত্রী হওয়ার জার্নি।
'ঝুমুর' ধারাবাহিকের মাধ্যমে টেলিভিশনে পা রাখেন ঐন্দ্রিলা শর্মা। এই ধারাবাহিকে তাঁর বিপরীতে ছিলেন সব্যসাচী। সেখান থেকেই তাঁদের বন্ধুত্ব ও পরে তা পরিণত হয় সম্পর্কে।
'জিয়ন কাঠি' ধারাবাহিকে জাহ্নবী চ্যাটার্জী চরিত্রে সকলের মন জয় করেছিলেন ঐন্দ্রিলা। সেই মেগাতে কাজ করার সময়ই অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি।
ক্লিক ওটিটি প্ল্যাটফর্মের ওয়েব সিরিজ 'ভাগার'-এ দেখা যায় সব্যসাচী- ঐন্দ্রিলাকে। যদিও এই সিরিজে একে অপরের বিপরীতে অভিনয় করেন না তাঁরা।
শোনা যাচ্ছে খুব শীঘ্রই আরও একটি ওয়েব সিরিজের কাজের জন্য শীঘ্রই গোয়া উড়ে যাওয়ার কথা ছিল লড়াকু অভিনেত্রীর। কিন্তু ঘটে গেল দুর্ঘটনা।
প্রায় বছর সাতেক আগে ২০১৫ সালে শিরদাঁড়ার ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছিলেন ঐন্দ্রিলা। প্রায় দেড় বছর কঠিন লড়াইয়ের পর সুস্থ হয়েছিলেন তিনি। আবার সেই দুঃস্বপ্নের দিনগুলি ফিরে এসেছিল তাঁর জীবনে গত বছর। হঠাৎ কাঁধে সাংঘাতিক ব্যথা হওয়ার পর একের পর এক টেস্ট করতে হয় তাঁকে। রাজধানীর হাসপাতালে তাঁর ডান দিকের ফুসফুসে টিউমার ধরা পড়ে।
একাধিকবার ঝুঁকিপূর্ণ সার্জারির পর চলেছে কেমোথেরাপি, রেডিয়েশন। তবুও মুখের হাসি কখনও অমিল হতে দেখেননি কাছের মানুষেরা। উল্টে দাঁতে দাঁত চেপে আরও কঠিন লড়াই করে গিয়েছেন ঐন্দ্রিলা। আর সঙ্গে ছিলেন পরিবার, কাছের বন্ধুরা ও ছায়াসঙ্গী, সব্যসাচী চৌধুরী অর্থাৎ ছোটপর্দার বামাক্ষ্যাপা।
বারবার পড়ে গিয়েও, গা ঝেড়ে আবার উঠে দাঁড়িয়েছেন ঐন্দ্রিলা শর্মা। বছরভর দীর্ঘ লড়াইয়ের পর, গত বছর এর শেষে জানা যায় দ্বিতীয়বার ক্যান্সারকে হারিয়েছেন তিনি। তাঁর জয়ের কথা শুনে অনুগামী থেকে শুরু করে ইন্ডাস্ট্রির বহু তারকা অনেকটা স্বস্তি পেয়েছিলেন। ধীরে ধীরে পুরনো ছন্দে শ্যুটিং ফ্লোরেও ফিরছিলেন। কিন্তু ফের ছন্দপতন!
ঐন্দ্রিলার পরিবার-পরিজন, অনুগামীদের বারবার প্রার্থনা করেছেন তাঁর সুস্থ হওয়ার। এখন সকলের ফের অপেক্ষা, ফিট হয়ে, হাসি মুখেই তাঁর ফেরার। (সমস্ত ছবি সৌজন্য: ফেসবুক)