ছবির খবর চাউর হওয়ার পর থেকে সকলে অপেক্ষা করে আছে এই ছবির। কথা হচ্ছে অনীক দত্ত (Anik Dutta) পরিচালিত 'অপরাজিত' (Aparajito) নিয়ে। সত্যজিৎ রায়ের (Satyajit Ray) জন্ম শতবর্ষে তাঁকে শ্রদ্ধাঞ্জলি দিতেই এই ছবি তৈরির কথা ভেবেছেন নির্মাতারা। আজ, ২৩ এপ্রিল কিংবদন্তী শিল্পীর তিরিশতম মৃত্যুবার্ষিকীতে প্রকাশ্যে এলো ছবির ট্রেলার। যা দেখে 'পথের পাঁচালী' (Pather Panchali) -র স্মৃতিতে ভাসছে আপামর বাঙালি।
অপরাজিত রায়কে কেন্দ্র করে 'অপরাজিত' ছবির মূল গল্প। 'পথের পদাবলী' নামক একটি ছবি তৈরি করার তাঁর স্বপ্ন ও সেই স্বপ্ন সম্পন্ন হওয়ার আগে নানা বাধা -বিপত্তি ও প্রতিকূলতা নিয়ে ছবির গল্প গেঁথেছেন অনীক দত্ত। তবে ছবির প্রেক্ষাপট পাঁচের দশক। সময়টা ১৯৫৫ সাল।
চৌত্রিশ বছরের অপুর মাথায় প্রায় দশ বছর আগে থেকে সিনেমার পোকা নাড়াচাড়া করতে থাকে। নতুন ধারার ছবি সে তৈরি করবে এমনটাই ইচ্ছে তাঁর। শেষমেশ সে বানিয়ে ফেলে তাঁর জীবনের প্রথম ছবি 'পথের পদাবলী'। তিন বছরের লড়াইয়ের পর সে পায় বিশ্বসেরার পুরস্কার, ঝুলিতে আসে বহু সম্মান - স্বীকৃতি। এই অসাধ্য সাধন কীভাবে ঘটল, সেই গল্পই অপু একটি সাক্ষাৎকারে বলে। বলা চলে, 'অপরাজিত হচ্ছে' অপুর জীবনের প্রথম সিনেমা 'অপুর পদাবলী' বানানোর আখ্যান।
সত্যজিৎ রায় রূপে জিতু কমলের (Jeetu Kamal) লুক সামনে আসতেই শিরোনামে ছিল এই ছবি। সাদা- কালো ফ্রেমে 'মানিক দা'..., যেন ফিরে যাওয়া কয়েক যুগ আগে। কিংবদন্তী শিল্পীর 'পথের পাঁচালী' তৈরির কিছুটা নেপথ্য কাহিনি ফুটে উঠবে এই ছবিতে। বীরভূম, কলকাতার শিশির মঞ্চ,নন্দন থেকে শুরু করে আরও বেশ কিছু লোকেশন বেছে নেওয়া হয় শ্যুটিংয়ের জন্য।
আগেই জিতু কমলের লুক দেখে হতবাক হয়েছিলেন সকলে। এ যেন অবিকল সত্যজিৎ রায়। সেই স্টাইল, সেই চাহনি, হাতে সিগারেট ধরার ধরন, সবটাই এতটাই নিখুঁত। ট্রেলারে গলার স্বর শুনেও বারবার মনে পড়বে 'মানিক বাবুর' কথা। অনেকেই রিলের সত্যজিতকে রিয়েল লাইফের সঙ্গে ভুল করতে পারেন। লুক পারফেক্ট করতে জিতুর গালে ও থুতনিতে প্রস্থেটিক্সের সাহায্য নেওয়া হয়েছে। মেকআপ করেছেন এবিষয় দক্ষ, সোমনাথ কুণ্ডু (Somnath Kundu)। শুধু তাই নয় মানিক বাবুর সঙ্গে আরও মিল আনতে জিতু, পাল্টে ফেলেছেন নিজের দাঁতের পাটি।
তবে একই নামের ছবি খোদ সত্যজিৎ রায়ের 'দ্য পু ট্রিলজি' (The Apu Trilogy)-র দ্বিতীয় ভাগে ১৯৫৬ সালে মুক্তি পেয়েছিল। তবে নামে মিল থাকলেও কিংবা 'পথের পাঁচালী' থেকে অনুপ্রাণিত হলেও এটা একেবারেই রিমেক বা কোনও বায়োপিক না। এর আগে পরিচালক অনীক দত্ত আজতক বাংলাকে জানিয়েছিলেন, "এটা একেবারেই কোনও বায়োপিক না। সত্যজিৎ রায়ের গল্প থেকে এটা সম্পূর্ণ আলাদা। এখানে মূল যে চরিত্র, তাঁর নাম 'অপরাজিত'। একটা রেফারেন্স থাকলেও 'অপরাজিত'-র সঙ্গে এর কোনও মিল নেই। ঠিক কীভাবে 'পথের পদাবলী' তৈরি হল তা নিয়ে গল্প। এই ছবি নিয়ে বহু দিন আগেই আমার বাবুর (সন্দীপ রায়) সঙ্গে আলোচনা হয়েছিল।"
এই ছবিতে সত্যজিৎ জায়া- বিজয়া রায়ের ছায়ায় তৈরি, বিমলা রায়ের চরিত্রে দেখা যাবে সায়নী ঘোষকে। এছারাও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করছেন অনুষা বিশ্বনাথন,অঞ্জনা বসু,পরাণ বন্দোপাধ্যায়, বরুন চন্দ,অনুসূয়া মজুমদার সহ অন্যান্যরা।
প্রযোজক ফিরদৌসুল হাসানের কথায়, “সত্যজিৎ রায়- এই নামটি চলচ্চিত্র নির্মাণের ক্ষেত্রে অত্যন্ত সম্মানের সঙ্গে উচ্চারিত হয়। ফ্রেন্ডস কমিউনিকেশন সব সময় বিনোদনের ছোঁয়ায় মান সম্পন্ন ও অর্থপূর্ণ ছবি বানানোয় বিশ্বাসী। আমরা আমাদের দর্শকদের 'অপরাজিত' উপহার দিতে পেরে আনন্দিত। আমি আশাবাদী যে, শিরোনামের মতো আমাদের ছবি 'অপরাজিত-ও অপরাজিত হবে এবং ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হবে।”