রবিবার সামনে এসেছে দীর্ঘ কয়েক মাসের নির্বাচনী লড়াইয়ের রিপোর্ট কার্ড। ২১৩ টি আসনে জিতে জয়ী তৃণমূল- কংগ্রেস। অন্যদিকে বিজেপি পেয়েছে ৭৭ টি আসন। সংযুক্ত মোর্চা ১ টি ও নির্দল পেয়েছে ১ টি আসন। অন্যান্য দলগুলির মতো সক্রিয় ভাবে যোগ না দিলেও নির্বাচনের আগে বামেদের জন্য এগিয়ে এসেছিলেন কয়েকজন বাম মনস্ক তারকারা। ব্রিগেড থেকে শুরু করে প্রার্থীদের হয়ে প্রচারে সামিল হয়েছেন তাঁরা। এমনকি সোশ্যাল মিডিয়া মারফতও সক্রিয় ভাবে প্রচারের চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছেন বামেদের এই সৈন্যরা। মার্কসিটে মেলেনি ভাল ফল! মন ভারাক্রান্ত, তবু হাল ছাড়েননি তাঁরা। আজতক বাংলার সঙ্গে এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে জানানেন পরিচালক কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায় (Kamaleshwar Mukherjee), অভিনেতা রাহুল বন্দ্যোপাধ্যায় (Rahul Banerjee), বাদশা মৈত্র (Badshah Maitra) ও শ্রীলেখা মিত্র (Sreelekha Mitra)।
নির্বাচনের আগে বিজেপি ও তৃণমূল- কংগ্রেসের তারকাদের নিয়ে দড়ি টানাটানিতে না গিয়ে বামপন্থাতেই বিশ্বাস রেখেছেন টলিপাড়ার বহু শিল্পীরা। কিন্তু এরকম ফলাফলের পিছনে ঘাটতি কোথায় ছিল? সমর্থক হয়ে কী মনে করছেন তাঁরা? কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায় জানালেন, "জনসংযোগ একমাত্র পথ। এটা ছাড়া কিছুই করা সম্ভব হবে না। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে আর তো কোনও কিছু কাজ করে না। এটা নিয়ে অবশ্যই ভাবতে অনুরোধ করবো বামেদের সকলকেই। তবে আপাতত চিন্তিত আছি, যেভাবে বিজয় উৎসবের পরে সংযুক্ত মোর্চার ওপর হত্যা, ভাঙচুর ইত্যাদি শুরু হয়েছে সেটা নিয়ে এখন বেশি ভাবছি। আগে তো সকলের ঘর সামলানো দরকার। তারপর না হয় ভবিষ্যতে কী করা যাবে সেটা ভাবা যাবে। আর একটা বিষয় হচ্ছে যে এই কোভিড পরিস্থিতিকে কীভাবে সামলাতে হবে, সেটাও একটা স্পষ্ট গাইডলাইন দাবী করছি।"
অভিনেতা রাহুল বন্দ্যোপাধ্যায় জানালেন, "এই যুদ্ধের আমরা পদাতিক সৈন্য। তাই আমাদের পার্টির নেতৃত্ব বলতে পারবেন যে কোথায় কোথায় আমাদের ঘাটতি ছিল। কিন্তু বাংলার মানুষ যে সাম্প্রদায়িক রাজনীতিকে পাত্তা দেয়নি, সেটা অবশ্যই বড় পাওনা। সেটা বামপন্থীদের কাছেও গুরুত্বপূর্ণ, সে যাই রেজাল্ট হোক।" তরুণ প্রজন্ম যারা এগিয়ে এসেছিলেন তাঁদের কি মনোবল অনেকটাই ভেঙে গেল? এই প্রশ্নের উত্তরে রাহুল জানালেন, "কোনও মনোবল ভাঙেনি। যদি কোনও একটা বড় সিনেমা আমার হাতছাড়া হয়, তাতে আমার সাময়িক দুঃখ হতে পারে। কিন্তু এইটুকুর জন্য তো আমি কাজ করতে আসিনি, আমি অভিনয় করবো বলে এসছি। সেরকমই যারা তরুণ তাঁরা হারবে না। আবার নতুন করে কাজ শুরু করবে। পাঁচটা বছর আছে মানুষের পাশে থেকে এভাবেই ভাল কাজ করে যাওয়ার জন্য।"
আরও পড়ুন: এবার পাল্টা ভাইরাল বাম মনস্ক তারকাদের নম্বর! সাহায্যের হাত বাড়াচ্ছেন সৌরভ, অনীক, ইন্দ্রাশিসরা
কিছুটা অভিমানের সুর অভিনেত্রী শ্রীলেখা মিত্রের গলায়। তিনি বললেন, "একদমই ভাবতে পারিনি যে আমাদের এই তরুণ প্রজন্ম জিতবে না। এটা ঠিক মেনে নেওয়া যায় না। তবে ভুল কিছু আছে। মানুষ বামেদের দান -ধ্যানে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। এই যে শ্রমজীবি ক্যান্টিন বা রেড ভলেন্টিয়ার্সরা এত কাজ করছে! আমরা বারবার সাধারণ মানুষকে বলিনি যে এত কিছু করছি ভোটটা আমাদের দেবেন! তাই মানুষ বোধ হয় ধরেই নিয়েছেন যে আমরা ভারত সেবাশ্রম খুলে বসেছি। যে কোনও সমস্যায় এরা ঝাঁপিয়ে পড়বে, আর ভোটটা অন্য কাউকে দেবো! মানুষের 'সুনার বাংলা' আর 'জয় বাংলা' সেন্টিমেন্ট বেশি পছন্দ হয়েছে। ইতিমধ্যে অত্যাচার শুরু হয়ে গেছে! মানুষকে তো মারছেই, এমনকি একটা কুকুরকেও ওরা মেরেছে! এরপর যে আর কত কী হবে!"
বাদশা মৈত্রের কথায়, "আমার যেটা মনে হয়, পশ্চিমবাংলার মানুষ একটা সচেতন সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিজেপি-কে আটকানোর জন্য। সুতরাং যেই অংশ ভোট তৃণমূলের কাছে গেছে সেটা অনেকটাই বামেদের কাছে আসতো, কিন্তু তাঁরা মনে করেছেন যে শুধু মোর্চাদের দিয়ে কোনও ভাবে বিজেপি-কে আটকানো যাবে না। মালদা- মুর্শিদাবাদের মতো জায়গা যেটা কংগ্রেসের শক্ত ঘাঁটি ছিল, সেখানেও এই অবস্থা হয়েছে কারণ মানুষ মনে করেছেন এই নির্বাচন বিজেপি-কে আটকানোর একটা বড় ইস্যু। আর এটুকুই বলতে চাই এটা পার্ট অফ দ্য গেম। বামেদের যারা রাজনীতি করেন, তাঁরা তো শুধু সরকারে থাকার জন্য এই কাজে যোগ দেননি। যে ভাবে ছেলেমেয়েগুলো রাস্তায় নেমে কাজ করে যাচ্ছে, তাঁরা বুঝিয়ে দিয়েছে, যে আগামী দিনেও তাঁরা আরও বড় দায়িত্ব পালন করবে। সাময়িক মন খারাপ নিশ্চই হবে। কিন্তু যারা রাজনীতি করেন তাঁদের কাজে এটার কোনও প্রভাব পড়বে না এটুকু বলতে পারি।"