নটী বিনোদিনীর কাহিনি আসছে বড় পর্দায়। রামকমল মুখোপাধ্যায়ের (Ram Kamal Mukherjee) পরিচালনায় নটী বিনোদিনী হয়ে আত্মপ্রকাশ করছেন রুক্মিণী মৈত্র (Rukmini Maitra)। এই খবর মিলেছিল আগেই। গত সেপ্টেম্বর মাসে 'বিনোদিনী:একটি নটীর উপাখ্যান' (Binodini: Ekti Natir UpaKhyan) ছবির প্রথম লুক সামনে আসে। বলাই বাহুল্য, ছবির খবর চাউর হতেই, বাকি চরিত্রে কাদের দেখা যাবে, তা নিয়ে নানা জল্পনা শুরু হয়। এবার সমনে এল সেই তথ্য।
এই প্রথম বাংলা ছবি পরিচালনা করবেন রাম কমল মুখোপাধ্যায়। তিনি এই ছবি তৈরির কথা ঘোষণা করেছিলেন ২০১৯ সালে। কিন্তু অতিমারির জেরে, সব পরিকল্পনা পিছিয়ে যায়। তাঁর প্রথম বাংলা ছবি, নাট্যমঞ্চের অভিনেত্রী বিনোদিনী দাসীকে নিয়েই। বড় সেটের পিরিয়ড ড্রামা, তাই ছবির বাজেটও বড়। আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হবে শ্যুটিং।
দেবের, দেব এন্টারটেইনমেন্ট ভেঞ্চারস ও প্রতীক চক্রবর্তীর প্রমোদ ফিল্মসের প্রযোজনায় এবং অ্যাসোর্টেড মোশন পিকচার্সের সহযোগে আসছে এই ছবি। টলিউড ও মুম্বইয়ের একগুচ্ছ প্রতিভাবান অভিনেতাদের দেখা যাবে ছবিতে। 'বিনোদিনী:একটি নটীর উপাখ্যান'-এ গিরিশ চন্দ্র ঘোষের চরিত্রে অভিনয় করবেন কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় (Kaushik Ganguly)। বলিউড অভিনেতা রাহুল বোসকে (Rahul Bose) দেখা যাবে রাঙা বাবু চরিত্রে। অভিনেতা- রেডিও জকি মীর আফসার আলি (Mir Afsar Ali) রয়েছেন ব্যবসায়ী গুরমুখ রাইয়ের চরিত্রে। বিনোদিনীর মনের কাছের মানুষ ছিলেন কুমার বাহাদুর। এই চরিত্রে দেখা যাবে ওম সাহানিকে (Om Sahani)।
কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় জানালেন, "যখন রাম কমল আমায় গল্পটা বর্ণনা করেছিলেন, আমি অবাক হয়েছিলাম। ওঁর দৃষ্টিভঙ্গি সম্পূর্ণ ভিন্ন এবং এমন একটা ছবি তৈরি চেষ্টা করছেন যা, দেখতে খুব ভাল লাগবে। এখানে গিরিশকে বিনোদিনীর দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা যাবে, কোনও ছবিতে এভাবে দেখানো হয়নি আগে।"
রাহুল বোসের কথায়, "যখন গোটা বিশ্ব হিংসার কথা বলছে, খুব কমই কোনও নীরব প্রেমিকদের দেখতে পাই আমরা। রাঙা বাবু সেই মানুষটা যে, সব রকম পরিস্থিতিতে বিনোদিনীর পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। তাকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসতেন রাঙা বাবু। দেব একজন ভাল এবং খুব উদার মনের মানুষ। আমি ওঁর ছবিতে কাজ করতে পেরে খুশি। রাম কমল একজন সংবেদনশীল নির্মাতা। আমি নিশ্চিত যে, এই ছবি দর্শকদের ভাল লাগবে।"
বিনোদিনীর নিজের নামের একটি থিয়েটার করার স্বপ্নপূরণ করেছিলেন গুরমুখ রাই। নিজের চরিত্র নিয়ে মীর জানালেন, "রাম কমল আমায় এই গল্প শোনানোর পর একজন মানুষ হিসাবে আমি লজ্জিত। অবশ্যই আমি বিনোদিনী সম্পর্কে জানতাম, তবে তার দুঃখ-দুর্দশার গল্প, এতটা জানলাম না। তিনি বাংলা থিয়েটারকে অনেক কিছু দিয়েছেন এবং এখন সময় এসেছে তাঁর গল্প সকলের সামনে তুলে ধরার।"
ওম সাহানি বললেন, "যখন আমার কাছে এই চরিত্রের প্রস্তাব আসে, সে সময় আমি একটা নাটক দেখছিলাম । আমার আইডল দেবদার কাছ থেকে ফোনটা পেয়ে অবাক হয়েছিলাম। তিনি বাংলা সিনেমার সেরা সুপারস্টারদের একজন। চরিত্রটা আমার জন্য চ্যালেঞ্জিং। তবে আমি নিশ্চিত দর্শকেরা চমক পাবেন।"
পর্দার বিনোদিনী- রুক্মিণী মৈত্র জানালেন, "আমি এই চরিত্রটার জন্য গত এক বছর ধরে প্রস্তুতি নিচ্ছি। শুধু বাংলায় নয়, বলিউড ছবির অফারও ছেড়েছি কারণ, এই চরিত্রটা করার সময় আমি আমার ১০০ শতাংশ দিতে চেয়েছিলাম। সুদীপ্তা চক্রবর্তীর সঙ্গে ওয়ার্কশপ করা এবং পন্ডিত বিরজু মহারাজজির শিষ্য শৌভিকের কাছ থেকে কত্থকের প্রশিক্ষণ নেওয়া, সবটাই চলছে। রাম কমল চিত্রনাট্যটি এত আবেগপূর্ণভাবে তৈরি করেছেন যে, ছবিটার সঙ্গে দর্শকেররা কানেক্ট করতে পারবেন।"
অভিনেতা- প্রযোজক দেবের কথায়, "এটি বাংলা থিয়েটার এবং বিনোদিনী দাসীর ১৫০ বছরের প্রতি আমাদের বিনম্র শ্রদ্ধা। রাম কমল যখন এই কাজটার কথা বলেন, তখন আমার মনে হয় সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে এই গল্পটি বলা দরকার। এই বিষয়ে অত্যন্ত কঠোর পরিশ্রম করছেন রাম কমল, ওঁর ডেডিকেশন সত্যিই প্রশংসা করার মতো।"
'বিনোদিনী:একটি নটীর উপাখ্যান'-র গল্প এবং চিত্রনাট্য লিখেছেন প্রিয়াঙ্কা পোদ্দার। সিনেমাটোগ্রাফি করবেন সৌমিক হালদার। ছবির শিল্প নির্দেশনার দায়িত্বে রয়েছেন তন্ময় চক্রবর্তী। সঙ্গীত পরিচালনা করছেন সৌরেন্দ্র এবং সৌম্যজিৎ এবং গানের কথা লিখেছেন রাম কমল নিজেই।
নারী হয়েও শ্রীচৈতন্য-র চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন বিনোদিনী। তাঁর জীবনী নিয়ে তৈরি এই কাহিনির মূলেই রয়েছে বিনোদিনী দাসীর বর্ণময় জীবন, তাঁর বাংলার নাট্যমঞ্চে যাঁর দাপট আজও চর্চিত। ১৪৮ বছর আগের চরিত্রকে পর্দায় তুলে ধরাটা যতটা নস্ট্যালজিয়ার, ততটাই কঠিন কাজ। এখন দেখার এই চ্যালেঞ্জ কতটা ভাল করে নিতে পারে টিম 'বিনোদিনী:একটি নটীর উপাখ্যান'।