
তারকাদের সমীকরণ বোঝা খুবই কঠিন। এই আড়ি, আবার এই ভাব। যদিও লাইটস, ক্যামেরার সামনে তাঁরা যাই করেন, বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই সেটা 'ইমেজ' রক্ষার্থে। কোনও তারকার দুই প্রাক্তন বা প্রাক্তন- বর্তমানের সুসম্পর্ক যেমন দেখা যায়, আবার 'আদায় কাঁচকলায়' সম্পর্কও সকলের চোখে পড়ে টিনসেন টাউনে। প্রথমটির উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, রাজ চক্রবর্তীর দুই প্রাক্তন, মিমি চক্রবর্তী ও শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায়ের নাম। দ্বিতীয়টির উদাহরণ হিসাবেও উঠে আসে শুভশ্রীর নাম। এক্ষেত্রে দেবের 'প্রাক্তন' শুভশ্রী ও 'বর্তমান' রুক্মিণী মৈত্রর নাম। দু'জনের মধ্যে ঠাণ্ডা লড়াইয়ের বহু প্রমাণ আগেও মিলেছে। ফের শিরোনামে দুই নায়িকা।
দেব- শুভশ্রী হোক কিংবা রুক্মিণী- শুভশ্রীর ফ্যানেরা নেটদুনিয়ায় একেবারে দ্বিধাবিভক্ত। প্রায় চোখে পরে দু- পক্ষের বাকযুদ্ধ। সেরকমই দুই অভিনেত্রীর করা একই রকম মন্তব্য নিয়ে এবার শুরু হল জলঘোলা। এমনীতেই রুক্মিণীর পরে, এবার শুভশ্রীকে দেখা যাবে নটি বিনোদিনীর চরিত্রে। এখবর প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই চর্চার শেষ নেই। তবে এবার দুই নায়িকার মধ্যে কার ভক্তি বেশি, এই নিয়ে নেটমাধ্যমে শুরু হয়েছে অনুগামীদের মধ্যে যুদ্ধ। ঠিক কী ঘটেছে?
'নটি বিনোদিনী' মুক্তির আগে সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রুক্মিণী বলেছিলেন, "আমার নাম রুক্মিণী কারণ আমার গোটা পরিবার রাধা- কৃষ্ণের ভক্ত। কৃষ্ণের বউয়ের নামেই আমার নাম রাখা। ছোটবেলা থেকে আমি মায়াপুরে যাই। বাচ্চা-বাচ্চা মেয়েদের সেখানে গোপী ড্রেস পরে নাচতে দেখে, আমি চার বছর বয়সে বলতাম আমি সাধুদের মতো সাজব। আমি চৈতন্য মহাপ্রভুর গেরুয়া বেশে, ওরম সেজে দু'হাত তুলে লাফিয়ে লাফিয়ে হরে কৃষ্ণ কীর্তন করতাম, মায়াপুরের মন্দিরের মধ্যে। এটা ছিল আমার ছোটবেলা।"
এদিকে 'লহো গৌরাঙ্গের নাম রে' ছবির প্রচারের সময় সম্প্রতি শুভশ্রী এক সাক্ষাৎকারে বলেন, "ভগবানের আশীর্বাদ আমি বিশ্বাস করি আমার উপর সব সময় ছিল। ছোটবেলা থেকেই আমি ভীষণ আধ্যাত্মিক। আমার মনে আছে, যবে থেকে জ্ঞান হয়েছে, তখন থেকেই আমি মন্দিরে বসে থাকতাম। মানুষ ছোটবেলায় মা- বাবাকে মিথ্যে কথা বলে সিনেমা দেখতে বা বন্ধুর বাড়ি যেত। আমি মন্দিরে যেতাম।"
দুই নায়িকার ফ্যানেদের দাবি একে অপরকে 'কপি' করছেন তাঁরা। বিশেষত, যেহেতু রুক্মিণী আগে এই মন্তব্য করেছেন, তাই শুভশ্রীকেই বেশি কটাক্ষ করা হচ্ছে। কেউ অভিযোগ তুলেছেন, শুভশ্রী নাকি মিথ্যে কথা বলছেন, কারণ বেশ কিছু বছর আগে শাশ্বত চট্টোপধ্যায়ের শো, 'অপুর সংসার'-এ গিয়ে নাকি শুভশ্রী বলেছিলেন, বাড়িতে মিথ্যে বলে তিনি সিনেমা দেখতে গিয়েছেন। আবার কারও মন্তব্য, দু'জনের এই মন্তব্যের চিত্রনাট্যকার নাকি একই।
যদিও বহু বছর আগে রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'দিদি নম্বর ১'-এ তারকাদের স্পেশাল পর্বে শুভশ্রী সঙ্গে এসেছিলেন তাঁর মা। রচনা তাঁকে জিজ্ঞেস করেন, 'শুভ (শুভশ্রী) কেমন ছিল ছোটবেলায়?' উত্তরে তিনি হেসে বলেন, 'বলে লাভ নেই। শুভ একেবারে টম বয় ছিল।' এরপর নায়িকা নিজেই গল্প শুরু করেন, 'মা ছোটবেলায় মারতে পারত না কারণ আমি খুব সুন্দর করে মিথ্যে কথা বলতাম বানিয়ে বানিয়ে।' একথা শুনে হেসে খুন রচনা। শুভশ্রী আরও যোগ করেন, 'মাকে না বলেই হয়তো অনেক দূরে কোথাও চলে যেতাম। বাড়ি থেকে প্রায় ৯ কিলোমিটার দূরে একটা মন্দির ছিল, সেখানে যেতে আমি খুব ভালোবাসতাম। সবাই মিলে আমরা ওখানে যেতাম বাড়িতে না জানিয়ে। এদিকে সবাই খুঁজতে শুরু করেছে। আমি এসে ওখানে যে একটু বড়, তার দিকে দেখিয়ে দিতাম। ভাল মুখ করে, দোষ চাপিয়ে বলতাম আমায় ও বলেছে যেতে। আমি তো বলিনি। এবার আর বকতে পারত না।
সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের নতুন ছবি 'লহ গৌরাঙ্গের নাম রে'-তে বিনোদিনীর ভূমিকায় অভিনয় করছেন শুভশ্রী। স্বাভাবিকভাবে রুক্মিণীর সঙ্গে তাঁর তুলনা শুরু হচ্ছে। 'বিনোদিনী' বিতর্ক উঠতেই, এনিয়ে আগে মুখ খুলেছিলেন অভিনেত্রী। তিনি জানিয়েছিলেন,'২০২০ সালে সৃজিত প্রস্তাব নিয়ে এসেছিলেন। আমাদের অন্যরকম গল্প। রুক্মিণী খুব জুনিয়র। আমার বিনোদিনী দেখা হয়নি।' তাঁর এই মন্তব্য নিয়েও বেশ চর্চা হয়েছিল।
প্রসঙ্গত, বিনোদন জগতে কত সম্পর্ক ভাঙে -গড়ে। ঠিক সেরকমই এক জনপ্রিয় জুটি ছিল দেব -শুভশ্রী। দু'জনের অনুগামী সংখ্যাও ছিল বিপুল পরিমাণে। দীর্ঘদিন সম্পর্কে থাকার পর এই টলি কাপলের ব্রেকআপে বহু ফ্যানেদের মন ভেঙেছিল। সম্প্রতি 'ধূমকেতু' মুক্তির আগে প্রচারের সময় একসঙ্গে দেখা যায় 'দেশু' জুটিকে। তবে ছবি মুক্তি পেতেই ফের শুরু হয় দু'জনের ঠাণ্ডা লড়াই।