ফের নক্ষত্রপতন বিনোদন জগতে। প্রয়াত 'গীতশ্রী' সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় (Sandhya Mukherjee Passes Away)। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯০ বছর। মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭.৩০ নাগাদ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন কিংবদন্তি সঙ্গীতশিল্পী। এদিন অনিয়মিত হৃদস্পন্দন হওয়ার জেরে শারীরিক অবস্থার অবনতি হয় তাঁর। সঙ্কটজনক শিল্পীকে স্থানান্তরিত করা হয় আইসিইউতে। কিন্তু শেষ রক্ষা হল না। তাঁর প্রয়াণে শোকের ছায়া নেমে এসেছে সমগ্র শিল্পীমহলে।
সঙ্গীতশিল্পী মানসী মুখোপাধ্যায় (Manashi Mukherjee) বললেন, "সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের চলে যাওয়া আমার কাছে একটা পারিবারিক ক্ষতি। আমার বাবা শ্রদ্ধেয় মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের সুরে বহু গান গেয়েছেন সন্ধ্যা কাকিমা। সেই গানের মধ্যে যেমন আছে ব্যাসিক গান, তেমন আছে ছায়াছবি, আকাশবাণি বা মুক্তিযুদ্ধের গান। বাবা এবং তাঁর বয়স প্রায় কাছাকাছি হওয়া সত্ত্বেও, গানকে ভিত্তি করে তাঁদের একে অপরের প্রতি অগাধ শ্রদ্ধা ছিল। আমার বাবার সুরেই 'জয় জয়ন্তী' ছবির গান তৈরি হয়েছিল। আর এই গান গেয়েই তিনি জাতীয় পুরস্কার পান।"
আরও পড়ুন: ওঁর সঙ্গে ছবিতে গান গেয়েছি, আরও একবার যেন মাতৃবিয়োগ হল: সৈকত মিত্র
তিনি আরও বলেন, "একটা অদ্ভুত সুন্দর পরিবেশ ছিল আমাদের দুটো পরিবারের মধ্যে, সবটাই গানকে কেন্দ্র করে। কখনও সন্ধ্যা কাকিমার বাড়িতে গান তৈরি হচ্ছে, কখনও আমাদের বাড়িতে...ছোট থেকেই বড় হয়েছি এই পরিবেশে। ওঁদের দু'জনের দ্বৈতসঙ্গীত যারা শোনেননি, তাঁরা মিস করেছেন। এক একটা দাগ কাটা ঘটনা রয়েছে, যে ঘটনা ঘিরে শ্যামল গুপ্ত, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, আমার বাবা -মা সকলের অনেক স্মৃতি রয়েছে...কীভাবে কোন গান রেকর্ড হয়েছে, কীভাবে বারবার সুর হতে হতে কোন গান তৈরি হয়েছে, এগুলো চোখের সামনে দেখা। এগুলো সহজে ভোলার নয় এবং এই শিল্পীরা যুগ যুগ ধরে থেকে যাবেন, এই শিল্পীদের কখনও মৃত্যু হয় না। একটা বিরাট যুগের অবসান। সত্যিই আমার বলার ভাষা নেই..."
উস্তাদ রাশিদ খান (Ustad Rashid Khan) জানালেন, "ছোটবেলা থেকেই সন্ধ্যা দিদিকে দেখেছি, ওঁর গান শুনেছি। গান-বাজনা তো ছিলই, সেই সঙ্গে ওঁর ব্যবহার এত ভাল যে, কী বলব। সন্ধ্যা দি-এর মতো এত ভাল গান বোধ হয় আর কেউ করতে পারবেন না, এরকম ভাল শিল্পী হয়তো আর হবে না। খবরটা শুনে খুব কষ্ট পেয়েছি...আমি উপরওয়ালার কাছে দোয়া করব যেন ওঁর আত্মা শান্তিতে থাকে।"
আরও পড়ুন: সন্ধ্যাদি ফোন করে গান শোনাতেন, জিজ্ঞেস করতেন বেসুরো হয়নি তো: হৈমন্তী শুক্লা
সঙ্গীতশিল্পী সোমলতা আচার্য্য চৌধুরীর (Somlata Acharyya Chowdhury) কথায়, "কী বলব বুঝতে পারছি না। এক-দু সপ্তাহের মধ্যেই সঙ্গীত জগতের দুই কিংবদন্তী শিল্পীকে আমরা হারালাম। যে শূন্যতা তৈরি হল, আমার মনে হয় না তা কোনও দিনও পূরণ হবে। আমরা জানি যে মৃত্যুটা সবচেয়ে বড় সত্যি, সকলকেই একদিন না একদিন যেতে হবে। দুই শিল্পরই বয়স হয়েছিল, দু'জনেই অসুস্থ ছিলেন, কষ্ট পাচ্ছিলেন...সবটা জানি, তাও যখন সত্যিটা সামনে আসে, এটা কোথাও গিয়ে মানতে পারি না। আমার ব্যক্তিগতভাবে দুই শিল্পীর চলে যাওয়াটাই মানতে কষ্ট হচ্ছে।"
আরও পড়ুন: 'দিদির মতো ছিলেন, ব্য়ক্তিগত ক্ষতি,' সন্ধ্যার স্মৃতিচারণায় মমতা
প্রসঙ্গত, কিছুদিন আগেই কেন্দ্রের পদ্মশ্রী পুরস্কার সম্মান প্রত্যাখ্যান করেছিলেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় । ৯০ বছর বয়সে পদ্ম সম্মান পাওয়ার কথা শুনে কিছুটা মর্মাহত হন নবতীপর শিল্পী, এমনটাই শোনা যায়। কিংবদন্তী গায়িকাকে কেন্দ্রের এই পদ্মশ্রী দেওয়া নিয়ে শিল্পীমহলে ঝড় ওঠে।
আরও পড়ুন: এই গানগুলির জন্য চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্য়ায়, দেখুন
১৯৭০ সালে প্লেব্যাক সিঙ্গার হিসেবে জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিলেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাঁকে ২০১১ সালে 'বঙ্গবিভূষণ', ২০১২ সালে 'সঙ্গীত মহাসম্মান' ও ২০১৫ সালে 'ওস্তাদ বড়ে গোলাম আলি বিশেষ সঙ্গীতসম্মান' প্রদান করে। এছাড়া তিনি ভারত নির্মাণ অ্যাওয়ার্ড, ন্যাশনাল ফিল্ম অ্যাওয়ার্ড, বিএফজেএ অ্যাওয়ার্ড সহ বহু সম্মানে ভূষিত হন। তিনি আমৃত্যু পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সঙ্গীত একাদেমীর সভাপতিও ছিলেন।