শ্রদ্ধা ওয়ালকারকে খুনের অভিযোগে গ্রেফতার আফতাব আমিন পুনাওয়ালা। যেভাবে শ্রদ্ধাকে খুন ও নৃশংসতার সঙ্গে তাঁর দেহ লোপাটের চেষ্টা করেছে আফতার তা নাড়িয়ে দিয়েছে গোটা দেশকে। অভিযুক্তকে জিজ্ঞাসাবাদ করে প্রতিদিনই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসছে তদন্তকারীদের হাতে। গত ১৩ নভেম্বর থেরে পুলিশের হেফাজতে রয়েছে আফতাব। অত্যন্ত শান্ত মাথায় তদন্তকারীদের প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে সে। আফতাবের বয়ানের ভিত্তিতে পুলিশ এখনও পর্যন্ত পর্যন্ত শ্রদ্ধার দেহের ১০টি অংশ উদ্ধার করেছে। সেইগুলি মূলত শিড়দাঁড়া ও তার নিচের দিকের অংশ। এছাড়া বাড়ির রান্নাঘরে প্লেটে রক্তের দাগও পেয়েছে পুলিশ। সেই রক্ত কার, তা জানতে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। এবার চলুন জেনে নেওয়া যাক আফতাবকে কী কী প্রশ্ন করেছেন তদন্তকারীরা। আর তার উত্তরে কী জানিয়েছে সে।
পুলিশ - কবে ও কীভাবে শ্রদ্ধাকে খুন করা হয়েছে?
আফতাব - ১৮ মে বুধবার রাতে শ্রদ্ধার সঙ্গে ঝগড়া হয়। ঝগড়া এর আগেও হয়েছে। কিন্তু ওই দিন বাড়াবাড়ি হয়। আমাদের মধ্যে হাতাহাতি হয়। এরপর শ্রদ্ধাকে আমি মেঝেতে ফেলে দিই। তারপর ওর বুকের ওপর বসে গলা টিপতে থাকি। একটু পরেই ও মারা যায়।
পুলিশ - এরপর দেহটার কী করা হয়?
উত্তর - ওই রাতে শ্রদ্ধার দেহ টেনে বাথরুমে নিয়ে যাই। সারা রাত দেহ ওখানেই ছিল।
পুলিশ - দেহ টুকরো টুকরো কীভাবে ও কবে করা হয়েছে?
আফতাব - ১৯ মে বাজারে যাই। লোকাল মার্কেট থেকে ৩০ লিটারের একটি ফ্রিজ কিনি। কীর্তি ইলেক্ট্রিক শপ থেকে। অন্য দোকান থেকে করাত কিনি। ফের বাড়ি ফিরে আসি। রাতে ওই বাথরুমেই করাত দিয়ে দেহ টুকরো করতে শুরু করি। আমি কিছুদিন শ্যেফের চাকরি করেছিলাম। তার আগে প্রায় ২ সপ্তাহের ট্রেনিং নিয়েছিলাম। সেই সময় চিকেন ও মাটন কাটার ট্রেনিং পেয়েছিলাম। ১৯ মে দেহের কিছু টুকরো করি। ওগুলো পলিথিনে ভরি। তারপর পলিথিন-সহ ফ্রিজের ফ্রিজারে রেখে দিই। দেহের বাকি অংশ ফ্রিজের নিচের অংশে ছিল।
পুলিশ - কতদিন ধরে দেহ টুকরো করা হয়?
আফতার - ২ দিন, ১৯ ও ২০ মে।
পুলিশ - কবে থেকে দেহ লোপাট শুরু হয়?
আফতাব - ১৯ ও ২০-র রাতে প্রথমবার কিছু টুকরো ফ্রিজার থেকে বের করে ব্যাগে ভরেছিলাম। প্রথম রাতে ব্যাগে কম টুকরো ভরেছিলাম। কারণ রাতে দেহের টুকরোগুলি নিয়ে বেরোতে ভয় পাচ্ছিলাম, পাছে পুলিশ তল্লাশি নেয়।
পুলিশ - প্রথমবার দেহের টুকরো কোথায় ফেলা হয়?
আফতাব - ১৯ ও ২০ মে-র রাতে মহরৌলির সঙ্গেল টুকরো ফেলেছিলাম। তবে জঙ্গলের বেশি ভেতরে যাইনি।
পুলিশ - কতদিন ধরে দেহের টুকরো লোপাট করা হয়?
আফতাব - ঠিক মনে নেই। তবে কমপক্ষে ২০ দিন ধরে দেহের টুকরো ফেলেছিলাম।
পুলিশ - দেহের টুকরো কোথায় কোথায় ফেলা হয়েছে?
আফতাব - আমি শুধু ছতরপুর ও মহরৌলির আশেপাশেই যেতাম। বেশি দূর গেলে ধরা পড়ে যাওয়ার ভয় ছিল।
পুলিশ - সেই জায়গাগুলো মনে আছে?
আফতাব - না, তবে কয়েকটি জায়গা মনে আছে। রাতে অন্ধকার থাকতো, তাই সমস্ত ঠিকানা পুরোপুরি মনে নেই।
পুলিশ - ২০ দিন ধরে বাড়িতে দেহ ও দেহের টুকরো ছিল। এই সময় তোমার রুটিন কী ছিল?
আফতাব - যেহেতু বাড়িতে লাশ ছিল, তাই বাইরেই বেরোতামই না। কোনও প্রতিবেশীর সঙ্গে কথা বলতাম না। বারবার ফ্রিজারে রাখা দেহের টুকরো ও ফ্রিজের নিচে রাখা দেহের টুকরোগুলির মধ্যে স্থান পরিবর্তন করতাম, যাতে দুর্গন্ধ না বের হয়। বাড়ি, মেঝে ও বাথরুম কেমিক্যাল দিয়ে পরিষ্কার করতাম।
পুলিশ - সম্পূর্ণ দেহ লোপাটের পর কী করেছ?
আফতাব - আবার গোটা বাড়ি পরিষ্কার করি। ফ্রিজ ফাঁকা হওয়ার পর সেটিও কেমিক্যাল দিয়ে ভালভাবে পরিষ্কার করি। বাথরুম, মেঝে, দেওয়াল, চাদর, পোশাক সবকিছু ভাল করে ধুয়ে পরিষ্কার করি।
পুলিশ - এত পরিষ্কার কেন করেছ?
আফতাব - একে তো ঘর থেকে দেহের গন্ধ বেরতো। দ্বিতীয়ত আমি নিশ্চিত হতে চাইতাম যে, ঘরের মধ্যে যেন রক্ত বা মাংসের কোনও প্রমাণ না থাকে। আমি জানতাম কখনও না কখনওই এই সত্য প্রকাশ্যে আসবে এবং বাড়ি ও ফ্রিজ পরীক্ষা হবে। তাই নিজের তরফে সমস্ত প্রমাণ ধুয়ে দিই।
পুলিশ - যাকে তুমি ভালবাসতে তার দেহের সঙ্গে এমনটা করার আগে একবারও ভাবনি?
আফতাব - না, আমার রাগ হয়েছিল। তাই আমি শ্রদ্ধাকে মেরে ফেলেছিলাম। কিন্তু আমি চাইতাম না যে ওর মৃত্যুর সত্য বাড়ির বাইরে যাক। শ্রদ্ধার বাড়ির লোকেরাও ওর থেকে দূরে থাকতো। ওর নিজের বাড়ির লোকদের সঙ্গেই কথা হত না। আমি জানতাম ওকে কেউ খুঁজতে আসবে না। তাই দেহ এভাবে লোপাট করা জরুরি ছিল, আর আমি সেটাই করি।
আরও পড়ুন - মুলো হার্ট-কিডনির জন্য বিপজ্জনক হতে পারে, কেন?