যে গতিতে উপকূলের দিকে এগিয়ে চলেছে ঘূর্ণিঝড় মন্থা (Cyclone Montha), তাতে আজই রাতের দিকে ল্যান্ডফলের সম্ভাবনাই প্রবল। যখন এই ঝড় উপকূলে ঢুকবে, তখন এর সর্বোচ্চ গতিবেগ হয়ে যাবে ১১০ কিমি প্রতি ঘণ্টা। আজ অর্থাত্ মঙ্গলবার রাতেই সম্ভবত অন্ধ্রপ্রদেশের কাকিনাড়ার কাছে ল্যান্ডফল করবে। ইতিমধ্যেই ঝোড়ো হাওয়া ও বৃষ্টি শুরু হয়ে গিয়েছে।
IMD জানাচ্ছে, মূলত অন্ধ্রপ্রদেশের উপকূলে তাণ্ডব চালাবে এই সাইক্লোন। যার জেরে, অন্ধ্র, ওড়িশা উপকূলে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে প্রশাসন। মত্স্যজীবীরা সব নৌকা নিয়ে মাঝ সমুদ্র থেকে ফিরে এসেছেন।
বিশেষ করে মছলিপত্তনম ও কলিঙ্গপত্তনমের উপকূলে বাড়তি সতর্কতা রয়েছে। কাকিনাড়া, তিরুপতি ও চিত্তুর জেলায় উপকূলীয় এলাকা থেকে সবাইকে সরিয়ে নিরাপদ জায়গায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
অন্ধ্রপ্রদেশের কাকিনাড়া জেলায় সোমবার প্রবল হাওয়ার দাপটে উপকূলজুড়ে তাণ্ডব। উপ্পাড়া উপকূলে দেখা যাচ্ছে উত্তাল সমুদ্রের ঢেউ। জলোচ্ছ্বাসে সমুদ্রের জল ভিতরের দিকে ঢুকে পড়ায় বেড়েছে উপকূল ভাঙন, আতঙ্ক ছড়িয়েছে মত্স্যজীবী মহলে।
সমুদ্রের জল আরও ভিতরে ঢুকে পড়তে শুরু করায় উপ্পাদা, সুব্বমপেট, মায়াপত্তনম ও সুরাদাপেট এলাকা থেকে একাধিক পরিবারকে সরিয়ে দিয়েছে পুলিশ ও বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী।
তিরুপতির প্রশাসন জানিয়েছে, উপকূলে ৭৫ কিলোমিটার জুড়ে ব্যাপক বৃষ্টি ও সঙ্গে ঝোড়ো হাওয়া চলবে। বেলা যত গড়াবে, বৃষ্টির পরিমাণ ততই বাড়বে।
বাড়তি সতর্কতা ওড়িশা উপকূলেও। কারণ এই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব পড়ছে ওড়িশাতেও। মালকানগিরি, কোরাপুট, নবরঙ্গপুর, রায়াগড়া, গজপতি, কন্ধমলে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। ওড়িশার রাজস্ব ও বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের মন্ত্রী সুরেশ পূজারীর কথায়, 'আমাদের টার্গেট প্রাণহানি শূন্য।'
ওড়িশা সরকার জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় রাজ্যজুড়ে মোট ১,৪৪৫টি সাইক্লোন শেল্টার খুলে দেওয়া হয়েছে এবং প্রস্তুত রাখা হয়েছে ১৪০টি উদ্ধারকারী দল।
এই দলগুলির মধ্যে রয়েছে এনডিআরএফ, ওডিআরএএফ এবং দমকল বিভাগের সদস্যরা। বিশেষ নজর রাখা হচ্ছে গজপতি জেলার পার্বত্য এলাকাগুলিতে, যেখানে ভূমিধসের আশঙ্কা রয়েছে।
এবার আসা যাক পশ্চিমবঙ্গের খবরে। IMD জানিয়েছে, মঙ্গলবার থেকে দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলায় ভারী বৃষ্টি ও বজ্রঝড়ের আশঙ্কা রয়েছে।
বিশেষ করে কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুরে ঝোড়ো হাওয়ার দাপটে পরিস্থিতি জটিল হতে পারে। বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৮০ থেকে ৯০ কিলোমিটার পর্যন্ত পৌঁছতে পারে বলে সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
সমুদ্রে না নামার জন্য মত্স্যজীবীদের কড়া নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার উপকূল এলাকায় পুলিশ ইতিমধ্যেই মাইকিং শুরু করেছে, সোমবার সন্ধ্যার মধ্যেই ট্রলারগুলি ঘাটে ফিরে আসার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসনগুলি কন্ট্রোলরুম খুলেছে এবং ত্রাণসামগ্রী মজুত রাখার কাজ শুরু হয়েছে।
উত্তরবঙ্গে ২৯ অক্টোবর থেকে বৃষ্টির পরিমাণ বাড়বে বলে পূর্বাভাস। ঘূর্ণিঝড় স্থলভাগে ঢোকার পর উত্তরবঙ্গেও এর প্রভাব পড়বে। ফসলের ক্ষতি এড়াতে কৃষি দফতর চাষিদের দ্রুত আমন ধান কাটার পরামর্শ দিয়েছে।