প্রবল ঘূর্ণিঝড় থেকে ইতিমধ্যেই শক্তি হারিয়ে সাধারণ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে 'মন্থা'। তবে এখনও কমেনি প্রভাব। নাগাড়ে চলছে ঝোড়ো হাওয়া ও বৃষ্টি। বাংলাতেও এই সাইক্লোনের প্রভাবে বৃষ্টি শুরু হয়েছে মঙ্গলবার রাত থেকে। বুধবার সকালে কলকাতা এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনা জুড়ে হাল্কা থেকে মাঝারি বৃষ্টি চলছে।
মন্থার দাপটে অন্ধ্রের কোণাসীমা এলাকায় এক মহিলার মৃত্যুর খবর মিলেছে। ঝড়ের দাপটে একটি গাছ উপড়ে তাঁর বাড়ির উপরে পড়লে এই দুর্ঘটনা ঘটে। একই এলাকায় নারকেল গাছ উপড়ে এক নাবালক এবং একজন অটোচালক গুরুতর জখম হয়েছেন বলে জানা গিয়েছে।
আগাম সতর্কতা হিসেবে বিশাখাপত্তনম বিমানবন্দরে ৩২টি, বিজয়ওয়াড়ায় ১৬টি এবং তিরুপতিতে ৪টি ফ্লাইট বাতিল হয়েছে। বাতিল করা হয়েছে ১২০টি ট্রেনও।
অন্ধ্রে ৮০০-রও বেশি ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে। ত্রাণ ও উদ্ধারকাজে মোতায়েন রয়েছে NDRF ও SDRF। রাজ্যের ২২টি জেলায় ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিপর্যয় মোকাবিলার জন্য তৈরি রাখা হয়েছে ১৪৪৭টি আর্থমুভার, ৩২১টি ড্রোন, ১০৪০টি চেইন করাত।
IMD বুধবার সকাল ৯টার ওয়েদার বুলেটিনে জানিয়েছে, 'মন্থা' গত ৬ ঘণ্টায় শক্তি হারিয়ে উত্তর এবং উত্তর পশ্চিমদিকে অগ্রসর হয়েছে ১৫ কিমি প্রতি ঘণ্টা গতিতে।
সাইক্লোনটির বর্তমান অবস্থান (সকাল ৫.৩০) অন্ধ্রপ্রদেশের নারসাপুর থেকে ৮০ কিমি উত্তর পশ্চিমে, কাকিনাড়া থেকে ১০০ কিমি পশ্চিমে, মথলিপটনম থেকে ৯০ কিমি উত্তরে, বিশাখাপত্তনম থেকে ২৩০ কিমি পশ্চিম ও দক্ষিণ পশ্চিমে এবং ওড়িশার গোপালপুর থেকে ৪৬০ কিমি দক্ষিণ পশ্চিমে।
আগামী ৩ ঘণ্টায় (সকাল ৯টা থেকে) ঘূর্ণিঝড় মন্থা উত্তর ও উত্তর পশ্চিম দিকে অন্ধ্র ও তেলঙ্গানা উপকূলে অগ্রসর হবে। তারপর এটি আরও শক্তিক্ষয় করে পরিণত হবে একটি গভীর নিম্নচাপে। পরবর্তী ৩ ঘণ্টায় সেটি পরিণত হবে নিম্নচাপে।
প্রবল ঝড়বৃষ্টির কারণে ওড়িশায় বৃহস্পতিবার পর্যন্ত স্কুল বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার ওড়িশার উপকূলবর্তী জেলাগুলিতে শুরু হয় ঝড়বৃষ্টি। সেখানে ১৫টি জেলায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়েছে।
দক্ষিণ মধ্য রেলের সিপিআরও জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে দুর্যোগের কারণে এখন পর্যন্ত ১২২টি ট্রেন বাতিল করা হয়েছে। বেশির ভাগই বিজয়ওড়া এবং বিশাখাপত্তনম থেকে ছাড়ার কথা ছিল। আরও বহু ট্রেনের সময় পরিবর্তন করা হয়েছে।
অন্ধ্রের বিশাখাপত্তনম, বিজয়ওয়াড়া, রাজামুন্দ্রি এবং তেলঙ্গানার শামশাবাদ বিমানবন্দর থেকে প্রায় ৩৫টি বিমানের উড়ান বাতিল হয়েছে ঝড়বৃষ্টির কারণে।
ঘূর্ণিঝড় মান্থার প্রভাব পড়েছে পশ্চিমবঙ্গেও। ভোর থেকেই শুরু হয়েছে বৃষ্টি। ঝড় এ রাজ্যে হয়নি। তবে বুধবার ভোর সাড়ে ৫টার পর থেকে হাওড়া, হুগলি, দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুরের কিছু এলাকায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হয়েছে।
আবহাওয়া দফতর জারি করেছে হলুদ সতর্কতা। বাতাসের গতিবেগ প্রতি ঘণ্টায় ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার থাকতে পারে বলে জানানো হয়েছে।
হাওয়া অফিস আরও জানিয়েছে, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর, হাওড়া, দুই চব্বিশ পরগনা ও ঝাড়গ্রামে বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি চলবে। উপকূলের জেলাগুলিতে মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে নামতে নিষেধ করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবারও দক্ষিণবঙ্গের বেশ কিছু জেলায় বৃষ্টি চলবে। বীরভূম, মুর্শিদাবাদ, পূর্ব বর্ধমান ও পুরুলিয়ায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে আলিপুর আবহাওয়া দফতর। শনিবার থেকে আবহাওয়ার উন্নতি শুরু হবে। তবে ততদিন পর্যন্ত দক্ষিণবঙ্গের প্রায় সব জেলাতেই আংশিক মেঘলা আকাশ ও বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি চলতে পারে।