শনিবার সন্ধ্যায় লালকেল্লার সামনে ভয়াবহ বিস্ফোরণে কেঁপে উঠল রাজধানী দিল্লি। সন্ধ্যা ৬টা ৫২ থেকে ৭টা ১৫ মিনিটের মধ্যে এই বিস্ফোরণ ঘটে লালকেল্লা মেট্রো স্টেশনের ১ নম্বর গেটের কাছে। একটি ধীরগতির হুন্ডাই i20 গাড়ি ট্র্যাফিক সিগন্যালে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণটি ঘটে।
মুহূর্তের মধ্যেই আগুনে পুড়ে ছারখার হয়ে যায় গাড়িটি। চারপাশে থাকা আরও ৩ থেকে ৮টি গাড়ি এবং কয়েকটি অটো রিকশাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিস্ফোরণের তীব্রতায় রাস্তায় ছিটকে পড়ে ধ্বংসাবশেষ ও দগ্ধ দেহাংশ। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, “একটা ভয়াবহ শব্দ হয়, তারপর আগুনের শিখা আকাশ ছুঁতে থাকে।”
প্রাথমিক খবর অনুযায়ী, বিস্ফোরণে ৮ থেকে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে, কিছু সূত্রে ১৩ জনের মৃত্যুর আশঙ্কা করা হচ্ছে। আহত হয়েছেন ২৪ থেকে ৩০ জন, যাঁদের মধ্যে বহুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। আহতদের দ্রুত লোকনায়ক জয়প্রকাশ (LNJP) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
দিল্লি পুলিশ, দমকল, ন্যাশনাল সিকিউরিটি গার্ড (NSG), ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (NIA), অ্যান্টি টেরর স্কোয়াড, ফরেনসিক টিম এবং দিল্লি পুলিশের স্পেশাল সেল ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায় মুহূর্তের মধ্যেই। প্রায় ২০টি দমকল ইঞ্জিন আগুন নেভানোর কাজে নামে। গোটা এলাকা ঘিরে ফেলে পুলিশ।
দিল্লি পুলিশ কমিশনার সতীশ গোলচা জানিয়েছেন, ধীরগতিতে চলা গাড়ির ভিতরেই বিস্ফোরণটি ঘটে। এখনো পর্যন্ত বিস্ফোরণের কারণ নিশ্চিত নয়। তবে প্রাথমিকভাবে আইইডি বিস্ফোরণ বা সিএনজি সিলিন্ডার ফাটার সম্ভাবনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
বিস্ফোরণের সময় আশেপাশের বাজারে প্রচুর ভিড় ছিল। বিয়ের মরশুম হওয়ায় রাস্তা ছিল লোকজনে ঠাসা। ফলে আতঙ্কে হুড়োহুড়ি পড়ে যায় এলাকায়। দ্রুত ঘটনাস্থল সিল করে দেয় পুলিশ।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ঘটনার বিষয়ে বিস্তারিত রিপোর্ট পেয়েছেন এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ-এর সঙ্গে কথা বলেছেন। অমিত শাহ দিল্লি পুলিশ কমিশনার এবং ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোর আধিকারিকদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। ঘটনার পর শুধু দিল্লিই নয়, আশেপাশের সীমান্ত এলাকাতেও জারি হয়েছে উচ্চ সতর্কতা (High Alert)। নজরদারি শুরু হয়েছে শহরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে।
পাশাপাশি, এই ঘটনার কয়েক ঘণ্টা আগেই হরিয়ানায় বিপুল পরিমাণ অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট ও অস্ত্র উদ্ধার হয়, যা সম্ভাব্য জঙ্গি চক্রের সঙ্গে যুক্ত বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। তদন্তকারীরা খতিয়ে দেখছেন, দুই ঘটনার মধ্যে কোনও যোগ রয়েছে কি না। এনআইএ, এনএসজি এবং ফরেনসিক সায়েন্স ল্যাবের যৌথ টিম রাতভর তদন্ত চালাচ্ছে। সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বিস্ফোরণের স্থল আপাতত সিল করা রয়েছে এবং যান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। এই মর্মান্তিক গাড়ি বিস্ফোরণে শোকস্তব্ধ গোটা দিল্লি। রাজধানীজুড়ে এখন কড়া নিরাপত্তা এবং আতঙ্কের আবহ।