৭ মে, মঙ্গলবার। সারা দেশে একসঙ্গে বেজে উঠবে এয়ার রেড সাইরেন। আকাশে সেই কর্কশ শব্দ শুনেই মানুষ বুঝে যাবেন, যুদ্ধের মহড়া শুরু হয়েছে। যুদ্ধ নয় ঠিকই, কিন্তু যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে ভারত। আর তারই অঙ্গ এই সর্বভারতীয় সিভিল ডিফেন্স মহড়া।
১৯৭১ সালের যুদ্ধের পর এই প্রথমবার এভাবে দেশজুড়ে যুদ্ধ প্রস্তুতির মহড়া হচ্ছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের নির্দেশে এই মহড়া হবে দেশের ২৪৪টি জেলার মধ্যে। এর মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের একাধিক জেলা যেমন নদিয়া, মালদা, দার্জিলিং, কলকাতা, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনাতেও এই মহড়া হবে।
সম্প্রতি কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে ভয়াবহ জঙ্গি হামলায় মৃত্যু হয় ২৬ জন নিরীহ পর্যটকের। আহত হন বহু মানুষ। নিহতদের মধ্যে ছিলেন এক নেপালি নাগরিকও। কেন্দ্রের দাবি, এই হামলার পেছনে ছিল পাকিস্তান মদতপুষ্ট জঙ্গি গোষ্ঠী। তারপর থেকেই সীমান্তে চরম উত্তেজনা। ১১ রাত ধরে লাগাতার গুলি চালাচ্ছে পাকিস্তানের সেনা, পালটা জবাব দিচ্ছে ভারতও।
এই পরিস্থিতির মধ্যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বারবার বলেছেন, 'জঙ্গিদের খুঁজে বার করে এমন শাস্তি দেওয়া হবে, যা তারা কল্পনাও করতে পারবে না।' সেনাবাহিনীকে দেওয়া হয়েছে পূর্ণ স্বাধীনতা—জবাব দেওয়ার সময়, পদ্ধতি ও লক্ষ্য ঠিক করবে তারা নিজেই। এই উত্তেজনার আবহেই শুরু হচ্ছে যুদ্ধকালীন প্রস্তুতির মহড়া।
এই মহড়া শুধু একটি ‘অনুশীলন’ নয়, এর মাধ্যমে একাধিক বিষয় পরীক্ষা করে দেখা হবে। এয়ার রেড সাইরেন বাজানো — যুদ্ধ পরিস্থিতির আগে যেভাবে শহর বা গ্রামে মানুষকে সতর্ক করা হয়, সেই ব্যবস্থা চালু করা হবে। বিমানবাহিনীর সঙ্গে রেডিও ও হটলাইন যোগাযোগ চালু করে পরীক্ষা করা হবে। কন্ট্রোল রুম ও শ্যাডো কন্ট্রোল রুম চালু করে রাখা হবে, যাতে যেকোনও পরিস্থিতিতে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়।
সাধারণ মানুষ ও পড়ুয়াদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে—যুদ্ধ বা হামলা হলে কোথায় আশ্রয় নেবেন, কীভাবে রক্ষা করবেন নিজেকে। ব্ল্যাকআউট বা সম্পূর্ণ আলো নিভিয়ে রাখার মহড়া—শত্রুর বিমান হামলা ঠেকাতে রাতের শহর অন্ধকার রাখার প্রস্তুতি।
গুরুত্বপূর্ণ কারখানা ও স্থাপনাগুলি ক্যামোফ্লাজ করা—যাতে সেগুলো বাইরে থেকে বোঝা না যায়। বাংকার, ট্রেঞ্চ বা গর্ত পরিষ্কার ও রেডি রাখা—আপাতত যেখানে আশ্রয় নেওয়া যাবে।
১৯৭১ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময় দেশজুড়ে এই ধরনের মহড়া হয়েছিল। যুদ্ধের সময় কীভাবে সাধারণ মানুষ নিজেদের রক্ষা করবেন, তা শেখানো হয়েছিল সেসময়। এবারও ঠিক সেই ধরনের প্রস্তুতি।
এই মহড়া নিয়ে অনেকের মধ্যেই ভয় বা গুজব ছড়াতে পারে। কেউ বলছেন, যুদ্ধ লাগতে চলেছে, কেউ বলছেন বিমান হামলা হবে। কিন্তু সরকার বারবার জানাচ্ছে—এটি একটি অনুশীলন মাত্র। যুদ্ধ বাধুক বা না বাধুক, প্রস্তুত থাকা আবশ্যক। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এক কর্তা জানিয়েছেন, 'আজকের দিনে যুদ্ধ শুধু সীমানার মধ্যে হয় না। সাইবার যুদ্ধ, মানসিক যুদ্ধ, এবং নাগরিক পরিকাঠামোর ওপরও হামলা হতে পারে। সেই জন্যই এই মহড়া।'
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তরফে প্রতিটি জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে মহড়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে। স্কুল, কলেজে সচেতনতা শিবির হবে। সিভিল ডিফেন্স, দমকল, পুলিশ বাহিনী সক্রিয়ভাবে অংশ নেবে। কলকাতায় পুরসভা ও বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরও এই মহড়ায় যুক্ত থাকবে।
যেদিন সাইরেন বাজবে, আতঙ্কিত হবেন না। প্রশাসনের দেওয়া নির্দেশ মেনে চলুন। শেখানো কৌশলগুলি মন দিয়ে শুনুন—যেমন কীভাবে মাথা ঢাকবেন, কোথায় আশ্রয় নেবেন, কীভাবে জলের বোতল, ওষুধ, টর্চ সঙ্গে রাখবেন। কোনও গুজব ছড়াবেন না এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভ্রান্তিকর পোস্ট শেয়ার করবেন না।