২০২৩ সালের ২ মার্চ কেরলের কোচির বন্দর শহর ব্রহ্মপুরম এলাকায় একটি আবর্জনা কারখানায় আগুন লেগেছিল। এরপর থেকে আগুন নেভানো যাচ্ছে না। আবর্জনা পুড়ে যে ধোঁয়া বের হচ্ছে তা বিষাক্ত। পুরো শহর এই বিষাক্ত ধোঁয়ার দখলে। যার কারণে মানুষের শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। ধোঁয়ার কারণে চোখে জ্বালাপোড়া হচ্ছে। মানুষ এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় এনিয়ে নানা অভিযোগ করছে।
কেরল হাইকোর্টের বিচারপতি এস ভি ভাট্টি এবং বসন্ত বালাজি সরকার ও প্রশাসনকে এই ঘটনায় তিরস্কার করেছেন। আদালত বলেছে, শহরটি গ্যাস চেম্বারে পরিণত হয়েছে। এই চেম্বারে আটকে আছে কোচির মানুষ। যত দ্রুত সম্ভব আগুন নেভাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আদালত বলেছে, 'এই শহরে আর কোনও শিল্প নেই, এমন তো অবস্থা নয়। হায়দরাবাদ ও সেকেন্দ্রাবাদের মতো শিল্প শহরগুলিতেও এমন পরিস্থিতি হয় না, তাহলে এখানে কেন এমন হল?'
আদালত কোচি কর্পোরেশনের সচিব এবং কেরল দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের চেয়ারম্যানকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের নির্দেশ দিয়েছে। সেই সঙ্গে প্রশ্ন করা হয়েছে এই আগুন কি মানবিক ভুল? আবর্জনা কি পরিদর্শন করা হয়েছে? অবৈধ আবর্জনা ফেলার জন্য কী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের জমা দেওয়া কাগজপত্র থেকে বোঝা যায় যে সত্য বাস্তবতা থেকে অনেক দূরে। ৬ জুনের আগে কোচিতে যথাযথ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা হওয়া উচিত বলেও জানিয়েছে আদালত। দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের নির্দেশ মানছে না কোচি কর্পোরেশন। কেরল দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ অভিযোগ করেছে যে কোচি কর্পোরেশন দূষণের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে বোর্ডের দেওয়া নির্দেশ মানছে না। এ কারণে দূষণ বাড়ছে। এ বিষয়ে আদালত বলেছে, বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ একে অপরকে দোষারোপ না করে অবিলম্বে দূষণের মাত্রা বাড়াতে হবে।
৩০টি ফায়ার ফাইটার ট্যাঙ্ক, নৌবাহিনীর হেলিকপ্টার আগুন নেভাতে কাজ করছে। ভারত পেট্রোলিয়াম ও হিন্দুস্তান পেট্রোলিয়াম থেকে যন্ত্রপাতি নিয়ে এই বর্জ্যের আগুন নেভানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু অবস্থার উন্নতি হচ্ছে না। ধোঁয়ায় ঢেকে গেছে গোটা শহর।
কীভাবে এই দূষণ এভাবে ছড়িয়ে পড়ল?
২ মার্চ আবর্জনা প্ল্যান্টে আগুন লাগার পর থেকে এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (AQI) কমেছে। অর্থাৎ বাতাসে PM 2.5 এবং PM 10 এর পরিমাণ বেড়েছে। প্রথমে বুঝুন ২ মার্চ থেকে ৮ মার্চ পর্যন্ত কোচি শহরের AQI কতটা বেড়েছে। 2 মার্চ AQI ছিল 103, যা ৭ মার্চ 215, অর্থাৎ দ্বিগুণেরও বেশি। সপ্তাহজুড়ে বাতাসের মান ক্রমাগত অবনতি হয়েছে।
২ মার্চ যেদিন আগুন লেগেছিল, সেদিন কোচির সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সর্বোচ্চ আর্দ্রতা ছিল ৯৩ শতাংশ। গড় ছিল ৬৫ শতাংশ। সকালে বাতাস না থাকলেও বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঘণ্টায় ৯ থেকে ১১ কিলোমিটার বেগে বাতাস বইছে। তিন তারিখে মেঘলা ছিল। সর্বোচ্চ আর্দ্রতা ছিল ৮৪ শতাংশ। সকালে বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১১ কিলোমিটার। রাতে কুয়াশা ছিল। কিন্তু বাস্তবে তা কুয়াশা ছিল না। কোচির আবর্জনা প্ল্যান্ট থেকে ধোঁয়া বের হওয়ার কারণে ধোঁয়াশা ছিল।
৪ মার্চ সর্বোচ্চ আর্দ্রতা ছিল ৯৩ শতাংশ। বাতাসের গতি কমে গেছে। মেঘ, কুয়াশা আর কুয়াশার মতো অবস্থা ছিল। পাঁচ তারিখেও প্রায় একই অবস্থা ছিল। ৬ তারিখে ঘণ্টায় ১৫ কিলোমিটার বেগে বাতাস বয়ে যায়, যার কারণে ধোঁয়া আরও ছড়িয়ে পড়ে। আর্দ্রতা ছিল ৭৮ শতাংশ। ৭ তারিখ আবার বাতাস বইল না। আর্দ্রতা ছিল ৮০ শতাংশ। ৮ তারিখে আর্দ্রতা এবং বাতাসের গতি কমেছে।
বাতাসের গতি হ্রাস, আর্দ্রতা বৃদ্ধি
যখনই একটি শহরে বাতাসের গতি কম থাকে তখনই বাতাসে দূষণ কম থাকে। সমুদ্রের কাছাকাছি থাকায় আর্দ্রতা বৃদ্ধি পায়। বাতাসে জলের কণার পরিমাণ বেড়ে যায়। এমন অবস্থায় কোনও স্থান থেকে দূষিত ধোঁয়া বের হয় তা বাতাসে থাকা জলের কণার সঙ্গে বসে যায়।
মানুষের শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে
খুব বেশি বৃষ্টি হলে এই সমস্যার সমাধান হতে পারে। কিন্তু আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, ১১ মার্চের আগে বৃষ্টির কোনও সম্ভাবনা নেই। আগামী এক সপ্তাহ সূর্য ও মেঘের লুকোচুরি খেলা চলবে। তাপমাত্রা ৩৩ থেকে ২৪ এর মধ্যে ঘোরাফেরা করবে। আর্দ্রতা গড়ে ৫৫ থেকে ৬৭ এর মধ্যে থাকবে।
কেরল হাইকোর্টের বিচারপতি এস ভি ভাট্টি এবং বসন্ত বালাজি সরকার ও প্রশাসনকে এই ঘটনায় তিরস্কার করেছেন। আদালত বলেছে, শহরটি গ্যাস চেম্বারে পরিণত হয়েছে। এই চেম্বারে আটকে আছে কোচির মানুষ। যত দ্রুত সম্ভব আগুন নেভাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আদালত বলেছে, 'এই শহরে আর কোনও শিল্প নেই, এমন তো অবস্থা নয়। হায়দরাবাদ ও সেকেন্দ্রাবাদের মতো শিল্প শহরগুলিতেও এমন পরিস্থিতি হয় না, তাহলে এখানে কেন এমন হল?'