১৯৪৮ সালে ৩০ জানুয়ারি গান্ধীজিকে (Mahatma Gandhi) গুলি করে হত্যা করেছিল নাথুরাম গোডসে (Nathuram Godse)। মোট ৩টি গুলি চালিয়েছিল সে। কিন্তু সেই দিন সন্ধ্যায় এমন কী ঘটলো যে এই ঘটনা ঘটাল গোডসে? আর কেনই বা তাকে কেউ আটকাতে পারলেন না?
ওই দিন বিকেল ৪টে নাগাদ আলোচনার জন্য সর্দার পটেলকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন গান্ধীজি। নির্দিষ্ট সময় মেয়েকে নিয়ে গান্ধীজির কাছে পৌঁছে গিয়েছিলেন পটেল। কিন্তু গান্ধীজি প্রার্থনার পরেও তাঁর সঙ্গে কথা বলতে চান। তাই তাঁকে বসতে বলেন। কিন্তু প্রার্থনা সভায় যোগ দিতে যাওয়ার পথেই তাঁর ওপর গুলি চালায় গোডসে।
দিল্লিতে থাকলে বিড়লা ভবনের ওই প্রার্থনা সভায় যোগ দিতেন গান্ধীজি। সেই দিন সর্দার পটেলের সঙ্গে আলোচনায় ব্যস্ত ছিলেন তিনি। হঠাৎই গান্ধীজির নজর যায় ঘড়ির দিকে এবং প্রার্থনার কথা মনে পড়ে যায় তাঁর।
এরপর আভা ও মনুর কাঁধে হাত দিয়ে প্রার্থনা সভার উদ্দেশ্যে এগোতে থাকেন। সেই সময় আচমকাই সামনে এসে দাঁড়ায় নাথুরাম গোডসে। বলে, 'বাপু নমস্কার।' তখন মনু গোডসের উদ্দেশ্যে বলেন, 'আপনি সরুন, বাপুকে যেতে দিন। ইতিমধ্যেই দেরি হয়ে গিয়েছে।'
সন্ধে ৫টা ১৭, মনুকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় গোডসে। এরপরেই গান্ধীজির দিকে বন্দুক তাক করে সে। চোখের নিমেশে পরপর ৩টি গুলি চালায়। ২টি গুলি শরীর ভেদ করে বেরিয়ে যায়। মাটিতে লুটিয়ে পড়েন জাতির জনক।
ধরা পড়ার পর প্রথমে গোডসে বলে গান্ধীজির হত্যা কেবল তিনিই করেছেন। কিন্তু পরে তিনি তার ভাই গোপাল গোডসের নামও বলে। তিনি আরও জনায়, 'শুক্রবার বিকেল ৪টে ৫০ মিনিটে আমি বিড়লা ভবনের গেটে পৌঁছে যাই এবং নিরাপত্তারক্ষীদের নজর এড়িয়ে ভিতের ঢুকতে সফল হই। ভিড়ের মাঝে নিজেকে লুকিয়ে রেখেছিলাম, যাতে আমার ওপর কারও সন্দেহ না হয়।'
গোডসে আরও বলে, 'সন্ধ্যে ৫টা ১০ মিনিটে আমি গান্ধীকে নিজের ঘর থেকে বেরিয়ে প্রার্থনা সভার দিকে যেতে দেখি। গান্ধীজির পাশে দুই মহিলা ছিলেন, যাঁদের কাঁধে হাত দিয়ে তিনি হাঁটছিলেন। আমি গান্ধীকে আসতে দেখে প্রথমে তাঁর মহান কাজের জন্য হাতজোর করে প্রণাম করি এবং দুই মহিলাকে সরিয়ে দিয়ে গুলি চালাই। আমি দুটো গুলিই চালাতে চেয়েছিলামি, কিন্ত তৃতীয়টিও বেরিয়ে গেল এবং গান্ধীজি ওখানেই লুটিয়ে পড়লেন।'
গোডসে বলে, 'যখন আমি গান্ধীজিকে ৩টি গুলি করি তখন তাঁর আশেপাশের মানুষরা দূরে পালিয়ে যান। আমি আত্মসমর্পণের জন্য ২টি হাত উপরে করি, তারপরেও কেউ সাহস করে আমার সামনে আসেননি। পুলিশও দূর থেকে দেখছিল। আমি নিজে পুলিশ - পুলিশ করে চিৎকার করি। প্রায় ৫ - ৬ মিনিট পর এক ব্যক্তি আমার কাছে এলেন। তারপর আমার সামনে ভড়ি জমে যায়, আর আমায় মারতে শুরু করে।'
সন্ধে ৬টার পর মহাত্মা গান্ধীর মৃত্যুর খবর আগুনের মতো ছড়িয়ে পড়ে। গান্ধীজির মরদেহ বিড়লা হাউসে ঢেকে রাখা হয়। সেই সময় সেখানে পৌঁছান তাঁর ছোট ছেলে দেবদাস গান্ধী এবং তিনি গান্ধীজির শরীর থেকে কাপরটি সরিয়ে দেন। তিনি বলেন, 'অহিংসার পূজারির সঙ্গে হওয়া হিংসার ঘটনা দুনিয়া দেখুক।'
ওই দিনই দিল্লির তুঘলক রোড থানায় গান্ধীজির হত্যার এফআইআর দায়ের করা হয়। এফআইআর লেখা হয়েছিল উর্দুতে। তুঘলক রোড থানার রেকর্ড রুমে আজও সেই এফআইআর-এর কপি সংরক্ষিত আছে।