Advertisement

'উৎখাত করব', অভিষেকের হুঙ্কারে কতটা বেকায়দায় বিপ্লব সরকার?

বিধানসভা ভোট আসতে এখনও দেড় বছর বাকি রয়েছে। কিন্তু দেশের উত্তর-পূর্বের ছোট্ট রাজ্যটিকে নিয়ে ইতিমধ্যেই দড়ি টানাটানির খেলা যেন শুরু হয়ে গিয়েছে। বলতে গেলে ২০২৩ এর লক্ষ্যে ত্রিপুরা বিধানসভা নির্বাচনের ঘুঁটি সাজানো শুরু। আর বাংলা জয়ের হ্যাটট্রিকের পর এবার তৃণমূলের নজরে ত্রিপুরা। নতুন দায়িত্ব নিয়েই সেই বার্তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার যেভাবে আগরতলায় ঝড় তুললেন অভিষেক বাহিনী তাতে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেবের কপালে চিন্তার রেখা আরো গাঢ় হবে সেই বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। তবে ২০১৮ সালে ২৫ বছরের বাম শাসনের অবসান ঘটিয়ে উত্তর পূর্বের রাজ্যটিতে পদ্ম ফুঁটেছিল। ৫ বছরের মধ্যে ফের সেখানে সরকার বদলের মত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে কিনা তা একবার দেখে নেওয়া যাক।

বিপ্লব দবে কি সত্যি চাপে আছেন অভিষেকের হুঙ্কারে?
সুমনা সরকার
  • কলকাতা,
  • 03 Aug 2021,
  • अपडेटेड 10:19 PM IST
  • ত্রিপুরা এখন পাখির চোখ তৃণমূলের
  • বারবার ত্রিপুরায় আসবেন, দাবি করছেন অভিষেক
  • বিপ্লব দেব কি সত্যি চাপে আছেন অভিষেকের হুঙ্কারে?

বিধানসভা ভোট আসতে এখনও দেড় বছর বাকি রয়েছে। কিন্তু দেশের উত্তর-পূর্বের ছোট্ট রাজ্যটিকে নিয়ে ইতিমধ্যেই দড়ি টানাটানির খেলা যেন শুরু হয়ে গিয়েছে। বলতে গেলে ২০২৩ এর লক্ষ্যে ত্রিপুরা বিধানসভা নির্বাচনের ঘুঁটি সাজানো শুরু। আর বাংলা জয়ের হ্যাটট্রিকের পর এবার তৃণমূলের নজরে ত্রিপুরা। নতুন দায়িত্ব নিয়েই সেই বার্তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার যেভাবে  আগরতলায় ঝড় তুললেন অভিষেক বাহিনী তাতে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেবের কপালে চিন্তার রেখা আরো গাঢ় হবে সেই বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। তবে ২০১৮ সালে ২৫ বছরের বাম শাসনের অবসান ঘটিয়ে উত্তর পূর্বের রাজ্যটিতে পদ্ম ফুঁটেছিল। ৫ বছরের মধ্যে ফের সেখানে সরকার বদলের মত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে কিনা তা একবার দেখে নেওয়া যাক।

 

 

অভিষেকের চ্যালেঞ্জ
তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর বাংলার বাইরে সংগঠন মজবুত করতে  প্রথম রাজ্য হিসাবে ত্রিপুরাকেই বেছে নিয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার ছিল অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রথম ত্রিপুরা সফর। আর তা ঘিরেই উত্তপ্ত পরিস্থিতি হয় রাজধানী আগরতলায়। কালো পতাকা, গো ব্যাক স্লোগান তো ছিলই, সঙ্গে অভিষেকের গাড়ির উপরও হামলা চালানো হয় বাঁশ, লাঠি নিয়ে। অভিযোগের তির স্বাভাবিক ভাবেই বিজেপির দিকে। উদয়পুরে মাতাবাড়ি এলাকায় অভিষেক পৌঁছনো মাত্রই তাঁকে দেখে ‘গো -ব্যাক’ স্লোগান দেয় বিজেপি কর্মীরা। তাতে অবশ্য দমবার পাত্র নন ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ। উল্টে ১৫ দিন অন্তর তিনি ত্রিপুরায় আসবেন, সাংবাদিক সম্মলনে এমনটাই বলতে শোনা যায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে। আগামী দেড় বছরের মধ্যে ত্রিপুরায় সরকার গড়বে তৃণমূল। আগরতলার বুকে দাঁড়িয়ে এমন চ্যালেঞ্জ করেছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। 

Advertisement

 

আরও পড়ুন: মন্ত্রী হওয়ার পর প্রথম বেতন, মাস গেলে কত পাবেন নিশীথ-শান্তনুরা

বিপ্লব দেব কি সত্যিই চাপে?
বিজেপির উত্তরপূর্ব ভারত অভি‌যান সফল হয়েছিল ত্রিপুরায়। ২০১৮ সালে  ত্রিপুরায় আড়াই দশকের সিপিএম শাসন  অস্তাচলে যায়। অঙ্ক কষে প্রচার করে, সুনীল দেওধরের মতো নির্বাচনী প‌র্যবেক্ষককে নামিয়ে মানিক সরকারকে গদিচ্যুত করে বিজেপি। তারপর সবাইকে অবাক করে দিয়েই বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী করে বিপ্লব দেবকে। বিপ্লবের জন্ম ত্রিপুরায় হলেও পরবর্তীতে দিল্লিতে পাড়ি দেন। তবে আরএসএস-এর সঙ্গে ত্রিপুরায় থাকতেই যুক্ত  হয়েছিলেন বিপ্লব দেব। পরবর্তীকালে দিল্লি চলে যাওয়ায় কিছুদিন ছেদ পড়ে রাজনীতিতে। এরপর দিল্লিতে তিনি ফের রাজনীতি শুরু করেন। ১৫ বছর পর বাড়ি ফিরে বিপ্লব হয়েছিলেন ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী।  ভূমিপুত্রকেই বেছে নিয়েছিল গেরুয়া শিবির। তবে মুখ্যমন্ত্রীর পদে বসার পর থেকেই বরাবর বিতর্কে জড়িয়েছেন বিপ্লব। দলের অন্দরেই  বিদ্রোহের মুখে পড়তে হয়েছে  ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেবকে। তাঁকে নিয়ে গেরুয়া শিবিরেই অসন্তোষ রয়েছে। বিজেপি বিধায়কদের একাংশ তাঁর নেতৃত্বে খুশি নন। করোনা সংক্রমণ ঠেকাতেও ত্রিপুরা সরকার ব্যর্থ এমন অভিযোগও উঠেছে। বিপ্লব দেবের কোনও পরিকল্পনা নেই। দাবি করেছেন তার বিরোধী শিবির। এমন কী একটা সময় বিপ্লবকে বলতে শোনা গিয়েছিল,  রাজ্যবাসী যদি তাঁকে আর না চান তা হলে নিজে পদ থেকে স্বেচ্ছায় সরে দাঁড়াবেন।

 

 

BJP-র নেতা-মন্ত্রীরা নাকি যোগাযোগ রাখছেন
তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় খোদ ত্রিপুরায় দাঁড়িয়ে দাবি করেছেন, অনেক বিজেপি নেতা, মন্ত্রী, বিধায়ক আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। এমনকী কলকাতায় গিয়েও অনেকে বৈঠক করে এসেছেন। অনেকেই যোগাযোগ রেখে চলছেন তৃণমূলের সঙ্গে। অভিষেকের আরও দাবি, ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেবের ডানদিক-বামদিকে যাঁরা থাকেন, তাঁদের মধ্যেই অনেকে যোগাযোগ করেছেন ঘাসফুল শিবিরের  সঙ্গে। এটাও বলেছেন, 'আমি নাম বলে তাঁদের অস্বস্তিতে ফেলতে চাই না।'  অভিষেক হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, তৃণমূল যদি মনে করে ঘর ভাঙাবে, তবে একমাস টিকবে না ত্রিপুরার বিপ্লব দেবের নেতৃত্বাধীন বিজেপির সরকার।

আরও পড়ুন : ঝালমুড়ি থেকে চা-কুকিজ, বাবুল-মমতার সম্পর্ক চর্চিত

ত্রিপুরা ভোটে ফ্যাক্টর
২০১৮ সালে বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির জয়ের অন্যতম কান্ডারী ছিল তপশিলি জাতি ও জনজাতির ভোট ব্যাঙ্ক। অধিকাংস আসনেই বিজেপি-আইপিএফটি জয়ের ধ্বজা উড়াতে পেরেছিল। প্রত্যেক নির্বাচনেই দলিত ও জনজাতি তাস রাজনৈতিক দলগুলির জয়ের রসদ যুগিয়ে থাকে। তাই তপশিলি জাতি ও জনজাতিদের ভোট নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রায় দেড় বছর বাকি থাকতেই সলতে পাকাতে শুরু করে দিয়েছে বিজেপি। বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নির্দেশে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিদের ত্রিপুরায় ঘনঘন সফর লক্ষ্য করা যাচ্ছে। যার সূচনা তপশিলি জাতি রাষ্ট্রমন্ত্রী অর্জুন রাম মেঘওয়াল ও জনজাতি বিষয়ক মন্ত্রী অর্জুন মুন্ডার সফরের মাধ্যমে সূচনা হয়েছে বলা যায়। এদিকে আদিবাসী আবেগ ধরতে   ত্রিপুরার মানুষকে 'কের পুজো'র শুভেচ্ছাবার্তা জানিয়েছেন  বাংলার মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ত্রিপুরায় ইতিমধ্যেই তৃণমূল সাংগঠনিকভাবে বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। উত্তর ত্রিপুরা, উনকোটি, ধলাই-সহ বিভিন্ন জায়গায় অন্য দলের বহু নেতা–কর্মীরা তৃণমূলে যোগদান করতে শুরু করেছে বলে দাবি ঘাসফুল শিবিরের। পাশাপাশি আদিবাসীদের মধ্যেও তৃণমূলের প্রভাব বিস্তারের সম্ভাবনা দেখা গিয়েছে। অভিষেক বলছেন, ত্রিপুরায় ৮ টি জেলা। ৫৮টি ব্লক। ৩,৩২৪ টি বুথ। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ বুথ কমিটি তৈরি করবে তৃণমূল কংগ্রেস। 

 

 

বাম শাসনের অবসান ঘটিয়ে ইতিহাস গড়লেও এই মুহূর্তে ত্রিপুরাতে কার্যত টলমল গেরুয়া শিবিরের অবস্থা। বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মণের সঙ্গে এই মুহূর্তে সংঘাত চরমে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেবের। সুদীপ একাধিক বিধায়ক নিয়ে দল ছাড়তে পারেন বলেও জল্পনা তৈরি হয়েছে। মুকুল রায় বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে ফিরতে এই জল্পনা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। মুকুল ঘনিষ্ঠ হিসাবেই পরিচিত সুদীপ। মুকুলের হাত ধরেই কংগ্রেস থেকে গেরুয়া শিবিরে নাম লিখিয়েছিলেন তিনি। এই বিজেপি বিধায়ক তাঁর অনুগামীদের নিয়ে দল ছাড়লে চাপ বাড়তে পারে সরকারের। পরিস্থিতি সামাল দিতে কয়েকদিন আগেই ত্রিপুরার নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক করেছে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব, তাতেও পরিস্থিতি আয়ত্বে আসেনি। বরং অভিষেকের ত্রিপুরা গমনে আগেই তৃণমূলে যোগ দেন বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সহ সভাপতি ও কংগ্রেস নেতা সুবল ভৌমিক। এই পরিস্থিতিতে অভিষেক কার্যত বিজেপি নেতৃত্বকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে বলেছেন,  "বার বার আসব ত্রিপুরায়। দিল্লির নেতাদের থেকে বেশি আসব। পারলে আমাকে আটকে দেখান"। ত্রিপুরা রাজ্যের আনাচে কানাচে এখন গ্রেটার তিপ্র‍্যাল্যান্ডের দাবি উঠছে। এই অবস্থায় বিপ্লবের বিকল্প হিসাবে নাম উঠে আসছে মহারাজা প্রদ্যোত কিশোর মাণিক্যর। এই অবস্থায় দেড় বছর বাকি থাকতেই ত্রিপুরার বিধানসভা দখলের লড়াই যে ইতিমধ্যে জমে গিয়েছে তা বলাই বাহুল্য।

Advertisement

 

Read more!
Advertisement

RECOMMENDED

Advertisement