তিন কৃষি আইনের প্রতিবাদে গত কয়েকমাস ধরে চলা কৃষক বিক্ষোভের আঁচ এসে পড়েছিল পঞ্জাবের পুরভোটে। আর তাতেই ধরাশায়ী হতে হয়েছিল কেন্দ্রের শাসক দল বিজেপিকে। পঞ্জাবে সাতটি পুরসভার মধ্যে মধ্যে ছয়টিতেই জয় ছিনিয়ে নিয়েছিল রাজ্যে ক্ষমতাশীল কংগ্রেস। অন্যদিকে ১০৯টি মিউনিসিপ্যাল কাউন্সিলেও দুরমুশ হতে হয় কেন্দ্রের শাসকদলকে। ভয় ছিল পঞ্জাবের মত গুজরাতেও ভরাডুবি হবে কিনা বিজেপির। তবে সেই সব আশঙ্কাকে দূরে সরিয়ে দিয়ে মোদীর নিজের রাজ্যে পুরভোটে ক্লিন সুইপ পেল ভারতীয় জনতা পার্টি। রাজ্যের ৬টি পুরসভাতেই বয়ে গেল গেরুয়া ঝড়।
গত ২১ ফেব্রুয়ারি গুজরাতে ৬টি পুরসভায় ভোট হয়েছিল। মঙ্গলবার সকাল থেকে শুরু হয় আহমেদাবাদ, সুরাট, ভাদোদরা, রাজকোট, ভাওয়ানগর ও জামনগর, এই ছ’টি পৌরসভায় ৫৭৫টি আসনে ভোট গণনা। কোভিড-১৯ প্রোটোকল মেনে কড়া সুরক্ষা ও কঠোর বিধি মেনেই চলছে ভোট গণনা। গতবারও এই ৬টি পুরসভাতে ক্ষমতায় ছিল গেরুয়া শিবির। ভোটগণনা শুরু হতেই একের পর এক বিজেপি প্রার্থী এগিয়ে যেতে শুরু করেন। সেই তুলনায় কংগ্রেস অনেকটা পিছিয়ে পড়ে। কিছুটা হলেও ভালো ফল করে তৃতীয় স্থানে উঠে আসে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টি। এবারের পুরভোটে সবচেয়ে বড় ঘটনা, এবার গুজরাতে খালা খুলে ফেলল আসাদউদ্দিন ওয়াইসির দল। আহমেদাবাদ পুরভোটে ৪টি আসন গিয়েছে তদের খাতায়।
সব পুরসভাতেই সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করেছে পদ্ম শিবির। জয় মোটামুটি নিশ্চিত হতেই পদ্ম শিবিরের উদযাপন শুরু হয়ে যায়। আহমেদাবাদে ৪৮ টি ওয়ার্ডে ১৯২ টি আসন, সুরাতে ৩০ টি ওয়ার্ডে ১২০ টি আসন, ভদোদরায় ১৯ টি ওয়ার্ডে ৭৬ টি আসন, রাজকোটে ১৮ টি ওয়ার্ডে ৭২ টি আসন, ভাবনগরে ১৩ টি ওয়ার্ডে ৫২ টি আসন এবং জামনগরে ১৬ টি ওয়ার্ডে ৬৪ টি আসন রয়েছে। এরমধ্যে ভাবনগরে ৪৪টি আসন গিয়েছে বিজেপির দখলে। জামনগরে ৫০টি আসন পেয়েছে গেরুয়া শিবির। সুরাতে ৯৩ এবং রাজকোটে ৬৮টি আসনে জয়ী হয়েছে বিজেপি। ভাদোদরায় ৬৯টি এবং আহমেদাবাদে ১৬১ টি আসনে জয় পেয়েছে গেরুয়া শিবির। জয়ের রাস্তা প্রস্তুত হতেই বিকেলে আহমেদাবাদ চলে আসেন অমিত শাহ। এই জয় বিজেপির প্রতি মানুষের আস্থা বলে গুজরাতিতে ট্যুইট করেন শাহ। ট্যুইটে গুজরাতবাসীকে শুভেচ্ছা জানান মোদীও।
এদিকে মোট দুটি দফাতে হচ্ছে গুজরাতের পুরভোট। প্রথম দফায় গত ২১ ফেব্রুয়ারি ভোট হল গুজরাতের ছ'টি শহরের পুরনিগমে। দ্বিতীয় দফায় ২৮ ফেব্রুয়ারি আরও ৮১টি পুরসভা, ৩১টি জেলা পঞ্চায়েত এবং ২৩১টি তালুক পঞ্চায়েতের ভোট হওয়ার কথা রয়েছে। উল্লেখ্য গুজরাতের নির্বাচনে এবারই প্রথম অংশ নিয়েছে আপ। কিন্তু প্রথমবারেই আপের উঠে আসায় কার্যত বিস্মিত সকলে। নিজের সাফল্য উদযাপন করতে আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি সুরাতে রোড শো করবেন কেজরিওয়াল।
গুজরাতে গত কয়েক বছরে অনেকটাই দুর্বল হয়েছে কংগ্রেস। অনেক বিধায়ক দল বদল করে বিজেপিতে গিয়েছেন। ফলে রাজ্যসভার উপনির্বাচনেও সহজেই দুটি আসন সোমবার জিতেছে বিজেপি। তবে কংগ্রেসের গ্রামীণ ভোট অটুট আছে কিনা, সেটা আগামী সপ্তাহেই বোঝা যাবে। আগামী বছর গুজরাতে বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে গুজরাতের শহরাঞ্চলে এই জয় শাহ-মোদীকে অনেকটাই স্বস্তি দেবে তা বলাইবাহুল্য।