লোকসভা নির্বাচনের আগে হাতে আর মেরেকেটে ১০ মাস। দেখতে দেখতে কেটে যাবে সময়। বিরোধী ও শাসক দলের নেতৃত্ব নেমে পড়েছেন ময়দানে। বিজেপির বিরুদ্ধে জোটের সলতে পাকানো শুরু করেছে বিরোধী দলগুলি। সোমবার, নবান্নে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠক করেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী তথা জেডিইউ নেতা নীতীশ কুমার ও উপমুখ্যমন্ত্রী তথা আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদব। বৈঠক সদর্থক বলে দাবি করেন নীতীশ। মমতা সাফ জানান, তাঁর কোনও ইগো নেই। বিরোধীদের একজোট করতে সক্রিয় হয়েছেন নীতীশ। সদ্য দিল্লিতে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খার্গে, রাহুল গান্ধী এবং দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের সঙ্গে দেখা করেছেন। মমতার সঙ্গে দেখা করে নীতীশের গন্তব্য লখনৌ। সেখানে অখিলেশের সঙ্গে তাঁর বৈঠক হওয়ার কথা। শোনা যাচ্ছে, ১৬২ আসনে বিরোধী জোট নিয়েই চলছে মূল আলোচনা। কংগ্রেসকে সঙ্গে নিয়ে ২০০৪ সালের কৌশলই ২০২৪ সালে প্রয়োগ করতে চাইছে বিরোধীরা। কী সেই কৌশল?
১৬২ আসনের খেলা
মমতা, নীতীশ ও অখিলেশের জোটই এখন জাতীয় রাজনীতির চর্চার বিষয়। তার কারণ ১৬২ আসন। উত্তরপ্রদেশে রয়েছে ৮০টি আসন, বিহারে ৪০টি এবং বাংলায় ৪২টি। মোট ১৬২। এই ১৬২ আসন দিল্লির মসনদের লড়াইয়ের জয়-পরাজয় নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়।
নীতীশের পরিকল্পনা কী?
নীতীশ কুমার ইতিমধ্যেই স্পষ্ট করেছেন, ২০২৪ সালের নির্বাচনে বিরোধী ঐক্যের পিছনে তাঁর নিজের কোনও উচ্চাকাঙ্ক্ষা নেই। শোনা যাচ্ছে, নীতীশ কুমার উত্তরপ্রদেশ থেকে লোকসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন। এনিয়ে অখিলেশের সঙ্গে তাঁর কথা হতে পারে। আর একটি বিষয় হল লোকসভা নির্বাচন নিয়ে সমাজবাদী পার্টির অবস্থান। এককভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতার কথা জানিয়েছে অখিলেশের দল। ফলে অনুমেয়, ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়াইয়ের জন্য অখিলেশকে বোঝাবেন নীতীশ। তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী এবং ভারত রাষ্ট্র সমিতি (BRS) প্রধান কে চন্দ্রশেখর রাও, তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিনও বিরোধী ঐক্যের পক্ষে সওয়াল করেছেন।
আরও পড়ুন- বিরোধী জোটে কংগ্রেস? নীতীশ-তেজস্বীকে পাশে নিয়ে যা বললেন মমতা
২০০৪ সালের ফর্মুলা ২০২৪ সালে?
২০০৪ সালের বিরোধী দলের ফর্মুলা কী? লোকসভা নির্বাচনের আগে ২০০৩ সালে হিমাচল প্রদেশের সিমলায় কংগ্রেসের অধিবেশন হয়েছিল। ওই অধিবেশনে সমমনোভাবাপন্ন বিরোধী দলগুলিকে একজোট করার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। তখন কংগ্রেসের নেতৃত্ব ছিল সনিয়া গান্ধীর হাতে। কংগ্রেস পাঁচটি রাজ্যে ৬টি সমমনোভাবাপন্ন দলের সঙ্গে জোট গঠন করে বিজেপি-নেতৃত্বাধীন এনডিএ-কে কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ফেলেছিল। মহারাষ্ট্রে জাতীয়তাবাদী কংগ্রেস পার্টি (এনসিপি), অবিভক্ত অন্ধ্র প্রদেশে তেলেঙ্গানা রাষ্ট্র সমিতি (বর্তমানে ভারত রাষ্ট্র সমিতি), তামিলনাড়ুতে ডিএমকে, ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার (জেএমএম) সঙ্গে জোট হয়েছিল কংগ্রেসের। ঝাড়খণ্ড, উত্তরপ্রদেশে রাষ্ট্রীয় লোক দল (আরএলডি) এবং বিহারে লোক জনশক্তি পার্টিও (এলজেপি) ছিল কংগ্রেসের জোটে।
প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী কেউ ছিলেন না
প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য এনডিএ-র মুখ অটলবিহারী বাজপেয়ীর বিরুদ্ধে প্রার্থী ছিল না তাদের। সেই কৌশলেই এবারও নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে কাউকে মুখ করা হবে না। বরং ভোটের পরই সর্বসম্মতিক্রমে প্রধানমন্ত্রী মুখ বেছে নেওয়া হতে পারে।
ভোটে জয়জয়কার
সেবার ভোটে কংগ্রেস একক বৃহত্তম দল হয়েছিল। ৫৪৫ আসনের লোকসভায় ৪১৭ আসনে প্রার্থী দিয়েছিল কংগ্রেস। বাকি আসনগুলি বন্ধুদের জন্য ছাড়ে। নির্বাচনের ফল- বিজেপির পেয়েছিল ১৩৮টি আসন। তার চেয়ে ৭টি আসন বেশি পেয়েছিল কংগ্রেস। ১৪৫ আসন জিতে একক বৃহত্তম দল হিসাবে আবির্ভূত হয়েছিল সনিয়ার দল। ইউপিএ-র আসন সংখ্যা ছিল ২১৫। ম্যাজিক সংখ্যার চেয়ে ৫৮ আসন কম। তখন ইউপিএ-তে যোগ দেয় বা বাইরে থেকে সরকারকে সমর্থন করে সপা, বসপা-র পাশাপাশি বাম দলগুলিও।
২০০৪ সালের আগে কী পরিস্থিতি ছিল?
২০০৩ সালের শেষের দিকে মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড় এবং রাজস্থানে বিধানসভা নির্বাচন বড় জয় পেয়েছিল বিজেপি। বিধানসভা নির্বাচনের ফলে উৎসাহিত হয়ে বিজেপি শাইনিং ইন্ডিয়ার স্লোগান দিলেও লোকসভা ভোটে লাভ হয়নি। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে আবার ২০০৪-এর আদলে সমমনোভাবাপন্ন দলগুলির সঙ্গে জোটের চেষ্টায় কংগ্রেস। দেখা যাক, এক যাত্রায় সমান ফল না পৃথক?