গত ২০ জুলাই (৩ শ্রাবণ) ছিল দেবশায়নী একাদশী। এদিন থেকেই শুরু হল চতুর্মাস (Chaturmas)। হিন্দু ধর্মে একে তপস্যার মরসুমও বলা হয়। বিশ্বাস করা হয় যে, শ্রী বিষ্ণু (Lord Vishnu) চতুর্মাসে যোগনিদ্রায় থাকেন এবং দেবোত্থনী একাদশীর দিন তাঁর ঘুম ভাঙে। পুরাণে এই সময়কালে বিবাহ ও মাঙ্গলিক আচার পালন অশুভ বলে বিবেচিত হয়। জানেন কেন এই সময় নিদ্রায় যান ভগবান বিষ্ণু?
চতুর্মাসে বিষ্ণু নিদ্রিত থাকার সময় গোটা বিশ্ব বন্যার জলে ডুবে যায়। এটি একটি বার্ষিক বিপর্যয়ের সময় এবং তখন বিশ্ব নিজেকে নতুনভাবে প্রস্তুত করে। এই বিপর্যয়, বছরের দ্বিতীয়ভাগে স্থায়ী হয় অর্থাৎ জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত, যখন সূর্য দক্ষিণের দিকে অগ্রসর হয়। এই সময় সূর্য কর্কটে প্রবেশ করে। কর্কটের রাশিচক্র হল 'কাঁকড়া'। বলা হয় যে, এই কাঁকড়া সূর্যের আলো খায়, তাই এই সময় ধীরে ধীরে দিন ছোট হতে শুরু করে।
পুরাণ মতে বছরের এই সময় অন্ধকার ও দুঃখে ভরে থাকে পৃথিবী। কয়েক হাজার বছর ধরে শঙ্খচূড়ের সঙ্গে যুদ্ধের পর ক্লান্ত হয়ে বিষ্ণু যোগনিদ্রায় যান এই সময়। এই সময় নিজের কর্ম, তাঁর অন্যান্য অবতারদের হস্তান্তর করেন বিষ্ণু।
আষাঢ় মাসের শুক্লপক্ষের একাদশী থেকে কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের একাদশী তিথি পর্যন্ত চলে চতুর্মাস। এই সময়কালে পৃথিবীর উর্বর ক্ষমতা হ্রাস পায়। যতদিন ভগবান বিষ্ণু নিদ্রায় থাকেন, ততদিন তাঁর অবতার সাগরে সঞ্জিবনী বুটি তৈরি করেন। এই কারণে পৃথিবী আবার উর্বর হয়ে নতুন জীবনে পূর্ণ হয়।
মনে করা হয়, এই সময় ভ্রমণ এড়িয়ে যাওয়া ভাল। পুরাণে বলা আছে, যেই সমস্ত সাধুরা দেশে- বিদেশে ভ্রমণ করতেন, তাঁরাও এই সময়কালে কোথাও যেতেন না। চার মাস পরে আবার শস্য শ্যামলা হয়ে ওঠে বসুন্ধরা।
এই সময়ে এই সংক্রান্ত বিভিন্ন উৎসব উদযাপনের রীতি রয়েছে। ইশ্বরের কাছে প্রার্থনা করা হয় যাতে সঠিক পরিমাণে বৃষ্টি হয়। কম বা বেশি নয়। শ্রাবণ মাসে উপবাস করে শিবের পুজো করেন ভক্তেরা।
চতুর্মাস নানা রকম ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করা হয়। যেমন গণেশ চতুর্থী, জন্মাষ্টমী, বিশ্বকর্মা পুজো, মহালয়া, দুর্গাপুজো, নবরাত্রি, দশহরা, লক্ষ্মী পুজো, কালী পুজোর উত্সব এই সময়কালে পালন করা হয়। এছাড়া মহালয়া অবধি চলে পিতৃপক্ষ। সেদিন পূর্ব পুরুষদের উদ্দেশ্যে জলদান করা হয়। এরপরই শুরু হয় মাতৃপক্ষ ও দেবীর বোধনের পর হয় দুর্গাপুজো।
এই সময়ে অসুরদের পৃথিবী থেকে ধ্বংস করা হয়েছিল। রাবণকে হত্যা করার পরে ভগবান রাম অযোধ্যায় ফিরে এসেছিলেন এই সময়কালেই। মা লক্ষ্মীরও পুজো হয় চতুর্মাসের মধ্যেই। এই উৎসবগুলি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, ভগবান বিষ্ণুর জাগরণের সময় যখন ঘনিয়ে আসছে বিশ্বের খারাপ সময়গুলির সমাপ্ত হতে চলেছে।
মনে করা হয়, লক্ষ্মীপুজো ও দীপাবলীর পরেই ভগবান বিষ্ণু নিদ্রা থেকে জেগে ওঠেন। এরপরই দেবী লক্ষ্মীর সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। এরপর থেকে বিয়ের মতো শুভ কাজগুলি পুনরায় শুরু হয়।