দুর্গাপুজোর পরেই বাঙালির আরেক বড় উৎসব, জগদ্ধাত্রী পুজো (Jagadhatri Puja)। অনেকেই সারা বছর অপেক্ষা করে বসে থাকেন এই পুজোর জন্য। পার্বতীরই (Parvati) অপর রূপ দেবী জগদ্ধাত্রী (Goddess Jagadhatri)। জগতের ধাত্রী অর্থাৎ ধারণ কর্ত্রী। পশ্চিমবাংলার বিভিন্ন জায়গায় পুজো হলেও মূলত চন্দননগর (Chandannagar) ও কৃষ্ণনগরের (Krishnanagar) জগদ্ধাত্রী পুজো (Jagadhatri Puja Celebrations) সবচেয়ে জনপ্রিয়।
চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজো মূলত আলোর কাজের জন্যে বিখ্যাত। তবে অনেকেরই অজানা, নদিয়া জেলার কৃষ্ণনগরেই জগদ্ধাত্রী পুজোর প্রবর্তন হয় ১৭৬২ সালে। যদিও সঠিক সাল নিয়ে এখনও রয়েছে নানা মতবিরোধ।
কৃষ্ণনগরে জগদ্ধাত্রী পুজোর প্রবর্তন
শোনা যায়, নদীয়ার মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায়ের রাজত্বকালে নবাব আলিবর্দি খাঁ, তাঁর থেকে ১২ লক্ষ টাকা দাবি করেছিলেন। রাজা কৃষ্ণচন্দ্র তা দিতে অস্বীকার করায় তাঁকে মুর্শিদাবাদে বন্দী করা হয়। বন্দিদশা কাটিয়ে যখন রাজা কৃষ্ণনগরে ফিরছিলেন, তখন তিনি শুনতে পান দুর্গাপুজোর বিসর্জনের বাজনা বেজে গেছে।
মহারাজার স্বপ্নে আসেন মা জগদ্ধাত্রী
দুর্গাপুজোয় সেখানে উপস্থিত না থাকতে পেরে অত্যন্ত কষ্ট পান তিনি। সেই রাতেই মা জগদ্ধাত্রী, মহারাজার স্বপ্নে দর্শন দিয়ে তাঁকে পুজোর নির্দেশ দেন। সেই থেকে মা দুর্গার বিকল্প হিসেবে মা জগদ্ধাত্রীর আরাধনা শুরু হয় বাংলায়। পরবর্তীকালে কৃষ্ণচন্দ্র রাজার পুজোর থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ফরাসিদের দেওয়ান ইন্দ্রনারায়ণ চৌধুরী তৎকালীন ফরাসডাঙ্গা অর্থাৎ বর্তমানের চন্দননগরে জগদ্ধাত্রী পুজো শুরু করেন।
আরও পড়ুন: দীপাবলি থেকে জগদ্ধাত্রী পুজো! জানুন পার্বণে ভরা নভেম্বর মাসের ব্রত- উৎসবের দিনক্ষণ
রানিমা, রাজবাড়ীতে বসেই জগদ্ধাত্রী মায়ের দর্শন করতেন
তৎকালীন সময়ে কৃষ্ণনগরের রানিমা রাজবাড়ীতে বসেই জগদ্ধাত্রী মায়ের দর্শন করতেন। তাই সেই সময় থেকে নিয়ম মেনে দেবীর বিসর্জনের আগে রাজবাড়ীর সামনে থেকে ঘুরিয়ে আনতে হয় জগদ্ধাত্রী প্রতিমাকে। জগদ্ধাত্রী পুজোর সকালে পালকিতে দেবীর ঘট জলঙ্গীর জলে ভরে আনার প্রথা রয়েছে। তবে যোগাযোগ উন্নত হলেও এখনও প্রাচীন নিয়ম অনুযায়ী সাঙে করে অর্থাৎ কাঁধে চেপেই রাজবাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হন মা জগদ্ধাত্রী।
জলঙ্গী নদীতে জগদ্ধাত্রী বিসর্জন
কৃষ্ণনগর রাজবাড়ির সামনে থেকে প্রদক্ষিণ করে প্রতিমা নিয়ে যাওয়া হয় জলঙ্গী নদীর তীরে। সেইখানে মা জগদ্ধাত্রীকে প্রদক্ষিণ করিয়ে বিসর্জন দেওয়া হয় নদীতে। রাজবাড়ীতেও ধুমধাম করে উদযাপন হয় পুজো। নিয়ম অনুযায়ী সবার আগে বিসর্জন হয়, রাজবাড়ীর প্রতিমা। বছরের যে তিনদিন মূলত দর্শনার্থী বা ভ্রমণার্থীদের জন্য খুলে দেওয়া হয় কৃষ্ণনগর রাজবাড়ীর দরজা, তার মধ্যে জগদ্ধাত্রী পুজো একটি।
আরও পড়ুন: মা লক্ষ্মীর কৃপায় এই ৫ রাশির উপর আগামী ৫৩ দিন অর্থের বর্ষণ হবে!
জগদ্ধাত্রী পুজোর নিয়মকানুন
কার্তিক মাসের শুক্ল নবমীতে হয় জগদ্ধাত্রী পুজো। দুই প্রথায় এই পুজো করার প্রচলন আছে। দুর্গাপুজোর ন্যায়, কেউ পুজো করেন চার দিন ধরে, সপ্তমী থেকে নবমী। আবার অনেকে নবমীর দিনই তিনবার পুজোর আয়োজন করেন।
আরও পড়ুন: দীপাবলির পরেই চন্দ্রগ্রহণ! সাবধান, সমস্যা বাড়বে এই রাশির জাতকদের
জগদ্ধাত্রী পুজো ২০২১ -এর নির্ঘণ্ট
* ১১ নভেম্বর, বৃহস্পতিবার - সপ্তমী
* ১২ নভেম্বর, শুক্রবার - অষ্টমী
* ১৩ নভেম্বর শনিবার - নবমী
* ১৪ নভেম্বর রবিবার - দশমী
* নবমী তিথি - এই বছর জগদ্ধাত্রী পুজোর নবমী তিথি শুরু হচ্ছে ১২ নভেম্বর সকাল ১০.৩৫ মিনিটে এবং থাকছে ১৩ নভেম্বর সকাল ৯.৩২ মিনিট পর্যন্ত।