হিন্দু ধর্মে (Hinduism) বারো মাসে তের পার্বণ। তার মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎসব হল ঝুলনযাত্রা (Jhulan Yatra)। শ্রাবণ মাসের একাদশী থেকে পূর্ণিমা পর্যন্ত চলে বৈষ্ণব ধর্মের (Vaishnav) এই শ্রেষ্ঠ উৎসব (Festival)। মনে করা হয় রাধা -কৃষ্ণের (Radha - Krishna) লীলা হল ঝুলনযাত্রা। এদিন নবদ্বীপ, মায়াপুর, মথুরা, বৃন্দাবন সহ গোটা দেশের বিভিন্ন স্থানে জাক-জমকপূর্ণভাবে পালিত হয় এই উৎসব। সুপ্রাচীন এই উৎসবের সঙ্গে জড়িয়ে আছে নানা সামাজিক ও পৌরাণিক তাৎপর্য।
'ঝুলন' (Jhulan) শব্দটি মূলত এসেছে 'দোলনা' (Dolna) শব্দটি থেকে। রাধা-কৃষ্ণের ভক্তেরা এই বিশেষ দিন দোলনা সাজিয়ে যুগলবিগ্রহ স্থাপন করে পুজো করেন। শুধু মন্দির বা বনেদিবাড়িতে নয়, বহু হিন্দু বাড়িতেই আয়োজন করা হয় ঝুলন উৎসবের (Jhulan Utsav)। দোলনার ওপর দেব-দেবীকে বসিয়ে, নানা রকমের মাটির পুতুল, গাছপালা, ফুল দিয়ে সুন্দর করে সাজানো হয় ঝুলনে।
ঝুলনযাত্রা ২০২১-র দিনক্ষণ (Jhulan Yatra Date & Time)
এই বছর ঝুলনযাত্রা শুরু হবে ১৮ অগাস্ট, বুধবার।
ঝুলনযাত্রার পৌরাণিক গুরুত্ব (Importance of Jhulan Yatra)
* শাস্ত্রে শ্রীকৃষ্ণের দ্বাদশ যাত্রার উল্লেখ থাকলেও, সবকটা পালন করা হয় না, সাধারণত। তবে যেগুলি নিয়মিত পালন হয় তার মধ্যে- রথযাত্রা, রাসযাত্রা, দোলযাত্রা, স্নানযাত্রা ও ঝুলনযাত্রা উল্লেকযোগ্য।
* শাস্ত্র মতে, বৃন্দাবনে রাধা ও কৃষ্ণের প্রেমলীলাকে কেন্দ্র করে দ্বাপরযুগে সূচনা হয়েছিল ঝুলন উৎসবের।
* ঝুলন উৎসবের দিন রাধা -কৃষ্ণের বিগ্রহ পূর্ব -পশ্চিম দিকে দোলানো হয়। আসলে সূর্যের উদয় ও অস্ত এবং উত্তরায়ন - দক্ষিণায়নের ওপর নির্ভর করেই এই অবস্থানের দিক নির্দিষ্ট করা হয়েছে বলে জানা যায়।
ঝুলনযাত্রার নিয়ম কানুন (Jhulan Yatra Rituals)
* মনে করা হয় ঝুলন উৎসবে রাধা-কৃষ্ণের পুজো করলে সংসারে সুখ -সমৃদ্ধি ভরে ওঠে।
* এদিন রাধা-কৃষ্ণকে হলুদ বস্ত্র দিয়ে সাজিয়ে, হলুদ ফুল উৎসর্গ করা শুভ।
* কৃষ্ণকে ময়ূরের পালক দিয়ে সাজিয়ে, ঘিয়ের প্রদীপ জ্বালানোর রীতি আছে এদিন।
* পুজোর আগে রাধা-কৃষ্ণের পায়ে তুলসি পাতা অর্পণ করা নিয়ম।
* ঝুলনের সময় প্রতিদিন ২৫-৩০ রকমের ফলের নৈবেদ্য, লুচি -সুজি ইত্যাদি নিবেদন করা হয়।
* পুজো শেষ হলে, গীতা পাঠ ও গায়ত্রীমন্ত্র জপ করলে সংসারে শান্তি বজায় থাকে।
আরও পড়ুন: পুজোয় ফুল আবশ্যক! জানুন এর আসল মাহাত্ম্য
সনাতন ধর্মের এই গুরুত্বপূর্ণ উৎসব উপলক্ষে বিভিন্ন জায়গায় নামসংকীর্তন হয়। এমনকি মেলাও বসে পশ্চিমবাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে। প্রতিটি রাধাকৃষ্ণের মন্দিরে ভিড় জমান ভক্তেরা। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় ২০২০ সাল থেকে করোনা অতিমারীর জন্যে ভাঁটা পড়েছে এই উৎসবের আনন্দেও।