Ranna Pujo - Arandhan Festival 2021: হিন্দুদের বারো মাসে তের পার্বণ। তার মধ্যে একটি ঐতিহ্যপূর্ণ পার্বণ হল অরন্ধন (Arandhan) বা রান্না পুজো (Ranna Pujo)। ভাদ্রে রেঁধে আশ্বিনে খাওয়া এই নিয়মই এই উৎসবের মূল প্রতিপাদ্য। মনসা পুজোর (Manasa Puja) অবিচ্ছেদ্য অংশ এই অরন্ধন উৎসব। হেঁশেলের একস্থানে পরিষ্কার করে ফণিমনসা কিংবা শালুক গাছের ডাল সাজিয়ে মনসার ঘট সাজিয়ে বিশেষ পুজো করা হয়। বিশ্বকর্মা পুজোর (Vishwakarma Puja) আগের দিন প্রায় সারারাত জুড়ে চলে রান্নাবান্নার চরম ব্যস্ততা।
বছরে দু'বার অরন্ধন উৎসব পালিত হয়। একটি, মাঘ মাসে সরস্বতী পুজোর পরের দিন শীতলষষ্ঠীতে শিলনোড়া পুজোর দিন। আরেকটি, ভাদ্র সংক্রান্তিতে মনসা পুজোর দিন। অনেকে আবার উনুন পুজো বা গৃহ দেবতার পুজো হিসাবে মনে করেন এই উৎসবকে। এই দুই দিন বাড়িতে উনুন জ্বালানোর নিয়ম নেই। তাই আগের দিন রান্না করে সেই বাসি খাবার খাওয়ার রীতি রয়েছে অরন্ধনে।
দেবী মনসার পুজো (Manasa Puja)
দেবী মনসাকে উৎসর্গ করা হয় মরসুমের সেরা শাক- সবজি, মাছ। তবে গোত্র ও অঞ্চলের তারতম্যে বিভিন্ন নিয়ম দেখা যায় এই উৎসবে। দেবী বিভিন্ন স্থানে ভিন্ন রূপে পূজিত হন এদিন। অনেকে মনসার প্রতিমা বানিয়ে পুজোর করেন, অনেকে আবার পঞ্চ সর্পের ফণাযুক্ত প্রতিমার পুজো করেন। কেউ কেউ ফণিমনসা গাছের ডাল রেখে পুজো করেন।
আরও পড়ুন: কবে থেকে শুরু পিতৃপক্ষ? জানুন এই ধর্মীয় তিথির নিয়মকানুন- গুরুত্ব
রান্না পুজোর খাওয়া - দাওয়া (Ranna Puja Food)
রান্না পুজোর পরের দিন অর্থাৎ বিশ্বকর্মা পুজোয় মূলত বাসি খাবার খাওয়ার রীতি। যার মধ্যে পান্তা উল্লেখযোগ্য। অনেক বাড়িতে আমিষ রান্না পুজো হয়, তো কোথাও আবার এই পার্বণ একেবারে নিরামিষ হয়। আমিষের মধ্যে ইলিশ -চিংড়ি মাছ অন্যতম। এছাড়াও আরও ভিন্ন ধরণের মাছ থাকে সেই তালিকায়। নিরামিষ পদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য রকমারি ভাজা, ছোলা -নারকেল দিয়ে কচু শাক সহ একাধিক শাক, পান্তা ভাট, মুগ ও খেসারির ডাল, চালতা- গুড় দিয়ে চাটনি, তালের বড়া, মালপোয়া ইত্যাদি।
আরও পড়ুন: পরবর্তী সূর্যগ্রহণ কবে? জানুন সূতক কাল, রাহু - কেতুর অবস্থান
সাধারণত বিশ্বকর্মা পুজোর আগের রাত থাকে অমাবস্যার ঘুটঘুটে অন্ধকার। আর সেই অন্ধকারে সারা রাত জেগে গৃহস্থ বাড়িতে পার্বণ ঘিরে ব্যস্ততা চলে। দেবীপক্ষের আগে রান্না পুজোই বাঙালিদের শেষ উৎসব। এরপর যে কোনও উৎসব হবে মহালয়ার (Mahalaya) পরে, সুপর্বে। দেবী দুর্গার (Devi Durga) মর্তে আগমনের পর আবার উৎসবমুখী হয় বাঙালি, তাই দেবীর অপর নাম 'সুপর্বা'।
আরও পড়ুন: দেবী দুর্গার হাতে থাকে দশ অস্ত্র! জানেন কী এর তাৎপর্য?
বর্তমানে উৎসবের এই মেজাজ ও রীতিনীতি অনেকটা শিথিল হয়েছে কর্ম ব্যস্ততার জন্য। তবে শহরে কম হলেও, গ্রামাঞ্চল বা শহরতলিতে এখনও এই পার্বণ ব্যাপকভাবে উদযাপিত হয়। তবে রান্না পুজো মূলত পশ্চিমবাংলার আদি বাসিন্দারা অর্থাৎ এদেশীয়রা পালন করেন। এটি পূর্ববঙ্গীয়দের রীতি নয়।