৫৬ তম জিএসটি কাউন্সিল বৈঠকে সরকার ঘোষিত 'জিএসটি ২.০'-এর আওতায় এক দীর্ঘ তালিকার কর পরিবর্তনের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এই সংস্কারের মূল অংশ হল বহু নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ও পরিষেবাকে জিএসটি থেকে অব্যাহতি দিয়ে ০% কর শ্রেণিতে স্থানান্তর করা। এর আওতায় এসেছে খাদ্যপণ্য, ওষুধ, শিক্ষা সরঞ্জাম, বিমা এবং এমনকি প্রতিরক্ষা ও বিমান চলাচলের নির্দিষ্ট কিছু আমদানি।
১২ এবং ২৮ শতাংশের যে জিএসটি স্তর ছিল, তা তুলে দেওয়া হল। কিছু পণ্যকে রাখা হয়েছে ৪০ শতাংশ হারের বিশেষ তালিকায়। বুধবার কাউন্সিলের প্রথম বৈঠকের পরেই কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন নতুন জিএসটি হার ঘোষণা করেছেন। আগামী ২২ সেপ্টেম্বর থেকে নতুন হারে জিএসটি কার্যকর করা হবে।
এর আওতায় এসেছে খাদ্যপণ্য, ওষুধ, শিক্ষা সরঞ্জাম, বিমা এবং এমনকি প্রতিরক্ষা ও বিমান চলাচলের নির্দিষ্ট কিছু আমদানি। চলুন জেনে নেওয়া যাক সেই তালিকা-
খাদ্যপণ্য: আল্ট্রা-হাই টেম্পারেচার দুধ, প্যাকেটজাত ও লেবেলযুক্ত ছানা বা পনির, সমস্ত ভারতীয় রুটি যেমন চাপাটি, রুটি, পরোটা, পরোটা, খাখরা এবং পিজ্জা ব্রেড এখন জিএসটি মুক্ত।
জ্যাম, জেলি, মাশরুম, নারকেলের জল, ইস্ট, সরষে, সয়াবিন, ভুজিয়া এবং ২০ লিটারের পানীয় জলের বোতলের উপর থেকেও জিএসটি ১২ শতাংশ থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ৫ শতাংশে। মধু, মিছরি, চকোলেট, কর্নফ্লেক্স, কেক, পেস্ট্রি, স্যুপ, আইসক্রিম ও জিলেটিনের মতো খাদ্যপণ্যে এতদিন ১৮ শতাংশ জিএসটি ধার্য ছিল। সেটি এখন কমিয়ে করা হয়েছে মাত্র ৫ শতাংশ।
কনডেনসড মিল্ক, মাখন, ঘি, তেল, চিজ ও অন্যান্য দুগ্ধজাত পণ্যের উপর জিএসটি ১২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে। একই করহার প্রযোজ্য হয়েছে বাদাম, খেজুর, আনারস, অ্যাভোকাডো, পেয়ারা, আম ও অন্যান্য ফলে। পশুচর্বি, সসেজ, সংরক্ষিত বা রান্না করা মাংস, মাছ, চিনি, পাস্তা, নুডলস, স্প্যাগেটি ও বিভিন্ন সবজির দামও কমছে। কারণ এই সব খাদ্যপণ্যে জিএসটি ১২ শতাংশ থেকে নেমে ৫ শতাংশ হয়েছে।
ওষুধ ও স্বাস্থ্যসেবা- ৩৩টি জীবনরক্ষাকারী ওষুধ, যেগুলিতে আগে ১২% জিএসটি ছিল, সেগুলোকে সম্পূর্ণ করমুক্ত করা হয়েছে। ক্যান্সার, বিরল রোগ ও দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতার চিকিৎসায় ব্যবহৃত আরও তিনটি বিশেষ ওষুধ, যেগুলিতে আগে ৫% জিএসটি ছিল, সেগুলিও এখন শূন্য করের আওতায়। সমস্ত ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিমা ও জীবনবিমা পলিসি থেকে জিএসটি তুলে নেওয়া হয়েছে, যা পরিবারগুলির জন্য আরও সাশ্রয়ী হবে।
শিক্ষা ও স্টেশনারি- শিক্ষার্থী ও স্কুলের জন্যও এসেছে স্বস্তির খবর। খাতা, গ্রাফ বই, ল্যাবরেটরি নোটবুক ইত্যাদির জন্য ব্যবহৃত আনকোটেড কাগজ ও পেপারবোর্ড করমুক্ত। মানচিত্র, অ্যাটলাস, ওয়াল ম্যাপ, টপোগ্রাফিক প্ল্যান এবং গ্লোব শূন্য করের আওতায় এসেছে। পেন্সিল শার্পনার, রাবার, পেন্সিল, ক্রেয়ন, প্যাস্টেল, চারকোল পেন্সিল ও দর্জির চক করমুক্ত। হাতের তৈরি কাগজ ও পেপারবোর্ডও এই সুবিধার অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
প্রতিরক্ষা ও বিমান আমদানি- জাতীয় নিরাপত্তা ও বিমান চলাচলের সঙ্গে যুক্ত কিছু ক্ষেত্রে করছাড় ঘোষণা করা হয়েছে। নির্দিষ্ট প্রতিরক্ষা ও মহাকাশ সরঞ্জামের আমদানিতে আর IGST লাগবে না। এর মধ্যে রয়েছে— ফ্লাইট মোশন ও টার্গেট মোশন সিমুলেটর। ক্ষেপণাস্ত্র, রকেট, ড্রোন, মানববিহীন জাহাজের যন্ত্রাংশ ও উপ-সংযোজন। সামরিক বিমান যেমন C-130 ও C-295MW। গভীর সমুদ্রযান, সোনোবুয়, বিশেষ উচ্চক্ষমতার ব্যাটারি। ছাড় পাওয়া পণ্যের টেকনিক্যাল ডকুমেন্টেশন আমদানিও করমুক্ত।। ডায়মন্ড ইমপ্রেস্ট অথরাইজেশনের আওতায় ২৫ সেন্ট পর্যন্ত প্রাকৃতিক কাটা ও পালিশ করা হীরার আমদানি করমুক্ত। প্রদর্শনীর জন্য আনা শিল্পকর্ম ও প্রাচীন সামগ্রীও এর মধ্যে রয়েছে।
টিভি, এসি, জামা-কাপড়, ছোট গাড়ি, ৩৫০ সিসি-র নীচে বাইকের দাম কমছে। এখন থেকে এই পণ্যগুলিতে ১৮ শতাংশ জিএসটি নেওয়া হবে।
দাম বাড়ছে- বিলাসবহুল গাড়ি, মোটরসাইকেল, প্রাইভেট জেট, রেসিং কারের উপর ৪০ শতাংশ জিএসটি আরোপ করা হয়েছে। পান মশলা, বাড়তি চিনি মিশ্রিত পানীয়, কার্বনযুক্ত পানীয়ের দাম বাড়ছে। ২৮ শতাংশ থেকে জিএসটি করা হচ্ছে ৪০ শতাংশ। সিগারেট, চুরুট এবং তামাকজাত যাবতীয় পণ্যের উপর ৪০ শতাংশ হারে জিএসটি নেওয়া হবে। কয়লার দাম বাড়ছে। পাঁচ থেকে ১৮ শতাংশ হচ্ছে কয়লার উপর জিএসটি।