রাত পোহালেই সপ্তম দফার ভোট। এই দফার মোট ৩৪ আসনের মধ্যে ৯টি আসনে ভোট হবে মুর্শিদাবাদে। অথচ এখনও কাটেনি জোটজট। আসন রফা নিয়ে কংগ্রেস, বাম ও আইএসএফ একাধিকবার বৈঠক করলেও সব আসনে সমাধান সূত্র এখনও অধরা।
কাল কোন কোন আসনে ভোট
আগামীকাল মুর্শিদাবাদ জেলার ফরাক্কা, সুতি, রঘুনাথগঞ্জ, সাগরদিঘি, লালগোলা, ভগবানগোলা, রানিনগর, মুর্শিদাবাদ, ও নবগ্রামে ভোট। পরবর্তী পর্যায়ে আরও ১১টি আসনে ভোট হবে। জঙ্গিপুর ও সামসেরগঞ্জ আসনের ২ প্রার্থী মারা যাওয়ায় ভোট পিছিয়ে ১৬ মে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
২৪ ঘণ্টা আগেও জোটজট অব্যাহত
রাজ্যজুড়ে বাম ও আইএসএফ-এর সঙ্গে কংগ্রেস জোট করলেও মুর্শিদাবাদে আব্বাস সিদ্দিকির দলের সঙ্গে জোটে যায়নি অধীর চৌধুরীর দল। বামেদের সঙ্গে জোট করেছে তাঁরা। ২২টি আসনের মধ্যে ১৭ টি আসনে একাই প্রার্থী দিয়েছে জাতীয় কংগ্রেস। বামেদের তারা ছেড়েছে ৫টি আসন। সেগুলি হল ভগবানগোলা, নবগ্রাম, ডোমকল, জলঙ্গি ও জঙ্গিপুর।
খাতায় কলমে বামেদের এই পাঁচটি আসন কংগ্রেস ছাড়লেও বিমান বসুদের দল সামসেরগঞ্জ আসনে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে প্রার্থী দিয়েছে। তাদের যুক্তি , ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটে জঙ্গিপুর ও সামসেরগঞ্জ আসনে তারা দ্বিতীয় স্থানে ছিল, তাই ওই দুটি আসন কংগ্রেসের কাছে দাবি করেছিল। তবে কংগ্রেস তাদের জঙ্গিপুর ছাড়লেও সামসেরগঞ্জ ছাড়েনি। তাই তারা বাধ্য হয়েই সেখানে প্রার্থী দিয়েছে।
আরও পড়ুন : সপ্তম দফা: রুদ্রনীল-ফিরহাদ-ঐশী, একনজরে হেভিওয়েটরা
জটিলতার এখানেই শেষ নয়। আবার আব্বাস সিদ্দিকির দলকে একটিও আসন এই জেলায় ছাড়েনি কংগ্রেস। ফলে রানিনগর ও ফরাক্কা আসনে কংগ্রেসের বিরুদ্ধেই প্রার্থী দিয়েছে আইএসএফ। তাদের যুক্তি, রাজ্যজুড়ে বাম ও কংগ্রেসের সঙ্গে জোট গড়লেও এই জেলাতে সংগঠন বিস্তার তাদের প্রাথমিক লক্ষ্য। তাই ২ আসনে প্রার্থী দিয়েছে।
তবে কংগ্রেস এই সব নিয়ে মাথা ঘামাতে নারাজ। মুর্শিদাবাদ জেলা কংগ্রেস নেতৃত্বের দাবি, তাদের সঙ্গে এই জেলায় আইএসএফ-এর কোনও জোট হয়নি। তাই তাদের সমর্থন বা বিরোধিতায় কংগ্রেসের কিছু যায় আসে না।
জোট নিয়ে প্রশ্ন
জোটের জট এখনও না কাটায় দোলাচলে রয়েছেন বাম-কংগ্রেস ও আইএসএফ-এর তৃণমূলস্তরের কর্মী-সমর্থকরা। রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, ভোটের ২৪ ঘণ্টা আগেও জট অব্যাহত থাকায় জোটের ভাবমূর্তিতে আঘাত লেগেছে। মনোবল ভেঙেছে জোট সমর্থকদের। আর এতে সবথেকে বেশি লাভবান হবে তৃণমূল কংগ্রেস।
বিভিন্ন দলের প্রতিক্রিয়া
এই নিয়ে মুর্শিদাবাদ জেলা যুব কংগ্রেস সভাপতি নরোত্তম সিনহা বলেন, 'মুর্শিদাবাদে অধীর চৌধুরীই শেষ কথা। এখানে আব্বাস বা তার আমাদের বিরুদ্ধে প্রার্থী দিলেও কিছু করে উঠতে পারবে না। আর এই জেলার আমাদের শুধু বামেদের সঙ্গেই জোট হয়েছে।' এই কংগ্রেস নেতার আরও দাবি, তাঁরা এককভাবে ১৪-১৫টি আসন পাওয়ার বিষয়ে আশাবাদী।
আরও পড়ুন : EXCLUSIVE :'অধীর নন, দল চালান তাঁর স্ত্রী', বিস্ফোরক একদা ডানহাত ডেভিড
জেলার বাম নেতা জাহির মোল্লা বলেন, 'আমরা কংগ্রেস ও আইএসএফ দুই দলের সঙ্গেই রয়েছি। কংগ্রেসকে সামসেরগঞ্জ আসন ছাড়ার অনুরোধ করেছিলাম। ওরা শোনেনি। তাই স্থানীয় নেতৃত্ব সামসেরগঞ্জে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে প্রার্থী দিয়েছে।' বামেরা ৬টি আসনে এককভাবে জিতবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন তিনি।
অন্যদিকে আর এক শরিক আইএসএফ-এর নওসাদ মোল্লা বলেন, 'মুর্শিদাবাদে জোট নিয়ে আমাদের সমস্যা আছে। তবে কংগ্রেস ও বাম দুই দলের প্রার্থীদের হয়েই প্রচার করছি। কংগ্রেসের বিরুদ্ধে রানিনগর ও ফরাক্কায় প্রার্থী দিয়েছি। কারণ, আমাদেরও তো সংগঠন বাড়াতে হবে। তবে মালদা সহ গোটা রাজ্যে কংগ্রেসের হয়েই প্রচার করছি।'
মুচকি হাসছে তৃণমূল
রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, এই জোটজটের কারণে সবথেকে বেশি সুবিধা পেয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। এই নিয়ে জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা অশোক দাস বলেন, 'আমরা এবার জেলায় দৃষ্টান্তমূলক ফলাফল করব। ওদের জোট ঘোঁটে পরিণত হয়েছে। নিজেদের মধ্যে কোনও একতা নেই। গোটা রাজ্যের সঙ্গে এজেলাতেও কংগ্রেস ও তৃণমূল নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।'