ব্যবধান মাত্র দু মাসের। তার মধ্যে পর পর গেরুয়া শিবিরের দুটি বড় অভিযান। কিন্তু তাতে আদৌ কি লাভ হল বিজেপির। ৮ অক্টোবর বিজেপির নবান্ন অভিযানে উত্তাল হয় শহরের রাজপথ। এবার তারই কিছুটা প্রভাব দেখা গেল সোমবারের উত্তরকন্যায়। পুলিশ কাঁদানে গ্যাসে ও রঙিন জলের সামনে রণে ভঙ্গ দিতে এবারও বেশি সময় নেয়নি বিজেপি কর্মীরা। কিন্তু বিধানসভা ভোটের কয়েক মাসে আগে, এমন আন্দোলনের আদৌ কি গেরুয়া শিবিরের লাভ হয়েছে ?
আদৌ কতটা লাভ
আগামী বিধানসভা ভোটকে পাখির চোখ করেছে বিজেপি। ইতিমধ্যে একগুচ্ছ কেন্দ্রীয় নেতারা এসেছেন বঙ্গে। এমন পরিস্থিতিতে সংগঠনের কর্মীদের মনোবল চাঙ্গা ও শক্তি পরীক্ষা করতেই বিজেপি আন্দোলনে নামছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক মহলেও একাংশ। প্রত্যেকবারই আন্দোলনে দেখা যায়, তেড়েফুড়ে নেমেছেন বঙ্গ বিজেপির নেতা কর্মীরা। কিন্তু তাদের সামনে প্রাচীর হয়ে দাঁড়াচ্ছে কখনও গোলাপি জল, কখনও বেগুলি জল। নবান্নে অভিযানে পুলিশের জলকামানে বেগুলি রংয়ের জল ছিল।
বিজেপির অভিযোগ ছিল, সেই জল শরীরে লাগতেই তাঁদের প্রচুর কর্মী অসুস্থ হয়ে গিয়েছিলেন। এমনকি কয়েকজন করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন বলেও অভিযোগ করেছিল পদ্ম শিবির। উত্তরকন্যায় বিজেপির অভিযানে আগে থেকেই তৈরি ছিল পুলিশ। বিজেপি কর্মীরা ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা করতেই তাদের উপর জলকামান থেকে গোলাপি রংয়ের জল ব্যবহার করা হয়। পুলিশের লাঠিচার্জে এক বিজেপি কর্মীর মৃত্যুরও দাবি করে পদ্ম শিবির। কিন্তু পুলিশের দাবি, সেটা ওই গুলি শটগানের ব্যবহার করা হয়। বাইরে থেকে দুষ্কৃতীদের মিছিলে নিয়ে আসা হয়েছিল।
আরও পড়ুন, বিজেপির মিছিল থেকেই গুলি উলেন রায়কে! পুলিশের ট্যুইটে বাড়ল জল্পনা
আর মাত্র কয়েক মাস বাকি রাজ্য বিধানসভা ভোট। নির্বচনী প্রচারের দামামা ইতিমধ্যে বেজে গিয়েছে। বঙ্গে পা রেখেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের। ফের রাজ্যে আসার কথা রয়েছে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডার। এমন পরিস্থিতি কর্মীদর চাঙ্গা করতে মরিয়া গেরুয়া ব্রিগেড। তাই দুই মাসের ব্যবধানে একের পর এক আন্দোলন করে চলেছেন তারা। কিন্তু আদৌ কি এতে দলের লাভ হবে? কারণ আন্দোলন শুরু করলেও তা বেশিক্ষণ স্থায়ী করতে পারছেন না বিজেপি শিবির। পুলিশের জলকামান-কাঁদানে গ্যাসের শেলে রণে ভঙ্গ দিতেই দেখা যাচ্ছে তাঁদের। যদিও বিজেপির তরফে দাবি করা হচ্ছে, পুলিশ গণতান্ত্রিক আন্দোলকে লাঠিচার্জের মাধ্যমে থামাতে চাইছে, এই রাজ্যে গণতান্ত্রিক পরিবেশে আন্দোলন করতে দিতে চাইছে না রাজ্য সরকার।
ভাবতে হবে গেরুয়া শিবিরকে
কিন্তু সেই দাবির বাইরেও এবার ভাবতে হবে গেরুয়া শিবিরকে। বিশেষ করে উত্তরকন্যায় এবার দেখা মেলেনি দার্জিলিং, কার্লিম্পং, কার্শিয়াং-এর মতো এলাকাগুলি থেকে তেমন কাউকে। উত্তরবঙ্গে আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার, জলপাইগুড়ির মতো জেলাগুলি থেকে বেশি সংখ্যক কর্মীরা ওই মিছিলে এসেছিলেন। ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনে দার্জিলিং বিরাট ব্যবধানে জিতেছিলেন বিজেপি রাজু বিস্ত। এখন পাহাড়ের রাজনৈতিক সমীকরণ পুরোপুরি বদলে গিয়েছে। বিমল গুরুং এনডিএ ছেড়ে তৃণমূলের দিকে সরে যাওয়ার পাহাড়ে বেশ চাপে পড়তে চলেছে গেরুয়া ব্রিগেড। ফলে উত্তরকন্যায় এই আন্দোলনের থেকে আগামী দিনে পাহাড়ের সংগঠনের দিকে নজর দিলে বিজেপির পক্ষে লাভজনক হবে বলেই মত রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশের।