ভোট বাংলায় বুধবার ঝাড়গ্রামে জোড়া সভা করছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বেলিয়াবেড়ার বাহানরুলা মাঠে ও লালগড়ে সবুজ সংঘের মাঠে পৃথক দুটি সভা করছেন মুখ্যমন্ত্রী। এটা স্বীকার করতেই হবে ২০১১ সালে ক্ষমতার বদলের পর এখন অনেকটাই শান্ত জঙ্গলমহল। কমেছে মাও প্রাদুর্ভাব। ২০১৬ সালে দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় ফেরার পর পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার উত্তর-পশ্চিম অংশের ৫৩৯.৬৪ বর্গ কিলোমিটার এলাকাকে নিয়ে পৃথক ঝাড়গ্রাম জেলা গঠন করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শান্তি ও উন্নয়নের মন্ত্রে জঙ্গলমহলকে আমূল বদলে দিতে চেয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে সেই ঝাড়গ্রামেই মুখ থুবড়ে পড়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিজয় রথ। প্রশ্ন ওঠে এত উন্নয়ন সত্বেও ঝাডগ্রামবাসীরৈ কেন মুখ ফিরিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের থেকে। আর তাতেই সামনে আসে দলের অন্দরে দুর্নীতি ও স্বজনপোষণের মতো ইস্যুগুলি। সবমিলিয়ে ঝাড়গ্রামের চার আসনেই এবার ‘হাড্ডাহাড্ডি’ লড়াই হবে বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করে থাকেন তাঁর সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই হাসছে জঙ্গলমহল। এটা সত্যি বাম আমলে যেভাব পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, পশ্চিম মেদিনীপুরে ভয়ের পরিবেশ তৈরি হয়েছিল আজ তা অতীত। ২০০৮ সালে তৎকালীন বাম সরকারের বিরুদ্ধে গড়ে উঠেছিল পুলিশি সন্ত্রাস বিরোধী জনসাধারণের কমিটি। ওই বছর নভেম্বরে জিন্দালদের ইস্পাত কারখানার উদ্বোধন করতে ঝাড়গ্রাম গিয়েছিলেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। সঙ্গে ছিলেন তৎকালীন কেন্দ্রীয় ইস্পাত মন্ত্রী রামবিলাস পাসোয়ান। ফেরার পথে ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কে মুখ্যমন্ত্রীর কনভয়ে মাইন বিস্ফোরণ ঘটে। তাতে কেউ হতাহত না হলেও গোটা রাজ্য রাজনীতি টলে যায় ওই ঘটনায়। সেই সময় লালগড়ের গ্রামে গ্রামে বাম শাসনের বিরুদ্ধে ব্যাপক ক্ষোভ তৈরি হয়েছিল। আর জনসাধারণের কমিটির সমর্থনে এগিয়ে এসেছিলেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অভিযোগ ছিল বিনা প্ররোচনাতেই মাও দমনের নামে সাধারণ গ্রামবাসীদের ওপরে পুলিশ অত্যাচার চালাচ্ছে। আর বাম সরকার দাবি ছিল যে মাওবাদীদের দ্বারা গ্রামবাসীদের সশস্ত্র বিদ্রোহের জন্য প্ররোচিত করা হচ্ছে। সেই সময় পুরো জঙ্গলমহল এলাকা ছেয়ে গিয়েছিল রাজ্যপুলিশ ও আধা সেনায়। তল্লাশির নামে গ্রামবাসীদের ওপর চলত নির্যাতন। ২০১১ সালের বিধানসভা ভোটে তার প্রভাব পড়েছিল ব্যাপক ভাবে। অবসান ঘটেছিল ৩৪ বছরের বাম আমলের। জঙ্গলমহলের মানুষ দু'হাত তুলে সমর্থন জানিয়েছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলকে।
২০১১ সালের থেকে ২০২১ সালের ভোটের চিত্র অনেকটাই আলাদা। সেবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন বিরোধী আসনে। আর এবার সরকারে বসে এক অন্য লড়াইয়ের মুখোমখি তৃণমূলনেত্রী। সরকার টিকিয়ে রাখার লড়াই। প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা আটকানোর লড়াই। আর এই লড়াইয়ে বারাবর নন্দীগ্রামের সেই আন্দোলনকে টেনে আনছেন তৃণমূলনেত্রী। ফিরিয়ে নিয়ে আসতে চাইছেন ২০০৭ সালের নন্দীগ্রাম আন্দোলনের স্মৃতি। নন্দীগ্রামের মত আলোচনাতে না থাকলেও সিঙ্গুরও একেবার বিস্তৃত হয়ে যায়নি রাজ্য রাজনীতি থেকে। কিন্তু ২০০৮ সালে লালগড়ে জনসাধারণের কমিটির সেই আন্দোলন যাকে সমর্থন করেছিলেন খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাকে আর নতুন করে খুচিয়ে তুলতে চাইছেন না তৃণমূলনেত্রী নিজেই। কমিটির সঙ্গে মাও যোগ নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় কি চুপ থাকতে চাইছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়? প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। তবে ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে যে ভোট মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল হারিয়েছে তাকে ফিরিয়ে আনতে জঙ্গলমহলে একমাত্র উন্নয়নকেই পাখির চোখ করে এগোতে চাইছেন তৃণমূলনেত্রী।