বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর হামলা নিয়ে এবার একটি দাবি ভাইরাল হলো সোশ্যাল মিডিয়াতে।
এক ফেসবুক ব্যবহারকারী একটি ছবি পোস্ট করে দাবি করেছেন, "কুমিল্লায় কোরান এই ব্যক্তি রেখেছিল। তাকে পাকরাও করা হয়েছে। তার পরিচয়, কে তাকে দিয়ে করিয়েছে তা বাহির করলেই সত্য জানা যাবে।"
পোস্টটির আর্কাইভ আপনারা এখানে দেখতে পাবেন।
ইন্ডিয়া টুডের অ্যান্টি-ফেক নিউজ ওয়ার রুম (আফয়া) অনুসন্ধান করে দেখেছে এই পোস্টের দাবি বিভ্রান্তিকর।
ছবিটি কার?
আমরা প্রথমে রিভার্স সার্চ করে ছবিটির মূল সূত্র খুঁজে বের করার চেষ্টা করি।
দেখা যাচ্ছে, একটি ফেসবুক ব্যবহারকারী এই ছবিটি ১১ই অক্টোবর এই ছবিটি পোস্ট করে লিখেছেন, "আজ তোমার বরন হলো ঠিকই। তবে এমন বরন আসা করিনি। পূজোর আনন্দ আজ যে অস্তমিত হয়ে গেল। মাতৃ প্রতিমা শ্রীশ্রী শ্মশানেশ্বর শিব বিগ্রহ মন্দির।"
অর্থাৎ, বোঝা যাচ্ছে এই ছবিটির সঙ্গে শ্রীশ্রী শ্মশানেশ্বর শিব বিগ্রহ মন্দিরের কোনও যোগাযোগ রয়েছে যা বাংলাদেশের চট্টগ্রামে অবস্থিত।
এই তথ্যটিকে এবার সূত্র হিসেবে ব্যবহার করা আমরা একটি কিওয়ার্ড সার্চ করি। এবং, চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানার ফেসবুক পেজে দু'জনের লোকের একটি ছবি খুঁজে পাই। এই দু'জনের মধ্যে একজন (বা-দিকের জন) যে এই ফেসবুক পোস্টের লোকটি তা নিঃসন্দেহে বলা যায়।
এখানে দাবি করা হচ্ছে, "দূর্গা প্রতিমার উপর বাতাবি লেবু নিক্ষেপের অভিযোগে এই দু'জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।"
এর পর আমরা সরাসরি কোতোয়ালি থানায় ফোন করি। সেখানে একজন আধিকারিক আমাদের নিশ্চিত করেন যে ছবিটি চট্টগ্রামের।
তিনি জানান, ছবিটি ১০ই অক্টোবরের, অর্থাৎ পঞ্চমীর, ছবি। শ্রী শ্রী শ্মশানেশ্বর শিব বিগ্রহ মন্দিরের প্রতিমা ট্রাকে করে নিয়ে যাওয়ার সময় কোতয়ালী থানার ফিরিঙ্গিবাজার মোড়ের আগে একটি ঘটনা ঘটে। সেখানে ফলের আড়ৎ থেকে কিছু শ্রমিক ট্রাক থেকে বাতাবিলেবু নামাচ্ছিলো। সেই সময়ে প্রতিমাকে লক্ষ করে বাতাবি লেবু নিক্ষেপ করা হলে প্রতিমার একটি হাত ভেঙ্গে যায়।
“ছবিটির একজন হচ্ছেন কবির। যাকে ওই ঘটনায় গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। অন্যজন,কোতোয়ালী থানার উপ পরিদর্শক তফাজ্জল ইসলাম," নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সেই আধিকারিক আজতক-কে জানালেন।
অর্থাৎ, কুমিল্লার মন্দিরে যে ব্যক্তি কোরান রেখেছিলেন সেই ব্যক্তি আর ফেসবুক পোস্টে ব্যবহৃত ছবির ব্যক্তি এক নয়।
কোরান কে রেখেছিলেন?
বাংলদেশের সংবাদমাধ্যমগুলোতে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী সিসিটিভি ফুটেজ দেখে কুমিল্লার মন্দিরে কে কোরান রেখেছিলেন তাঁকে সনাক্ত করা গিয়েছে।
কুমিল্লা পুলিশের তরফ থেকে জানানো হয়েছে যে এই ব্যক্তির নাম ইকবাল হোসেন। "৩০ বছর বয়সী ইকবাল কুমিল্লা নগরীর মুরাদপুর-লস্করপুকুর এলাকার নূর আহম্মদ আলমের ছেলে," পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ জানিয়েছেন।
সুতরাং, এই ফেসবুক পোস্টের দাবি যে বিভ্রান্তিকর তা বলাইবাহুল্য। পোস্টে যে ব্যক্তির ছবি দেখানো হয়েছে তিনি কুমিল্লার মন্দিরে কোরান রাখেননি।
কুমিল্লায় কোরান এই ব্যক্তি রেখেছিল। তাকে পাকরাও করা হয়েছে।
ছবির এই ব্যক্তির নাম কবির। ১০ই অক্টোবর চট্টগ্রামের শ্রী শ্রী শ্মশানেশ্বর শিব বিগ্রহ মন্দিরের প্রতিমা লক্ষ করে বাতাবি লেবু নিক্ষেপ করেন এই ব্যক্তি। তাকে গ্রেপ্তার করে কোতোয়ালি থানায় নিয়ে যাওয়ার পর এই ছবিটি তোলা হয়েছিল।