ভোট গণনা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে বিভিন্ন ধরণের রাজনৈতিক হিংসার ঘটনা ভাইরাল হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে। এর মধ্যে কিছু ঘটনা হয়ত সত্য, আবার এমন কিছু ঘটনাও রয়েছে যেগুলো শুধুমাত্র গুজব ছাড়া আর কিছুই নয়।
'পার্থ ব্যানার্জি' নামের এক টুইটার ব্যবহারকারী একজন মহিলার ছবি টুইট করে লিখেছেন, "বাংলার সম্মান ধুলোয় মিশে গেল। ইনি কি একজন মহিলা নয়? ইনি কি বাংলার মেয়ে নয়। বাঙালি আর মহিলা বলতে কি শুধুমাত্র মমতাকেই বোঝায়? ধিক্কার জানাই ওই সকল মহিলাদের যারা এখনও মমতাকে নিলজ্যের মতো সমর্থন করে যাচ্ছেন।"
এই ছবিতে যে মহিলাকে দেখতে পাওয়া যাচ্ছে তাঁর কপাল দিয়ে রক্ত বইছে। এই টুইটার ব্যবহারকারী তাঁর এই টুইটে বোঝাতে চাইছেন যে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে, এই মহিলা রাজনৈতিক সন্ত্রাসের শিকার হয়েছেন।
आबरू लूट गयीं बंगाल की
😢🙏क्या ये महिला नहीं, क्या बंगाल की बेटी नहीं, क्या बंगाली और महिला केवल ममता ही है ।
धिक्कार उन को जो महिला है और ममता का अब भी बेशर्मी से समर्थन कर रही है pic.twitter.com/lTjai7fy6h
এখানে পোস্টটির আর্কাইভ দেখতে পাবেন।
ইন্ডিয়া টুডের অ্যান্টি-ফেক নিউজ ওয়ার রুম (আফয়া) অনুসন্ধান করে দেখেছে এই পোস্টের দাবি বিভ্রান্তিকর। কারণ, পোস্টের ছবিটি পুরোনো। ছবিটি পশ্চিমবঙ্গেরও নয়, প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশের।
তদন্তে নেমে আমরা ছবিটিকে রিভার্স সার্চ করে ইন্টারনেটে বেশ কয়েকটি জায়গায় খুঁজে পাই। এর মধ্যে, একটি টুইটার হ্যান্ডেলে এই ছবিটি সবচাইতে আগে টুইট করা হয়েছিল।
২০২০ সালের নভেম্বর মাসে রাজু দাস নামের এক টুইটার ব্যবহারকারী এই টুইটটি করেন। এই টুইটটির সঙ্গে দাবি করা হয়েছিল, "৩/১১/২০২০-তে মহাম্মদ রুবেল নামের এক জমি দস্যু তাঁর সাঙ্গপাঙ্গদের নিয়ে একটি হিন্দু পরিবারের বাড়িতে চড়াও হয়। ঘটনাটি ঘটেছে, বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলার হাতাজারি থানার অন্তর্গত আমন বাজারের পূর্ব যুগিরহাট অঞ্চলে।"
এই টুইটের দাবিকে সূত্র ধরে এরপর আমরা কী-ওয়ার্ড সার্চ করে ঘটনাটির সম্পর্কিত আরও বিস্তারিত তথ্য খুঁজে বের করার চেষ্টা করি। দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশের 'দেশ' নামক একটি সংবাদপত্র এই ছবিটি সহ এই খবরটি ২০২০ সালের ৪ নভেম্বর প্রকাশ করা হয়েছিল।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম-হাটহাজারী আমান বাজারে পূর্ব দিঘির যুগির হাটে পৈত্রিক সম্পত্তি জোর করে দখল করে নেয় ভূমিদস্যুরা। এবং সন্ত্রাসী বাহিনী অতর্কিত হামলা করে গুরুতর আহত করেছে অনামিকা দাসকে। অনামিকা দাস গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে।
সুতরাং, এই পোস্টের দাবি যে বিভ্রান্তিকর তা বলা যেতেই পারে। কারণ, পোস্টের সঙ্গে ব্যবহৃত ছবিটি পুরোনো এবং বাংলাদেশের। পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনের সঙ্গে ছবিটির কোনও সম্পর্ক নেই।
রক্তস্নাত মহিলার ছবি পোস্ট করে বলা হচ্ছে ছবিটি পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক সংঘর্ষের।
ছবিটির সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ বা এ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের কোনও সম্পর্ক নেই। ছবিটি নভেম্বর ২০২০ সালের। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশের চট্টগ্রামে এক হিন্দু পরিবারকে বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করতে ভূমিদস্যুরা হামলা চালায়।