তাঁকে ফাঁসানো হয়েছে। গত শুক্রবার গ্রেফতারির পর এমনটাই দাবি করেছিলেন বিজেপি যুব মোর্চার সাধারণ সম্পাদক পামেলা গোস্বামী। পরের দিন কোর্ট লক-আপে আরও বিস্ফোরক অভিযোগ করেন পামেলা। মাদককাণ্ডে গ্রেফতার পামেলার অভিযোগ তিনি চক্রান্তের শিকার। তাঁর অভিযোগ ছিল বিজেপি নেতা রাকেশ সিংয়ের দিকে।
বন্দর এলাকায় যথেষ্ট ডাকাবুকো নেতা হিসেবে পরিচিত রাকেশ সিং। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের ঠিক আগে কংগ্রেস থেকে বিজেপিতে যোগ দেন রাকেশ। তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ ছিল। প্রায়শই ‘গরম-গরম’ মন্তব্য করে থাকেন রাজ্য বিজেপির বস্তি উন্নয়ন শাখার আহ্বায়ক।
সূত্রের খবর, বিজেপির নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয়ক ঘনিষ্ঠ হিসাবেই পরিচিত রাকেশ। গত জানুয়ারিতে দক্ষিণ কলকাতায় শোভন চট্টোপাধ্যায় এবং বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের যে মিছিল করার কথা ছিল, তা আয়োজনের দায়িত্বে ছিলেন রাকেশই।
ডায়মন্ডহারবারে যাওয়ার পথে জেপি নাড্ডার কনভয়ে যে হামলা হয়েছিল তাতে রাকেশের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছিল পুলিশ। অভিযোগ ছিল, কনভয় থেকেই রাকেশ সিংহ তৃণমূল কর্মীদের অঙ্গভঙ্গি করে প্ররোচনা দেয়।
বিজেপিতে নাম লেখানোর আগে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর অনুগামী বলেই পরিচিত ছিলেন রাকেশ। রাকেশ সিংহ বরাবরই রাজনৈতিক আঙিনার জনপ্রিয় এবং বিতর্কিত নেতা।
কংগ্রেসে তিনি মূলত শ্রমিক নেতা হিসেবেই পরিচিত ছিলেন। আদালত চত্ত্বরেই এক মামলার সাক্ষী ও কতর্ব্যরত পুলিশদের হেনস্থা করার অভিযোগে এর আগে রাকেশ-সহ ১২ জনকে গ্রেফতার করেছিল কলকাতা পুলিশ। সেই সময় আলিপুর প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগারে রাকেশের সঙ্গে একাধিকবার দেখা করেছিলেন অধীর। এমনকী, জেল থেকেই তাঁকে মনোনয়নও দিতে চেয়েছিলেন বলে শোনা যায়। শেষ পর্যন্ত তা ঘটেনি।
অধীর চৌধুরি নেতৃত্বাধীন কংগ্রেসের শ্রমিক নেতা হিসাবেই পরিচিত ছিলেন। রাকেশ সিংহ বরাবরই রাজনৈতিক আঙিনার জনপ্রিয় এবং বিতর্কিত নেতা। রাকেশ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর অনুগামী বলেই পরিচিত ছিল বঙ্গ রাজনীতিতে। তবে ২০১৯ এ লোকসভা নির্বাচনের আগেই অবশ্য হাত শিবির বদলে বিজেপি দলে যোগ দেন রাকেশ সিং।
কলকাতা পুর নির্বাচনে ৭৫ নম্বর ওয়ার্ড থেকে মনোনয়ন জমা দেওয়া নিয়ে কংগ্রেস-এর সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়েছিল অধীর অনুগামী রাকেশ সিং-এর। এরপরও 'দ্য অ্যাক্সিডেন্টাল প্রাইম মিনিস্টার' সিনেমার প্রদর্শন বন্ধ করার লক্ষ্যে দক্ষিণ কলকাতার এক শপিংমলে হামলা চালানোর ঘটনায় নাম জড়িয়েছিল তাঁর। গ্রেফতার করেছিল গুন্ডাদমন শাখা। এরপরই, ধীরে ধীরে বিজেপি নেতা মুকুল রায়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা শুরু হয় তাঁর। শেষ মুহূর্তে এই ডাকাবুকো নেতাকে দলে ধরে রাখতে কংগ্রেসের শীর্ষ নেতারাও চেষ্টা করেছিলেন। তাতে কাজ হয়নি। শেষ পর্যন্ত লোকসভা ভোটের আগে নয়াদিল্লিতে বিজেপির সদর দফতরে মুকুল রায় এবং কৈলাস বিজয়বর্গীয়ের উপস্থিতিতে তিনি বিজেপিতে যোগ দেন।
দল বদলালেও শক্তি প্রদর্শনের স্বভাব ছাড়তে পারেননি তিনি। কোলসভা ভোটের আগে কলকাতায় অমিত শাহর রোড শো'কে কেন্দ্র করে কলকাতার রাস্তায় নজিরবিহীন ঝামেলা ও বিদ্যাসাগর কলেজে বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙচুরের ঘটনাতেও তিনি অভিযুক্ত। ওই মিছিলে 'ফাটাফাটি গ্যাং'কে জড়ো করার জন্য তাঁর একটি ভিডিও বার্তা সেইসময় সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছিল। গ্রেফতারও করা হয়েছিল তাঁকে।
রাকেশ সিং-এর রাজনৈতিক ইতিহাস বলছে, বাম আমল থেকেই শাসকদলের বিরুদ্ধে বারবার পথে নেমে অনুগামীদের নিয়ে শক্তিপ্রদর্শন করে গ্রেফতার হতে হয়েছে। গন্ডগোল পাকানো, হামলা, ভয় দেখানো, হুমকি, সরকারি কাজে বাধাদান-সহ বিভিন্ন অভিযোগ উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে। তবে প্রত্যেকবারই জামিনে ছাড়াও পেয়ে গিয়েছেন।
এবার নিজের দলেরই এক মহিলা নেত্রীর অভিযোগের ভিত্তিতে মাদক কাণ্ডে গ্রেফতার হলেন রাকেশ। বিধানসভা ভোটের আগে দলের ডাকাবুকো নেতার এভাবে গ্রেফতারি কিছুটা হলেও বেকায়দায় ফেলল পদ্ম শিবিরকে।