উত্তরবঙ্গ সফর সেরে কয়েকদিন আগেই কলকাতায় ফিরেছেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। আর এরমধ্যেই গত শুক্রবার রাজভবনে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে হাজির হন শোভন চট্টোপাধ্যায় ও বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। বঙ্গ রাজনীতিতে শোভন-বৈশাখীর এভাবে ধনখড়ের সক্ষে সাক্ষাৎ নিয়ে জোর আলোচনা শুরু হয়। আর রাজভবনে যাওয়ার ২৪ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে এল বদলির নোটিস। মিল্লি আল আমি থেকে রামমোহন কলেজে বদলি করা হল বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়কে।
জানা যাচ্ছে তাঁকে বদলি করা হতে চলেছে এই আঁচ পেয়েই শুক্রবার শোভন চট্টোপাধ্যায়কে সঙ্গে নিয়ে রাজ্যপালের কাছে নালিশ জানাতে গিয়েছিলেন বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজভবন থেকে বেরিয়ে পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকেও আক্রমণ করেন দু'জনে। শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেছিলেন, ‘আল আমিন কলেজ থেকে বৈশাখীকে উপড়ে ফেলার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু কলেজ কারও অ্যাজেন্ডা পূরণের জায়গা নয়। সরকারের আত্মসমালোচনা করা উচিত। রাজ্যপাল সহানুভূতির সঙ্গে গোটা বিষয়টি শুনেছেন।’
বৈশাখীর অভিযোগ ছিল, ফিরহাদ তাঁকে কলেজ থেকে উৎখাতের হুমকি দিয়েছেন। শুক্রবার তিনি বলেছিলেন, ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কলেজের সামনে আন্দোলন করা হচ্ছে। আমি জুন মাসে পদত্যাগ করা সত্ত্বেও সেই অচলাবস্থার দায় এখনও আমার উপর চাপানোর চেষ্টা হচ্ছে, পোস্টারে কেন রয়েছে আমার নাম। পড়ুয়াদের কেন বিপথগামী করা হচ্ছে, গোটা ঘটনার তদন্ত হোক। ফিরহাদ হাকিমের কী অধিকার আছে আমাকে উৎখাত করার? ফিরহাদ হাকিম আমাকে চাকরি দেননি।’ কিন্তু যে বিপদ আঁচ করে রাজ্যপালের শরণে গিয়েছিলেন শোভন-বৈশাখী, সেই বিপদ আটকাতে পারলেন না তাঁরা। আল আমিন কলেজ থেকে শনিবারই রামমোহন কলেজে বদলি করা হয়েছে বৈশাখীকে। এই বদলির নোটিস পেয়ে তাই স্বভাবতই প্রচণ্ড ক্ষব্ধ বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। এটা কোনও সাধারণ বদলি নয়, ফিরহাদ হাকিমের বিরুদ্ধে মুখ খোলায় শাস্তিমূলক পদক্ষেপ হিসাবেই এমনটা করে হয়েছে বলে দাবি করছেন তিনি। বিষয়টি নিয়ে পরবর্তীতে আইনি পদক্ষেপের কথাও জানিয়েছেন বৈশাখী।
গত বছর অগস্টে দিল্লি গিয়ে গেরুয়া শিবিরে যোগ দিয়েছিলন শোখন চট্টোপাধ্যায় ও বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। যদিও তারপর দু'জনকে বিজেপির হয়ে তেমন ভাবে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে দেখা যায়নি। উল্টে একসময় শোনা গিয়েছিল শোভন চট্টোপাধ্যায় ফের তাঁর পুরনো দলেই ফিরতে চলেছেন। কিন্তু গত মাসে অমিত শাহ এরাজ্যে আসার পর ফের গেরুয়া শিবিরে শোভন-বৈশাখীর তৎপরতা বাড়ে। তারপরেই বৈশাখীকে আল আমিন কলেজ থেকে বদলি করা হতে পারে ইঙ্গিত মিলছিল। ওই কলেজ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ, এদিকে রাজ্যপাল পদাধিকার বলে সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য, তাই তাঁকে গোটা বিষয়টি জানাতে শুক্রবার রাজভবনে গিয়েছিলেন শোভন ও বৈশাখী। কিন্তু আচার্যের কাছেও এবার দরবার করে আটকাতে পারলেন না বিপদ। বদলির আশঙ্কাই সত্যি হল বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের।