খোলা আকাশে শ্বাস নেওয়াও এখন কষ্টের। কারণ দাপিয়ে বেড়াচ্ছে দূষণ। শীতের শুরুতে কলকাতার বাতাসও বিষাক্ত। লাফিয়ে বাড়ছে দূষণ সূচক। যার জেরে অনেকে অসুস্থও হয়ে পড়ছেন। ঘরে ঘরে সর্দি-কাশি লেগেই রয়েছে। শুধু কলকাতা নয়, পার্শ্ববর্তী শহর হাওড়ার বাতাসেও জমেছে বিষ। যার জেরে কলকাতা শহর ও শহরতলির একটা বড় অংশে ভাল করে শ্বাস নেওয়ারও জো নেই! আর দূষণের এহেন দাপটের জন্য দায়ী কলকাতার লোভনীয় বিরিয়ানিও? এমনটাই বলছেন পরিবেশবিদ।
গত কয়েক দিনে কলকাতায় বাতাসের গুণগত মানের সূচক ২০০ পেরিয়েছে। যা খারাপ। কলকাতার পাশাপাশি, হাওড়ার শিবপুরেও বাতাসের গুণগত মানের সূচক ২০০ পার করেছে। যার জেরে উদ্বেগ ছড়িয়েছে।
কলকাতায় কেন বাড়ছে দূষণের দাপট? কীভাবেই বা দূষণ নামক দানবকে ধ্বংস করা যাবে, সেই উপায়ই বাতলালেন পরিবেশবিদ। কলকাতার দূষণ নিয়ে উদ্বিগ্ন পরিবেশবিদরা। bangla.aajtak.in-এ এই নিয়ে মুখ খুললেন পরিবেশবিদ নব দত্ত।
দিল্লিতে দূষণের সঙ্গে দোসর ধোঁয়াশা। তবে কলকাতায় ধোঁয়াশা নেই। কিন্তু ক্রমেই বাতাসে বাড়ছে বিষের আধিক্য। দিল্লিতে দূষণের নেপথ্যে একটা বড় কারণ হল শস্য পোড়ানো। তবে কলকাতায় শস্য পোড়ানো হয় না। তা সত্ত্বেও কেন কলকাতার বাতাস এত বিষাক্ত?
কলকাতায় কেন দূষণ-দাপট?
এই প্রসঙ্গে পরিবেশবিদ নব দত্ত বলেছেন, 'কলকাতায় গাছ কম। জলের পরিমাণ কমে গিয়েছে। কলকাতায় প্রচুর পরিমাণে বর্জ্য পোড়ানো হচ্ছে, যার জন্য বাড়ছে দূষণ। এর ফলে বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে।' l কলকাতায় দূষণের জন্য বিরিয়ানিকেও দায়ী করেছেন তিনি। এই প্রসঙ্গে পরিবেশবিদ বলেছেন, 'কলকাতা এখন শ্রেষ্ঠ বিরিয়ানি বিক্রির জায়গা হয়ে গিয়েছে। মুশকিলটা হল, যত বিরিয়ানি বিক্রি হচ্ছে, তত বিরিয়ানি বানাতে কাঠের উনুন ব্যবহার করা হচ্ছে। যত কাঠের উনুন ব্যবহার করা হচ্ছে, ততই দূষণ বাড়ছে।'
মূলত কোন কোন কারণে কলকাতায় দূষণ বাড়ছে? নব জানিয়েছেন, 'প্রথম কারণ হল, গাড়ির ধোঁয়া। পুরনো গাড়ি বন্ধ করা উচিত। দ্বিতীয় কারণ হল, নির্মাণ কাজের ক্ষেত্রে নিয়ম মানা হচ্ছে না। তৃতীয় কারণ হল, কাঠের উনুনের ব্যবহার। প্রায় কয়েক হাজার কাঠের ও কয়লার উনুন ব্যবহার করা হচ্ছে। পাশাপাশি, ফুটপাথে হকাররা থার্মোকলের প্লেট পোড়াচ্ছেন। বর্জ্য পোড়ানো হচ্ছে, যা দূষণের জন্য দায়ী। এতে খুব ক্ষতি হচ্ছে।'
কীভাবে দূষণ মোকাবিলা সম্ভব?
পরিবেশবিদ জানিয়েছেন, 'ট্যাঙ্কার দিয়ে রাস্তায় জল ছেটালে সমস্যার সমাধান হবে না। সমস্ত খাবারের দোকানে কাঠের বা কয়লার উনুন অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। যেখানে ইস্ত্রি করা হয়, সেখানে গ্যাস আয়রণ ব্যবহার করা উচিত। কারও রোজগার বন্ধ না করে করা যায়। পাড়ার অলিগলিতে অনেক জায়গায় প্রকাশ্যে কাঠের উনুনে বিরিয়ানি রান্না করা হয়, তা অবিলম্বে বন্ধ করা উচিত।'
অন্য দিকে, এই সময় দূষণের কারণে অনেকেই অসুস্থ বোধ করছেন। এই পরিস্থিতিতে মর্নিং ওয়াক এবং ইভনিং ওয়াক করেন অনেকে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বাতাসের গুণগত মান খারাপ থাকলে বাইরে না বেরোনই ভাল। পরিবেশবিদের মতে, 'বাতাসের গুণগত মানের সূচক ১০০-এর বেশি হলে কোনও ধরনের ওয়াক করাই উচিত নয়।'