চিংড়ি আসলে মাছ নাকি পোকা - এ নিয়ে তর্ক রয়েছে। তবে যাই বলুন, চিংড়ির স্বাদ নিয়ে কারও দ্বিমত নেই। একদম ছোট গুঁড়ো চিংড়ি থেকে শুরু করে ইয়া বড় বড় চিংড়ি সবই খেতে মুখরোচক। চিংড়ি দিয়ে বানানো যায় হাজারো মজাদার পদ, যেমন- চিংড়ি মাছের কোর্মা, চিংড়ির বিরিয়ানি, লাউ দিয়ে চিংড়ি, কচুরমুখী দিয়ে চিংড়ি, পুঁই চিংড়ির পকোড়া, দই চিংড়ি, ডাব চিংড়ি. চিংড়ি পিঁয়াজু, চিংড়ির চপ, চিংড়ি মাছের মালাইকারি, চিংড়ি ভর্তা, লিখে শেষ করা যাবে না। তবে জানলে অবাক হবেন, চিংড়ি কিন্তু কেবল আমাদের রসনা তৃপ্তি করে না, একাধিক রোগে ওষুধ হিসাবেও কাজ করতে পারে।
ডায়াবেটিস- ডায়াবেটিসের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্যও চিংড়ি খেতে পারেন। কারণ চিংড়িতে থাকা ম্যাগনেশিয়াম দেহকে টাইপ-২ ডায়বেটিসের হাত থেকে রক্ষা করে। বিপুল সংখ্যক ভিটামিন এবং খনিজ এবং কম গ্লাইসেমিক সূচক থাকার কারণে চিকিত্সকরা ডায়াবেটিসের জন্য চিংড়ির পরামর্শ দেন।
ক্যান্সারের কোষ বৃদ্ধি রোধ করে- চিংড়ি মাছে প্রচুর পরিমাণে সেলেনিয়াম থাকে যা ক্যান্সারের কোষ বৃদ্ধি রোধ করে ৷
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে- ওমেগা থ্রি ও ফ্যাটি অ্যাসিড থাকায় উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে চিংড়ি মাছ ৷
শারীরে শক্তি বৃদ্ধি করে- যারা শারীরিক দুর্বলতায় ভোগেন তারা বেশি বেশি চিংড়ি খেতে পারেন। চিংড়ি শরীরের প্রায় ১৭ শতাংশ আয়রনের ঘাটতি পূরণ করায় সহযোগিতা করে। ফলে শারীরিক দুর্বলতা কেটে গিয়ে শক্তি বৃদ্ধি পায়।
হাড় মজবুত করে- চিংড়িতে আছে প্রায় ১৪ শতাংশ ফসফরাস। ফলে চিংড়ি খেলে হাড়ের ক্ষয় রোধ হওয়ার পাশাপাশি হাড় হয় মজবুত ও শক্ত।
রক্তস্বল্পতা মেটাতে পারে- চিংড়ি মানুষের শরীরের ভিটামিন বি১২ এর চাহিদা দূর করে। পাশাপাশি রক্তের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। তাই রক্তস্বল্পতায় ভোগা ব্যক্তিরা চিংড়ি খেলে উপকার পাবেন।
বিষন্নতা দূর করতে পারে- বিষন্নতায় ভোগা ব্যক্তিরা চিংড়ি খেতে পারেন। কারণ এতে আছে ৩৪৭ মিলিগ্রাম ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড। এটি মস্তিষ্কে সেরেটেনিন উৎপন্ন করে এবং বিষন্নতা দূরী করতে ভূমিকা রাখে।
স্থূলতা দূর করতে পারে- যাদের মুটিয়ে যাওয়ার ভয় আছে তারা নির্দ্বিধায় চিংড়ি খান। চিংড়ি শরীরে ফ্যাট জমতে বাধা দেয়।
ত্বকের গ্লো বাড়ায়- আমাদের শরীরের প্রয়োজনীয় প্রোটিনের চাহিদার প্রায় ৪২ শতাংশ চিংড়ি পূরণ করতে সক্ষম। আর শরীরে পর্যাপ্ত প্রোটিন থাকলে ত্বক, চুল এবং নখ ইত্যাদি থাকে সুরক্ষিত। সেইসঙ্গে চিংড়ি মাছ প্রোটিনের উৎস বলেই ক্ষত স্থান সহজেই ভরাট হয়ে থাকে ৷
মস্তিষ্কের জন্য ভালো- চিংড়িতে থাকা অস্টাক্যানথিন মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। এর অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশষ্ট্য রয়েছে যা মস্তিষ্কের কোষগুলির ক্ষতি প্রতিরোধ করতে পারে।
থাইরয়েডের সমস্যা দূর করে- স্বাস্থ্যকর হাড়, স্নায়ুর স্বাস্থ্য ভালো রাখতে কপার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া কপা কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ এবং অস্টিওপোরোসিস প্রতিরোধে সহায়তা করতে পারে। চিংড়িতে ৯ শতাংশ কপার আছে। চিংড়ি থাইরয়েড গ্রন্থির কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং থাইরয়েড হরমোনের মাত্রা ঠিক রাখতে সাহায্য করে।
চিংড়ি নিয়ে সতর্কতা- চিংড়ির পুষ্টিগুণ থাকলেও আপনি যদি জটিল কোনও রেগা আক্রান্ত হন বা অন্য কোনো কারণে রেগুলার কোনো মেডিকেল কোর্সের মধ্যে দিয়ে যান তাহলে অবশ্যই খাওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন। সেইসঙ্গে কোলেস্টেরলের ভয় থাকলে চিংড়ি এড়িয়ে চলা ভালো। কারণ চিংড়িতে প্রায় ৬৩ শতাংশ কোলেস্টরল থাকে।
চিংড়ি থেকে অ্যালার্জিও হতে পারে- চিংড়ি, চিনাবাদাম, গাছ বাদাম, গম, দুধ ইত্যাদি খাবারগুলি থেকে অনেকের অ্যালার্জি হয়। চিংড়ি খেলে অ্যালার্জি হয় কারণ এতে ট্রপোমোসিন আছে। ট্রপোমোসিন একটি প্রোটিন। তাই যাদের অ্যালার্জি আছে চিংড়ি খাবেন না।