বর্ষা এল মানেই ইলিশ মাছের চাহিদা তুঙ্গে। বিশেষ করে দুই বাংলার বাঙালির কাছে এ যেন এক অলিখিত উৎসব। এ সময় নদী মোহনাগুলিতে টপাটপ ধরা দেয় বাঙালির মাছের রাজা। স্বাদে তো সেরাই কিন্তু গবেষণা জানাচ্ছে স্বাস্থ্যের জন্যও ইলিশ একদম মোক্ষম দাওয়াই।
ইলিশে প্রচুর চর্বি থাকে। এতে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন ও খনিজও রয়েছে। এমনকী এই মাছ ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, ক্রোমিয়াম, সেলেনিয়াম, পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড, পটাসিয়াম, আয়োডিন ও জিংকে সম্ভার। এসমস্ত উপাদনই শরীরের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
ইলিশ মাছে স্যাচুরেটেড ফ্যাটের পরিমাণ অন্যান্য মাছের তুলনায় অনেক কম। তাছাড়া ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড থাকার কারণে। এই দুটি কারণই রক্তের ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা কমাতে ও শরীরে ভালো কোলেস্টেরলের পরিমাণ বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ফলে হৃদযন্ত্র সুস্থ থাকে।
ইলিশ একটি সামুদ্রিক মাছ হওয়ায় (ইকোসাপেনটিনোইক এসিড) ও ডিএইচএ DHA (ডোকোসাহেক্সোনোইক এসিড) এর মতো ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ। যা প্রদাহ, হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে ও ভ্রূণের সঠিক বিকাশ বজায় রাখতে সাহায্য করে। ইলিশ মাছ খেলে শরীরের রক্ত সঞ্চালনও ভাল হয়।
অনেকের বাতের সমস্যা রয়েছে। ইলিশের ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের উপস্থিতি। অস্টিওআর্থ্রাইটিস ও রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস প্রতিরোধে সহায়তা করে।
ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের প্রদাহের লিপিড মধ্যস্থতাকারীর অগ্রদূত হিসাবে কাজ করে, ফলে প্রদাহজনক প্রতিক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
ইলিশ মাছ দৃষ্টিশক্তি বাড়াতেও সাহায্য করে। ইলিশে উপস্থিত ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড ম্যাকুলার ডিজেনারেশনের মতো রোগ প্রতিরোধ করে। তাছাড়া ইলিশ মাছেও ভিটামিন এ থাকে, যা রাতকানা রোগ প্রতিরোধে ঢাল হিসেবে কাজ করে।
ফুসফুসের জন্যও ভাল ইলিশ মাছ। বিভিন্ন গবেষণা প্রমাণ করেছে যে সামুদ্রিক মাছ ফুসফুসের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়। ইলিশও যেহেতু সামুদ্রিক জলের মাছ, তাই এর পুষ্টিগুণও ফুসফুসের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। হাঁপানি রোগের জন্য ইলিশ মোক্ষণ ওষুধ।
পেশির উন্নতিতেও সাহায্য করে ইলিশ মাছ। এতে এল-আরজিনিন নামক একটি অ্যামিনো অ্যাসিড থাকে যা আমাদের শরীরে প্রোটিন তৈরির জন্য দায়ী। এটি পেশি নির্মাণ ও টিস্যু পুনর্নির্মাণে আরও সাহায্য করে। ইলিশ প্রোটিন সমৃদ্ধ হওয়ায় পেশি রক্ষায় সাহায্য করে।
ত্বক ও পেটের স্বাস্থ্যও ভালো রাখে ইলিশ। এতে থাকা ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড ত্বককে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি থেকে সুরক্ষিত রাখে। প্রতিদিন মাছ খেলে ত্বকের একজিমা ও সোরিয়াসিস থেকে রক্ষা মেলে।
ইলিশ মাছে যে প্রোটিন পাওয়া যায় তা কোলাজেনের একটি উপাদান। কোলাজেন একটি তন্তুযুক্ত, অনমনীয়, অদ্রবণীয় প্রোটিন, যা একটি সহায়ক কাঠামো হিসেবে কাজ করে ও কোষকে সংযুক্ত করে।
তাছাড়া ইলিশ মাছে ভিটামিন সি এর উপস্থিতি কোলাজেন গঠনে সাহায্য করে। ফলে ত্বকের নমনীয়তা ও ইলাস্টিসিটি বজায় থাকে। কোলাজেন ত্বককে টানটান ও কোমল রাখে। ফলে অকাল বার্ধক্য রোধ করা যায়।
মস্তিষ্কের উন্নতি ও স্নায়ু কোষ বৃদ্ধি ঘটায় ইলিশে থাকা ফ্যাটি অ্যাসিড। মানুষের মস্তিষ্ক ৬০ শতাংশ চর্বি দিয়ে গঠিত। ফ্যাটি অ্যাসিড মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালনের ক্ষমতা উন্নত করে। তাছাড়া ইলিশ মাছে থাকা ভিটামিন বি ১২ স্নায়ু কোষকে সুস্থ রাখে।
হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্যও ভালো ইলিশ মাছ। এতে থাকা ভিটামিন ডি হাড় ও পেশির স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। এনএইচএস’র মতে, ভিটামিন ডি শরীরে ক্যালসিয়াম ও ফসফেট নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। যা হাড়কে দীর্ঘ সময়ের জন্য শক্তিশালী ও স্বাস্থ্যকর রাখে। এই মাছে ক্যালসিয়াম ও আয়রনও আছে।
বিভিন্ন খনিজে ভরপুরিইলিম মাছ। ক্রোমিয়াম, সেলেনিয়াম, পটাসিয়াম, জিঙ্ক সমৃদ্ধ এই মাছ শরীরের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। জিঙ্ক হলো একটি ট্রেস খনিজ যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে সমর্থন করে ও ক্ষতিগ্রস্ত টিস্যু মেরামত করে।
ক্রোমিয়াম হরো আরেকটি ট্রেস খনিজ যা আপনার শরীরের রক্তে শর্করার মাত্রা বজায় রাখে। সেলেনিয়াম কোষকে যেকোনো ক্ষতি ও সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। পটাসিয়াম কোষের ভেতরে স্বাভাবিক তরল স্তর বজায় রাখতে সাহায্য করে। অন্যদিকে আয়োডিন থাইরয়েড হরমোন তৈরিতে প্রধান ভূমিকা পালন করে।
রোজ ইলিশ খাওয়া যায়?
বিশেষজ্ঞদের মতে, ইলিশে থাকা সব পুষ্টিগুণ পেতে রোজ খেতে পারেন, তবে অবশ্যই পরিমাণ অনুযায়ী খেতে হবে। অতিরিক্ত খাওয়া যাবে না।তাতে শরীরের আরও ক্ষতি হতে পারে। অনেকেরই ইলিশ মাছে অ্যালার্জি হয়, তারা অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া মাছটি খাবেন না।
ডাইঅক্সিন, পারদ বা অন্যান্য ভারী ধাতুর মতো সামুদ্রিক দূষণের ঝুঁকি থাকায় গর্ভবতী বা বুকের দুধ খাওয়ানো নারীদের ইলিশ মাছ খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয় না।