কয়েদি নম্বর ৯৫৬। মুম্বইয়ের হাইপ্রোফাইল আর্থার রোড জেলে এখন এটাই পরিচয় শাহরুখ খান পুত্রের। ইতিমধ্যেই জেলের মূল ব্যারাকে স্থানান্তরিত করা হয়েছে মাদককাণ্ডে অভিযুক্ত আরিয়ান খানকে।
গোয়াগামী ক্রুজ থেকে গত ২রা অক্টোবর এনসিবি-র হাতে আটক হন আরিয়ান খান, পরদিন তাঁকে গ্রেফতার করে কেন্দ্রীয় মাদক নিয়ন্ত্রক সংস্থা। আরিয়ান ড্রাগ নিতেন কিনা তা বিচারাধীন। তবে বর্তমান সময়ে শিশু-কিশোরদের মধ্যে মাদকাসক্ত হওয়ার প্রবণতা বাড়ছে।
মাদক কারবারের সঙ্গে জড়িতরা তরুণ প্রজন্মকে তাদের শিকার হিসেবে বেছে নিচ্ছে। এমনকি শিশুদেরও অনেক সময় তারা তাদের লক্ষ্য হিসেবে বেছে নেয়। আবার খারাপ সঙ্গ পেয়েও অনেক তরুণ বা শিশু মাদকে আসক্ত হতে পারে।
এমন ভয়ঙ্কর ফাঁদে পা দিতে পারে আপনার সন্তানও। কীভাবে বুঝবেন আপনার সন্তান মাদকে আসক্ত হয়েছে কিনা? এমনটি বুঝতে হলে কিছু লক্ষণের দিকে নজর রাখতে হবে আপনার। জানুন যে লক্ষণগুলো দেখলে সন্তানের বিষয়ে নিতে হবে সতর্কতা।
সন্তানের টাকা চাওয়ার প্রবণতা বেড়ে গেলে বা টাকার চাহিদা অনেক বেড়ে গেলে হতে হবে সতর্ক। সন্তান যদি বিভিন্ন অজুহাতে টাকা চায় এবং টাকা খরচের বিষয়ে যদি উপযুক্ত কারণ না দেখাতে পারে তা হলে এ বিষয়টি স্বাভাবিক নয়। এমন ক্ষেত্রে হতে হবে সতর্ক।
সন্তান মাদকে আসক্ত হলে হঠাৎ করে তার আচরণে আসতে পারে অনেক পরিবর্তন। এমন যদি দেখেন য়ে সন্তানের আচার আচরণে অনেক পরিবর্তন এসেছে তা হলে তার প্রতি সতর্ক হয়ে যান।
কেউ মাদকে আসক্ত হলে তার মধ্যে খাওয়া-দাওয়া ও ঘুমের অনেক পরিবর্তন দেখা যায়। খাবারে হঠাৎ অনীহা, অতিরিক্ত ঘুমানো, রাতে সজাগ থেকে দিনে ঘুমানোর মতো প্রবণতা দেখা দিতে পারে মাদক গ্রহণের কারণে। তাই এ রকম কোনো পরিবর্তন সন্তানের মাঝে লক্ষ করলে তার প্রতি সতর্ক হতে হবে।
তাদের মধ্যে অনেক সময় মেজাজের হঠাৎ পরিবর্তন দেখা যায়। হঠাৎ করে মেজাজ খারাপ করা বা ঘুম থেকে উঠে মেজাজ খারাপ করা হতে পারে মাদকে আসক্ত হওয়ার লক্ষণ।
এ ছাড়া মাদকাসক্ত ব্যক্তিরা প্রচুর মিথ্যা কথা বলার পাশাপাশি চুরি করার মতো স্বভাবে অভ্যস্থ হতে পারে। দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়ার জন্য প্রচুর মিথ্যা কথা বলা বা টাকার প্রয়োজন মেটাতে চুরির অভ্যাস তৈরি হওয়ার মতো প্রবণতা দেখা যেতে পারে তাদের মাঝে।
এর বাইরেও সন্তানদের মধ্যে আরও কিছু লক্ষণ যেমন- ক্ষুদা বৃদ্ধি, হঠাৎ ক্ষুধার অভাব, বন্ধুদের সঙ্গে বেশি সময় কাটানো, সবার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করা, পড়াশোনায় মনোযোগের অভাব বা হঠাৎ আগের থেকে খারাপ রেজাল্ট করা, শারীরিক ও চেহারায় হঠাৎ পরিবর্তন, চোখে লালচে ভাব, নিজের অযত্ন ও অবহেলা করার প্রবণতা দেখা দিতে পারে। আর তারা মাদক গ্রহণ করে বাড়িতে আসলে তাদের, পোশাক ও মুখে থেকে অস্বাভাবিক গন্ধ, চুইংগাম খেতে দেখা ও ঠোঁট শুকিয়ে যাওয়ার মতো লক্ষণ দেখা যায়। এ ছাড়া সন্তানরা মাদক গ্রহণ শুরু করলে তাদের ঠাণ্ডা ছাড়াই সর্দি বা কাশি হতে পারে এবং অনেক সময় তারা মাদক গ্রহণ করে নিজের শরীরে কাটাছেঁড়া, আঘাত বা ক্ষত সৃষ্টি করতে পারে।
সন্তানদের মাঝে এমন লক্ষণ দেখলে অভিভাবকদের সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। সন্তান কোথায় যাচ্ছে, কাদের সঙ্গে মিশছে, তারা ঠিকমতো স্কুল-প্রাইভেটে যাচ্ছে কিনা- এসব বিষয়ে অভিভাবকদের নজরদারি রাখতে হবে।
আর আপনার সন্তানের মধ্যে এ রকম লক্ষণ দেখলেও শুরু থেকে তাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করবেন না। বরং তাদের সঙ্গে খোলাখুলিভাবে কথা বলুন ও বোঝান। এর পরও এতে সে ঠিক না হতে চাইলে তাকে মানসিক চিকিৎসক দেখাতে পারেন।
মাদকাসক্ত সন্তানের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার না করে বরং তার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণের মাধ্যমে বুঝাতে হবে অভিভাবককে। সন্তানের কোনো দোষ নেই বরং সব দোষ খারাপ সঙ্গের! এসব কথা বলে সন্তানকে নিরপরাধ প্রমাণের মাধ্যমে সঠিক শিক্ষা দেওয়া উচিত অভিভাবকদের।