ম্যালেরিয়ার জন্য কেবল মশাকেই দোষ দেওয়া ঠিক হবে না। নতুন গবেষণায় উঠে এসেছে যে বাচ্চারাও ম্যালেরিয়া ছড়ায়। এটা ঠিক যে ম্যালেরিয়ার ভেক্টর শিশুরা নয়। অর্থাৎ শিশুরা ম্যালেরিয়া মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দেয় না। বরং ম্যালেরিয়া আক্রান্ত শিশুদের থেকে মশাদের যাচ্ছে এই ভাইরাস। সেখান থেকেই সংক্রমণ হচ্ছে। আসুন জেনে নেওয়া যাক এই গবেষণা সম্পর্কে-
ম্যালেরিয়া ভাইরাসের বাহক মশা। কোনও ব্যক্তি যদি ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হন বা এই রোগের চিকিৎসাধীন, তখন যদি কোনও মশা তাঁকে কামড়ায় ভাইরাসটি মশার দেহে প্রবেশ করে। এক্ষেত্রে এই ক্ষুদ্র প্রাণীটির কোনও ক্ষতি হয় না। অনেকসময় পরজীবী দেহ থেকেও মশার দেহে প্রবেশ করে ভাইরাস।
অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বাচ্চারা ম্যালেরিয়ার ক্ষেত্রে উপসর্গবিহীন হয়। কোনও লক্ষণ দেখা যায় না। বাচ্চাদের দেহ থেকে মশার দেহে ভাইরাস যায়। সেই মশা যখন অন্য কাউকে কামড় দেয়, তারপরে সেই ব্যক্তির ম্যালেরিয়া হয়। আমেরিকান সোসাইটি অফ ট্রপিকাল মেডিসিন অ্যান্ড হাইজিনের বার্ষিক বৈঠকে এই তথ্যটি তুলে ধরা হয়েছে।
গবেষণাটি উগান্ডায় করা হয়েছে। পাঁচ বছর থেকে ১৫ বছর বয়সী শিশুদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে গবেষণায়। সমীক্ষায় বলা হয়েছে যে এই বয়সের শিশুরা মশার মধ্যে ম্যালেরিয়া ছড়ানোর মূল কারণ হয়ে ওঠে। বিজ্ঞানীরা এই শিশুদের সুপারস্প্রেডার বলেছেন। অর্থাৎ এই শিশুরা মশার মধ্যে ম্যালেরিয়া ছড়ায়।
নেদারল্যান্ডসের র্যাডবউড বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারের শিয়ারা অ্যান্ডোলিনা এই গবেষণাটি চালিয়েছেন গবেষণা চলাকালীন সময়ে শিশুরা বেশ কয়েকবার ম্যালেরিয়াতে আক্রান্ত হয়েছিল। যদিও শিশুরা অসুস্থ হয়ে পরেনি। শরীরে ম্যালেরিয়ার পরজীবী ছিল কেবল। যা মশার দেহে ছড়িয়ে পড়ে।
দেখা গিয়েছে উগান্ডায় প্রাথমিকভাবে ম্যালেরিয়া সংক্রমণ অত্যন্ত নিয়ন্ত্রণে ছিল। কিন্তু শিশুদের দেহে ম্যালেরিয়া পরজীবী রয়েছে। এর অর্থ পরজীবী যে কোনও সময় সক্রিয় হতে পারে।
ম্যালেরিয়াল এপিডেমিওলজিস্ট টুন বোসেমা বলেন যে ম্যালেরিয়া সংক্রমণ ৮০ শতাংশ বা তার বেশি লোকের মধ্যে থাকে। স্ক্রিনিং যদি সঠিকভাবে করা হয় তবে সঠিক তথ্য প্রকাশিত হবে। ম্যালেরিয়া ছড়ানোর জন্য কেবল মশারাই দায়বদ্ধ নয়। মানুষও এর জন্য দায়ী।
২০১১ সালে পূর্ব উগান্ডার একটি শহর টরোরোতে, প্রত্যেক ব্যক্তিকে ৩১০ বার ম্যালেরিয়া মশার কামড়েছিল। যা ২০১৮ সালে কমে যায়। সে বছর প্রত্যেক ব্যক্তিকে মাত্র ০.৪৩ বার ম্যালেরিয়া মশার কামড়েছিল। অর্থাৎ ম্যালেরিয়া মশার কামড়ানোর হার হ্রাস পেয়েছে।
প্রতি মাসে একটি মেডিকেল পরীক্ষা ছিল। রক্তের নমুনা নেওয়া হয়েছিল। এরপরে সংক্রামিত প্রাপ্ত বয়স্ক বা শিশুর রক্ত আলাদা করে ম্যালেরিয়া মুক্ত করে মশাদের দেহে দেওয়া হয়।
মশাদের দেহে গ্যামেটোসাইটস তৈরি হয়। সেই কোষ যৌন কোষে রূপান্তরিত হয়। একে অপরের সঙ্গে নিষিক্ত হয়।
দেখা গেল যে মানুষেরা ম্যালেরিয়ার লক্ষণ দেখাচ্ছেন না তবে তারা মশাকে ম্যালেরিয়া সংক্রমণ করছেন।